Home » নৃবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও
নৃবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও, নৃবিজ্ঞানের সংজ্ঞা,

নৃবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও

by TRI

নৃবিজ্ঞানের সংজ্ঞা

নৃবিজ্ঞানের ইংরেজি ‘Anthropology’ এসেছে গ্রিক শব্দ Anthropos এবং Logia থেকে। গ্রিক শব্দ Anthropos অর্থ মানুষ এবং Logia অর্থ পাঠ। তাই ‘Anthroplogy’ শব্দের অর্থ হলো মানুষ সম্পর্কিত পাঠ বা মানববিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞানের মূল আলোচনা মানুষকে নিয়ে। মানুষের জন্ম, পরিবার, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, সমাজ, অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, প্রথা, কৃষ্টি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে তাকে নৃবিজ্ঞান বলা হয়। অর্থাৎ মানুষের ইতিহাসের বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনাই নৃবিজ্ঞানের মুখ্য বিষয়।

নৃবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কি (Malinowsky) বলেন, “মানুষ ও তার সংস্কৃতির বৈজ্ঞানিক পাঠ বা আলোচনা হলো নৃবিজ্ঞান।”

নৃবিজ্ঞানী ই. এ. হোবেল (E. A. Hoebel) বলেন, “নৃবিজ্ঞান মানুষ ও তার সংস্কৃতির বিজ্ঞান।”

মারভিন হ্যারিস (Marvin Harris) বলেন, “নৃবিজ্ঞান আদিম এবং আধুনিক মানবজাতি এবং তাদের জীবন প্রণালীর অধ্যয়ন।”

নৃবিজ্ঞানী এম. জ্যাকব এবং বি. জে. স্টেম (M. Jacob and B. J. Stem) এর মতে, “পৃথিবীতে মানবজাতির উদ্ভবের সময় থেকে শুরু করে তাদের দৈহিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ এবং আচরণ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক আলোচনা হলো নৃবিজ্ঞান।”

আমেরিকার নৃবিজ্ঞানের সভাপতি ফ্রেডারিকা ডেলাওনা (Frederica Dellaguna) নৃবিজ্ঞানের সংজ্ঞা হিসেবে বলেন, “নৃবিজ্ঞান বুঝতে চেষ্টা করে যে, মানুষ কি, কোথা থেকে এবং কিভাবে তার উদ্ভব এবং পৃথিবীতে নানান ধরনের মানুষ অতীতে কি করেছে এবং বর্তমানে কি করছে, কিভাবে তারা কাজকর্ম করে, চিন্তা করে, অনুভব করে, কেমন করে কথা বলে, গান গায়, বস্তুসামগ্রীকে বিভিন্ন রূপ বা অবয়ব দেয়, অথবা কিভাবে তাদের হাতে পৃথিবীকে নবরূপে গড়ে তোলে, সবার সাথে জীবনযাপন করে এবং তাদের চারপাশের সকল জানা অজানা শক্তিকে মোকাবিলা করে।”যে কোন বিষয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক রূপ দিতে গেলে এর পরিপূর্ণ অধ্যয়ন প্রয়োজন। এ ব্যাপারে নৃবিজ্ঞানী হোবেল (Hoebel) বলেন, “কোন অংশকেই সম্পূর্ণ বা সঠিকভাবে সমগ্র থেকে পৃথক করে বুঝা যায় না। তাই বলা হয় যে নৃবিজ্ঞান মানুষের সামগ্রিক বা পূর্ণাঙ্গ অধ্যয়ন।”

‘Encyclopedia Britanica’ এর সংজ্ঞানুযায়ী, “নৃবিজ্ঞান হলো মানুষের প্রক্রিয়াগত বিজ্ঞান। প্রকৃতির রাজ্যে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় বা বিবর্তনের মতানুসারে ‘Homosapience’ থেকে মানুষ ও সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে, যে সংস্কৃতিকে মানুষ নিজের মতো করে সৃষ্টি করেছে।”

আমেরিকার নৃবিজ্ঞানী Marvin Harris এর মতে, “মানবজীবনের অতীত বর্তমানের রূপ ও ধরন সম্পর্কে বিজ্ঞানের যে শাখা বর্ণনা ও বিশ্লেষণ করে তাকেই নৃবিজ্ঞান বলে।

নৃবিজ্ঞানী Nanda Serena এ প্রসঙ্গে বলেন, ” নৃবিজ্ঞান হচ্ছে মানব সম্পর্কিত তুলনামূলক অধ্যয়ন।”

নৃবিজ্ঞানী A. L. Kroeber এর মতে, ” নৃবিজ্ঞান হলো মানুষের দল এবং তাদের আচার-ব্যবহার এবং উৎপাদনের বিজ্ঞান।”

নৃবিজ্ঞানী William Haviland এর মতে, ” নৃবিজ্ঞান হচ্ছে সর্বকালে সর্বত্র মানবজীবনের অধ্যয়ন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ ও তার আচরণ সম্বন্ধে নির্ভরযোগ্য জ্ঞান আহরণ করা, যার আলোকে তাদের অভিন্নতা ও পার্থক্যের উপর আলোকপাত করা যায়।”

সমাজবিজ্ঞানী Gerand O Donnel এর মতে, ” নৃবিজ্ঞান হচ্ছে মানুষ এবং তার উন্নয়নের অধ্যয়ন। এটি বিশেষত আদিম সমাজ এবং তার পূর্ববর্তী সভ্যতাসমূহের অধ্যয়ন।”

নৃবিজ্ঞানী James William Lett বলেন, ” নৃবিজ্ঞানের অবস্থান হচ্ছে মধ্যবর্তী। এটিকে আমরা মানবিক বিভাগের যেমন সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত শাখা হিসেবে ধরে নিতে পারি তেমনি এটিকে বিজ্ঞানের সবচাইতে মানবিক শাখা হিসেবেও ধরে নিতে পারি। যারা নৃবিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত নন এই বিষয়টি তাদের কাছে কিছুটা আজগুবি বিষয় বলে মতে হতে পারে। তবে এই বিষয়টি এখন নৃবিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত সুধীজনের কাছে সূক্ষ্ম বলে মনে হচ্ছে।”

University of Florida য় বলা হয়েছে, ” নৃবিজ্ঞান হচ্ছে মূলত মানবজাতির অধ্যয়ন। এটি মানব অস্তিত্ব এবং কর্মকাণ্ডসমূহের বিভিন্ন দিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে। মানবিক উৎসের আলোকেই নৃবিজ্ঞান মানবিক অভিজ্ঞতাসমূহের উপর আলোকপাত করে। এর পরিধি হচ্ছে মানবজাতির উৎস থেকে শুরু করে সংস্কৃতি এবং সামাজিক জীবন।”

সমাজবিজ্ঞানী Gerand O. Donnell তাঁর ‘Mastering Sociology’ (2002: P-34) গ্রন্থে বলেন, ” নৃবিজ্ঞান হচ্ছে মানুষ এবং তার উন্নয়নের অধ্যয়ন। এটি বিশেষত আদিম সমাজ ও তার পূর্ববর্তী সভ্যতাসমূহের অধ্যয়ন।” তিনি আরো বলেন, নৃবিজ্ঞান হচ্ছে মানুষের জৈবিক এবং সামাজিক উন্নয়নের তুলনামূলক অধ্যয়ন।

মানুষ জীবসত্তা এবং সামাজিক সত্তার সমন্বয়ে গঠিত। নৃবিজ্ঞান মানুষের এই উভয় সত্তা নিয়েই আলাচনা করে। এদিক থেকে জীব হিসেবে মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক নিয়ে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে তাকেই নৃবিজ্ঞান বলা হয়। নৃবিজ্ঞান একদিকে পৃথিবীতে মানুষের অবস্থান, অন্যদিকে মানুষের সাংস্কৃতিক জীবন নিয়ে কথা বলে। সুতরাং মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞানভিত্তিক যে পাঠ তাকেই বলা হয় নৃবিজ্ঞান।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

আধুনিক নৃবিজ্ঞানের জনক কে?

আধুনিক নৃবিজ্ঞানের জনক হলেন ক্লাউড লেভী স্ট্রস।

সামাজিক নৃবিজ্ঞানের জনক কে?

সামাজিক নৃবিজ্ঞানের জনক হলেন ব্রনিসলাউ মলিনস্কি।

নৃবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ কি?

নৃবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ Anthropology.

আরও পড়ুন:

নৃবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর
নৃবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর

Related Posts