মেগাস্থিনিসের পরিচয়
গ্রিক পন্ডিত মেগাস্থিনিস সিরিয়ার অধিপতি সেলিউকাসের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ভারতবর্ষে আসেন এবং চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজদরবারে কয়েক বছর অবস্থান করে ভারত সম্পর্কে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা লাভ করেন। মেগাস্থিনিস তাঁর সেসব অভিজ্ঞতা এবং নানা ঘটনা ‘ইন্ডিকা’ নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন যা মৌর্য সাম্রাজ্যের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। মেগাস্থিনিসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিচে প্রদান করা হল-
১) রাজসভার দূত
প্রথম জীবনে মেগাস্থিনিস গ্রিক বীর এবং সিরিয়ার অধিপতি সেলিউকাসের প্রতিনিধি হিসেবে অ্যারোকোশিয়ার রাজসভায় কাজ করেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং সেলিউকাসের মধ্যে শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর মেগাস্থিনিস সেলিউকাসের দূত হিসেবে মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজধানী পাটলিপুত্রের রাজসভায় আগমন করেন এবং প্রায় পাঁচ বছর (৩০২ থেকে ২৯৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ভারতবর্ষে অবস্থান করেন।
আরও পড়ুন: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর
২) ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থ রচনা
মেগাস্থিনিস উপমহাদেশে অবস্থানকালীন ভারতবর্ষ সম্পর্কে বাস্তব ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ‘ইন্ডিকা’ নামক একখানি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি তৎকালীন সমাজ ও শাসনব্যবস্থা, নগরীর সমৃদ্ধি, পথ ঘাট, প্রজাদের দৈনন্দিন জীবন, অর্থনৈতিক অবস্থা, ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে এই গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। মেগান্থিনিস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজধানী পাটলিপুত্র নগরের গঠন বৈচিত্র্য এবং সুরম্য অট্টালিকাসমূহের শিল্পকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি ভারতবর্ষে অবস্থানকালে যেসব বিষয় প্রত্যক্ষ করেছেন সেগুলো সম্পর্কে ইন্ডিকা গ্রন্থে নিখুঁত বর্ণনা করেছেন।
আরও পড়ুন: আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের ফলাফল
৩) ভারতীয় সমাজ জীবনের বর্ণনা
মেগাস্থিনিস তৎকালীন ভারতীয়দের জীবন যাপন পদ্ধতি এবং রীতিনীতি সম্পর্কে মনোজ্ঞ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন। ভারতীয়দের জীবনযাত্রা প্রণালি ছিল সহজ-সরল এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়। তখন সমাজে চুরি ডাকাতি কম হতো। মিতব্যয়ী জীবনযাপন করলেও স্ত্রী কন্যাদের অলঙ্কারাদি নির্মাণে প্রচুর অর্থ ভারতীয়রা ব্যয় করত। মোটামোটিভাবে জন সাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল স্বচ্ছল এবং উন্নত। চন্দ্রগুপ্তের শাসনামলে আইনের শাসন ছিল অত্যন্ত কঠোর। জনগণ শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করত।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে মেগাস্থিনিস ছিলেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রাচীন ভারতের ভৌগোলিক অবস্থা, শাসন পদ্ধতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি সম্পর্কে যে মূল্যবান তথ্য ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন তা মৌর্য বংশের সামগ্রিক ইতিহাসের অত্যন্ত মূল্যবান উপাদান। প্রাচীন ভারতের তথ্যবহুল উপাদানের জন্য ভারতবাসী তাঁর নিকট চিরঋণী।