Home » সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য লেখ
সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য,

সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য লেখ

by TRI

সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কতিপয় বিষয়ে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য বর্ণনা করা হলো-

১. দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য

সমাজবিজ্ঞানী যে সমাজ নিয়ে গবেষণা বা চিন্তা করেন তিনি সে সমাজের সদস্য। কিন্তু নৃবিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গি আদিম আহারহীন সমাজ পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ তিনি ঐ সমাজের সদস্য নয়। তাই দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক থেকে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

সমাজবিজ্ঞানের সাথে নৃবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর

২. পরিধিগত পার্থক্য

সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার পরিধির তুলনায় নৃবিজ্ঞানের গবেষণার পরিধি অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। নৃবিজ্ঞান আধুনিক ও আদিম সমাজ, মানুষের দৈহিক সাংস্কৃতিক সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানে এতসব বিষয়ে আলোচনা হয় না।

৩. তথ্য ব্যবহারগত পার্থক্য

সমাজবিজ্ঞানীরা প্রয়োজনে ঐতিহাসিক তথ্য ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু নৃবিজ্ঞানীরা কখনো ঐতিহাসিক তথ্য ব্যবহার করে না। ফলে যেখানে ঐতিহাসিক তথ্য আছে সেখানে সমাজবিজ্ঞান এবং যেখানে ঐতিহাসিক তথ্য নেই সেখানে নৃবিজ্ঞান।

৪. বিষয়গত পার্থক্য

নৃবিজ্ঞানের মূল বিষয় হলো Ethnography তৈরি করা। অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানের মূল বিষয় হলো Theory Construction বা তত্ত্ব নির্মাণ করা। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বটোমোর বলেন, “সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানে প্রযুক্ত প্রত্যয়গুলোকে পর্যালোচনা করলে অনুধাবন করতে অসুবিধা হয় না যে, আলোচ্যবিষয় দুটির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।

৫. পদ্ধতিগত পার্থক্য

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপজাতির সামাজিক জীবনের প্রাত্যহিক ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণের জন্য নৃবিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ ও ব্যক্তিগত অংশগ্রহণ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। এজন্য নৃবিজ্ঞানীরা পরিসংখ্যানের উপরও জোর দেন। অপরদিকে, সমাজবিজ্ঞান প্রাথমিক পর্যায়ে পাশ্চাত্য সভ্যতা নিয়েই সমীক্ষা চালিয়েছে। বিষয়বস্তুর এ পার্থক্যের কারণে পদ্ধতিগত প্রশ্নে উভয়ের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে।

৬. প্রশিক্ষণগত পার্থক্য

প্রশিক্ষণগত দিক থেকেও নৃবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা সাধারণত জীববিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব ও প্রত্নতত্ত্বে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। অন্যদিকে, নৃবিজ্ঞানীদেরকে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয়।

৭. তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পার্থক্য

সমাজবিজ্ঞানীরা সাধারণত Secondary source থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। পক্ষান্তরে, নৃবিজ্ঞানীরা ‘Primary Sourec’ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।

৮. ভবিষ্যদ্বাণী সংক্রান্ত পার্থক্য

নৃবিজ্ঞানীরা সহসাই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন না। কেননা তাদের সমস্যার গভীরে যেতে সময় নেয় বেশি। অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজ সম্পর্কে গবেষণা করে তত্ত্ব দাঁড় করান এবং এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকে।

৯. এলাকাগত পার্থক্য

এলাকাগত পার্থক্যের কারণেও নৃবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। আলোচ্য সমাজকে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে নৃবিজ্ঞানীরা বিচারবিশ্লেষণ করেন। অপরদিকে, সমাজবিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট সমস্যাকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়।

১০. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পার্থক্য

যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানীরা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু নৃবিজ্ঞানীরা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন।

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, নৃবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে কতিপয় বিষয়ে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, উভয়ের মধ্যে অধিকাংশ বিষয়েই যথেষ্ট মিল রয়েছে। একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক হিসেবে স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা নিজেদেরকে অসম্পূরক হিসেবে মনে করে।

বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর

Related Posts