Home » আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ – কি ছিল কারণ?

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ – কি ছিল কারণ?

by TRI

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ সালে মেসিডনের রাজা গ্রিকবীর মহামতি আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন। তিনি দক্ষিণাভিমুখে অগ্রসর হয়ে মধ্য এশিয়া ও পারস্য জয় করে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ভারত আক্রমণ করেন। তাঁর এই অভিযান প্রায় দুই বছর ধরে চলেছিল।

আলেকজান্ডার কে ছিলেন?

আলেকজান্ডার ছিলেন মেসিডনের রাজা ফিলিপের পুত্র, জাতিতে আর্য-গ্রিক। বাল্যকালে তিনি প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের নিকট গৃহশিক্ষা লাভ করেন। তবে তিনি দর্শন শিক্ষা অপেক্ষা অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষায় অধিকতর আগ্রহী ছিলেন। সেকালের বিখ্যাত বীর হারকিউলিস, কাইরাস প্রমুখ বীর যোদ্ধাদের বীরত্বের কাহিনী শ্রবণে তিনি অত্যধিক উৎসাহবোধ করতেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৫ অব্দে ফিলিপের মৃত্যু হলে মাত্র ২০ বছর বয়সে আলেকজান্ডার মেসিডনের সিংহাসনে আরোহণ করেন। বয়সের স্বল্পতা এবং বিশাল সামরিক প্রতিষ্ঠা শীগ্রই তাঁকে উচ্চাভিলাষী এবং দিগ্বিজয়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ করে।

আলেকাজান্ডারের ভারত আক্রমণ – যা ছিল কারণ

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ অনেকগুলো কারণকে প্রতিফলিত করে। নিম্নে এসব কারণসমূহ আলোচনা করা হল-

১) সামরিক প্রতিষ্ঠা লাভ ও দিগ্বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা

আলেকজান্ডার ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ও উচ্চাভিলাষী নরপতি। সুতরাং ঐতিহাসিকদের মতে, ব্যক্তিগত সামরিক প্রতিষ্ঠা ও দিগ্বিজয়ের আকাঙ্ক্ষাই তাঁকে ভারতীয় উপমহাদেশ আক্রমণে প্রলুব্ধ করেছিল। দিগ্বিজয়ের দ্বারা তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হতে চেয়েছিলেন।

২) গ্রিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিস্তার

ভারতে গ্রিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র স্থাপন এবং গ্রিক সংস্কৃতি প্রচার করা আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের অন্যতম কারণ ছিল। শিক্ষক এরিস্টটলের মন্ত্রে দীক্ষিত আলেকজান্ডার মনে করতেন যে, পৃথিবীতে গ্রিক সভ্যতাই শ্রেষ্ঠ। সুতরাং দিগ্বিজয়ের দ্বারা তিনি সমগ্র পৃথিবীতে গ্রিক সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিস্তারে আগ্রহী ছিলেন।

৩) ভারতের ঐশ্বর্য

গ্রিসের অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল না। পক্ষান্তরে, ভারত ছিল অপ্রতুল ঐশ্বর্য ও সম্পদের দেশ। তাই অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, গ্রিসের আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও ভারতের অপ্রতুল ঐশ্বর্য আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ অভিযানে প্রলুব্ধ করেছিল। নতুন দেশ অধিকার করে বিজিত দেশের অর্থসম্পদ দ্বারা তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক অনটন মেটাতে চেয়েছিলেন।

৪) ভারতের রাজনৈতিক অনৈক্য

ভারত উপমহাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক অনৈক্য ও অরাজকতা এবং এখানকার রাজন্যবর্গের মধ্যে বিবাদবিসম্বাদ আলেকজান্ডারকে এদেশ আক্রমণে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

৫) রাজ্যসীমা বিস্তার

পারস্য বিজয়ের পর আলেকজান্ডারের রাজ্যসীমা ভারত পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে পড়লে সাম্রাজ্যবাদী আলেকজান্ডারের দৃষ্টি স্বাভাবিকভাবেই ভারতবর্ষের ওপর নিপতিত হয়।

৬) প্রতিশোধ স্পৃহা

পারস্যের বিরুদ্ধে যুুদ্ধে ইরানি বাহিনীর পক্ষে ভারতীয় সৈন্যরাও অংশগ্রহণ করেছিল। আলেকজান্ডার এর প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারস্য বিজয়ের পর ভারতের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন।

আরও পড়ুন:  আর্য কারা? আর্যদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

আলেকজান্ডারের ভারত অভিযান

খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে আলেকজান্ডার ভারতে তাঁর অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। তিনি কতকগুলো দুর্ধর্ষ পার্বত্য জাতিকে দমন করেন। অতঃপর সিন্ধুনদ অতিক্রম করে সিন্ধু ও বিতস্তা (ঝিলাম) নদীর মধ্যবর্তী তক্ষশীলা রাজ্যের দিকে অগ্রসর হন। তক্ষশীলার রাজা অম্ভির সাথে বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা (চেনার) নদীর মধ্যবর্তী ভূখন্ডের রাজা পুরুর শত্রুতা ছিল। রাজা অম্ভি বিনাযুদ্ধে আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করে নেন।

পুরু রাজা বিনাযুদ্ধে বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না। তাই গ্রিক সেনাবাহিনী বঙ্গ রাষ্ট্রের বিতস্তা অতিক্রম করে আক্রমণ করলে পুরু বীরত্বের সাথে তাদেরকে প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করেন। উন্নত যুদ্ধাস্ত্র ও সুসজ্জিত গ্রিক বাহিনীর সাথে পুরুর সেনাবাহিনী পেরে উঠতে অসমর্থ হয়। এছাড়া পুরুর পাঁচ হাজার সৈন্য আলেকজান্ডারের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। রাজা পুরু মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বন্দী হন। বন্দী পুরু আলেকজান্ডারের নিকট নীত হলে তিনি নির্ভীকভাবে রাজার প্রতি রাজার উপযুক্ত ব্যবহার দাবি করেন। মহাবীর আলেকজান্ডার পুরুর বীরত্ব ও নির্ভীকতায় প্রীত হয়ে তাঁকে তাঁর রাজত্ব ফিরিয়ে দেন।  এবং পরে পাঞ্জাব অঞ্চলের শাসনভারও পুরুর হাতে ন্যস্ত করেন।

Related Posts