বাংলাদেশের কৃষি ঋণের প্রাতিষ্ঠানিক উৎস সমূহ
(ক) উপানুষ্ঠানিক উৎস: উপানুষ্ঠানিক উৎসের মধ্যে বিভিন্ন NGO ও গ্রামীণ ব্যাংক উল্লেখযোগ্য।
NGO আবার দু প্রকার। যথা- ১) বিদেশি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট বাংলাদেশি NGO এবং ২) স্থানীয় NGO।
(খ) আনুষ্ঠানিক উৎস-ব্যাংক ঋণ: আনুষ্ঠানিক উৎসের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকই প্রধান।
(১) বাংলাদেশ ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক: যে সব ব্যাংক ও সংস্থা বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি ঋণ প্রদান করে, বাংলাদেশ ব্যাংক সে সব সংস্থাকে কম সুদে ঋণ প্রদান করে। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও সমবায় ব্যাংককে প্রচলিত ব্যাংক হার অপেক্ষা ২% কম সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। কৃষকদেরকে ঋণ প্রদানে সাহায্য করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ‘কৃষি বিভাগ’ চালু করেছে।
কৃষির উপখাত গুলো কি কি – আলোচনা কর |
(২) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক: কৃষকদেরকে ঋণ দেওয়ার জন্যই কৃষি ব্যাংক স্থাপিত হয়েছে। সাধারণত কৃষককে কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচের জন্য গভীর-অগভীর নলকূপ, পাম্পিং মেশিন, হালের গরু ক্রয়, বীজ, সার, কীটনাশক, মৎস্য চাষ, হাঁস. মুরগি ও পশুপালন, বিপণন প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ঋণ দিয়ে থাকে।
(৩) বাণিজ্যিক ব্যাংক: স্বাধীনতার পর ব্যাংক ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত করার পর থেকে কৃষি, শিল্প, ব্যবসায় বাণিজ্যে ঋণদানের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উৎপাদনমুখী স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রসারণে, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সহায়তা প্রদানে বাণিজ্যিক ব্যাংক সর্বাধিক অবদান রাখছে।
(৪) সমবায় সমিতি: সমবায় ঋণদান সমিতি কৃষিঋণের অন্যতম প্রধান উৎস। সাধারণত এ সমিতি কৃষকদেরকে স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে। সমবায় আন্দোলন এখনো দেশে তেমন প্রসার লাভ না করলেও বর্তমানে এর পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের উপর বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে।
(৫) ভূমি বন্ধকি ব্যাংক: বাংলাদেশের সর্বত্র যে কয়েকটি ভূমি বন্ধকি ব্যাংক রয়েছে সেগুলো জমি বন্ধক রেখে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে।
(৬) সরকার: সরকারও অনেক সময় বিশেষত বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কৃষকদেরকে সরাসরি ঋণ প্রদান করে। এ ঋণের সুদের হারও কম এবং পরিশোধ করার শর্তও সহজ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকগুলো লক্ষ্যের চেয়ে বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। এ সময়ে কৃষিখাতে ২০,৯৯৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক মোট ২০,৪০০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লি খঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশের কৃষি ঋণের অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস সমূহ
১. বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন: অনানুষ্ঠানিক উৎসের মধ্যে এটা একটা বড় উৎস। এ উৎস থেকে কৃষকেরা মোট কৃষিঋণের প্রায় ৯৩% পেয়ে থাকে। এ ঋণের জন্য কোনো জামানত নেই, মুনাফা বা সুদ দিলেও খুব কম।
২. গ্রাম্য ব্যবসায়ী ও দোকানদার: গ্রাম্য ব্যবসায়ী ও দোকানদারগণ কৃষকদের ফসল কম দামে বন্ধক রাখে, যা ফসল উঠলেই তাদের নিকট বিক্রয়ে বাধ্য হয়-এরূপ অবস্থায় ঋণ প্রদান করে এবং কৃষকদেরকে প্রায় ২% থেকে ৩% ঋণের যোগান দিয়ে থাকে।
৩. গ্রাম্য মহাজন: এ উৎস কৃষকদেরকে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। কৃষকদের নিকট থেকে জমি, সোনার অলঙ্কার ও অন্যান্য দ্রব্যাদি জামিন রেখে চড়া সুদে ঋণ প্রদান করে। কিন্তু সুদের হার অধিক বলে অধিকাংশ কৃষক এ ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়।
৪. ভূস্বামী ও গ্রাম্য ধনী লোক: এ উৎস থেকে কৃষকদেরকে ঋণ গ্রহণের জন্য অনেক সময় মূল্যবান জিনিসপত্র অথবা ফসল বন্ধক রাখতে হয়।
৫. ধনী ও বিত্তশালী কৃষক: ধনী ও বিত্তশালী কৃষকগণ অনেক সময় মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষকদের অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ প্রদান করে।
৬. ফড়িয়া ও বেপারি: গ্রাম্য ফড়িয়া ও বেপারিগণও কৃষকদেরকে ঋণ দিয়ে থাকে। তবে এদের ঋণের পরিমাণ স্বল্প।
গবেষণা রিপোর্ট: BRDB এর লুৎফুল হকের কোতোয়ালী থানা জরিপ হতে দেখা যায় যে, ৮৮% কৃষক গ্রাম্য মহাজন থেকে ঋণ গ্রহণ করে।
১৯৭৮ সালে BIDS এর গবেষণায় (Chowdhury and Ghafur) দেখা যায়, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ২২%, মহাজনদের কাছ থেকে ৫৪% ঋণ কৃষকরা গ্রহণ করে।
আশাকরি, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা বাংলাদেশের কৃষি ঋণের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস সমূহ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।