ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক সংঘ
শ্রমিকগণ তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন- মজুরি, কার্য শর্ত, কার্য পরিবেশ প্রভৃতি নিয়ে ব্যবস্থাপনার সাথে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসন করে ভবিষ্যৎ শিল্প শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে একত্রিত হয়ে যে সংগঠন গড়ে তোলে তাকে ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক সংঘ বলে। অর্থাৎ, শ্রমিক সংঘ হলো এমন একটি সংস্থা যেখানে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ে সংগঠিতভাবে প্রচেষ্টা চালানো হয়।
শ্রমিক সংঘের সংজ্ঞা
শ্রমিক সংঘের সংজ্ঞা সম্পর্কে বলতে গিয়ে Decenzo ও S. P. Robins বলেন, “শ্রমিক সংঘ হচ্ছে শ্রমিকদের একটি সংগঠন যেখানে যৌথভাবে কাজ করা হয়, যৌথ দরকষাকষির মাধ্যমে নিজেদের পারস্পরিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো হয়।”
Sydney ও Webb এর ভাষায়, “মজুরিভোগী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের সার্বিক অবস্থার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে নিরবচ্ছিন্ন সমিতিকে শ্রমিক সংঘ বলা হয়।”
আরও পড়ুন: শিল্প সম্পর্কের গুরুত্ব আলোচনা কর
শ্রমিক সংঘের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা
শ্রমিক সংঘ শ্রমের গতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ এটি শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মজুরি, শ্রম, ঘণ্টা, কার্যশর্ত প্রভৃতির উন্নয়নে ব্যবস্থাপনার সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যায়। এতে সাধারণ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব হয়।
নিম্নে শ্রমিক সংঘের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. শ্রমিক সচেতনতা বৃদ্ধি
শিল্পোন্নত দেশের অধিকাংশ শ্রমিকই শিক্ষিত। ফলে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ শ্রমিকই অশিক্ষিত। ফলে তারা তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে তেমন সচেতন নয়। এক্ষেত্রে শ্রমিক সংঘের নেতৃবর্গ সাধারণ শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা ও তা আদায়ের বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করে দেয়। এভাবে শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে থাকে।
২. শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
ব্যবস্থাপনা শ্রমিকদের দিয়ে কম মজুরিতে অধিক পরিমাণে কাজ করিয়ে নিতে চায়। আবার শ্রমিকগণ মনে করেন যে, তাদের উপযুক্ত মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শ্রমিক ব্যবস্থাপনার এরূপ ধারণা থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে শ্রমিক সংঘ ও ব্যবস্থাপনা প্রতিনিনধি যৌথ দরকষাকষি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উভয়পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তি করে।
৩. অধিকার আদায়
শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি, অনুকূল কার্য পরিবেশ ও কার্য শর্তাদি প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজনে হরতাল, ধর্মঘট, ঘেরাও প্রভৃতি কর্মসূচি গ্রহণ করে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
৪. দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা
প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কোন একজন কর্মীর পক্ষে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে ব্যবস্থাপনা কর্তপক্ষের সাথে আলাপ-অলোচনা করতে পারে না। কারণ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্বীকৃত কোন ট্রেড ইউনিয়ন ছাড়া একক কোন শ্রমিকের সাথে মতবিনিময় করতে ইচ্ছুক থাকে না। তাই সাধারণ শ্রমিকগণ সম্মিলিতভাবে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে তার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার সাথে দরকষাকষি করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
৫. বিরোধ নিষ্পত্তি
শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন- মত প্রকাশের স্বাধীনতা, উত্তম কাজের পুরস্কার আদায়, শ্রমিকদের ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ, মজুরি, কার্যশর্ত ও কার্যপরিবেশ প্রভৃতি নিয়ে প্রায়ই ব্যবস্থাপনার সাথে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এরূপ সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে শ্রমিক সংঘ যৌথ দরকষাকষির মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার সাথে আলাপ-অলোচনা করে বিরোধ নিষ্পত্তি করে।