মানব সম্পদ পকিল্পনার পদক্ষেপ
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উপাদান বিবেচনা করে ভভিষ্যতে প্রয়োজনীয় মানব সম্পদ সম্পর্কিত পরিকল্পনাকে মানব সম্পদ পরিকল্পনা বলে। মূলত প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ মানব সম্পদের চাহিদা নিরূপণ সম্পর্কিত বিষয় মানব সম্পদ পরিকল্পনার আওতাভুক্ত। মানব সম্পদের এরূপ ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণ, এদের সংগ্রহ, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের সঙ্গে কতিপয় ধারাবাহিক পদক্ষেপ বা প্রক্রিয়া জড়িত। নিম্নে মানব সম্পদ পরিকল্পনার পদক্ষেপ বা প্রক্রিয়া চিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন ও আলোচনা করা হলো-
১। বর্তমান মানব সম্পদের চাহিদা নিরূপণ
প্রথম মানব সম্পদ পরিকল্পনার পদক্ষেপ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদের বর্তমান অবস্থা নিরূপণ। এজন্য ক) প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উদ্দেশ্য পর্যালোচনা; খ) বর্তমান দক্ষতাসম্পন্ন মানব সম্পদের মজুত সম্পর্কে সঠিক বর্ণনা; এবং গ) কার্য বর্ণনা, কার্য নির্দিষ্টকরণ ও কার্য মূল্যায়নের মাধ্যমে কাজ সম্পর্কে তথ্যাদির আলোকে কার্য বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ মানব সম্পদের অবস্থা এবং মানব সম্পদের দক্ষতা সংক্রান্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে বর্তমান চাহিদা নিরূপণ সম্ভব। এজন্য বর্তমান মানব সম্পদের মজুত ও কার্য বিশ্লেষণ এর বিবেচনা আবশ্যক।
২। মানব সম্পদের ভবিষ্যৎ চাহিদা পূর্বানুমান
মানব সম্পদ পরিকল্পনার দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উদ্দেশ্য পর্যালোচনার আলোকে ভবিষ্যৎ মানব সম্পদের চাহিদা ও সরবরাহ সম্পর্কে পূর্বানুমানের মধ্যে তুলনা করে সঠিক মানব সম্পদের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ। মানব সম্পদের চাহিদা ও সরবরাহের অনুমান করে ভবিষ্যৎ মানব সম্পদের প্রয়োজনীয়তার একটি তালিকা প্রণয়ন আবশ্যক। উক্ত তালিকা প্রণয়নে নানা পরিবেশগত ও সাংগঠনিক উপাদানের বিবেচনা প্রয়োজন। উক্ত তালিকানুযায়ী ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে কখন কি ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন মানব শক্তির প্রয়োজন তা নির্ণয় করা যাবে। ভবিষ্যৎ চাহিদার পূর্বানুমানে বিবেচ্য উপাদানসমূহ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশিত অগ্রগতি ও সম্প্রসারণ, বাজেটের সীমাবদ্ধতা, বদলি, অবসর, মৃত্যু, কর্ম পরিত্যাগ, প্রত্যাহার ইত্যাদি কারণে ঘূর্ণায়মানতার হার নির্ণয় ও নতুন প্রযুক্তির প্রবর্তন ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: মানব সম্পদ পরিকল্পনা কি? মানব সম্পদ পরিকল্পনার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা কি?
৩। মানব সম্পদ সংস্থানের কৌশল প্রণয়ন
এ পদক্ষেপে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সরবরাহের উৎসস্থল সম্পর্কে অনুমান ও সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টি জড়িত। প্রতিষ্ঠানে মানব সম্পদের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণের লক্ষ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে দু’টি বিষয় বিবেচনা করা আবশ্যক।
প্রথমত, বর্তমান মানব সম্পদের উপর নির্ভরতা অথবা নতুন কর্মী সংগ্রহ।
দ্বিতীয়ত, মানব সম্পদের প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রয়োজনীয়তা অথবা অপ্রয়োজনীয়তা।
উপরিউক্ত দু’টি বিষয়ের আলোকে চার প্রকার কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে। যথা-
১। বর্তমান কর্মীদের প্রশিক্ষণ না দেয়া,
২। বর্তমান কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা,
৩। বাহির থেকে কর্মী সংগ্রহ করা তবে তাদের প্রশিক্ষণ না দেয়া এবং
৪। বাহির থেকে কর্মী সংগ্রহ ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া।
প্রতিষ্ঠানের উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রয়োজনে উপরিউক্ত চার প্রকারের কৌশলের যে কোনটি গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪। মূল্যায়ন, সংশোধন ও আধুনিকীকরণ
চতুর্থ ও সর্বশেষ মানব সম্পদ পরিকল্পনার পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমতা বিধান করে মানব সম্পদের ঘাটতি বা অতিরিক্ত কর্মীর অবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ পর্যায়ে মানব সম্পদ পরিকল্পনার কার্যকারিতা ও দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রকৃত কার্যসম্পাদনের আলোকে ও পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। অপ্রত্যাশিত স্বল্পতা বা অতিরিক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী পরিকল্পনা ব্যবস্থার ত্রুটি নির্দেশ করে। তাই উক্ত ত্রুটিসমূহ চিহ্নিত করে দ্রুত সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক, যাতে দক্ষতা ও কার্যকারিতার সাথে মানব সম্পদ পরিকল্পনার কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চালানো সম্ভব হয়।