নৃবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশ এর আলোচনায় প্রথমেই বলা যায় বিষয়টি অতি প্রাচীন। প্রাচীন কালে পণ্ডিতগণ পৃথিবীর মানুষ সম্পর্কে নানা ধরনের আলোচনা করেছেন।
John G. Honigman এর মতে, “মানব সংস্কৃতি সম্পর্কে নৃবৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আনুষ্ঠানিকতা প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের মধ্যে প্রথম দেখা যায়।”
গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস (৪৮৪-৪২৫ খ্রিস্টপূর্ব) পঞ্চাশটিরও বেশি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি তাঁর লেখায় তৎকালীন জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি, বিয়ে, আইন, সরকার, যুদ্ধ, ধর্ম প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরেছেন। উনবিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত নৃবিজ্ঞান বিষয়টি ঐতিহাসিক, দার্শনিক, ধর্মজ্ঞ, রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদদের দ্বারা উপস্থাপিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন
সচিবালয়ের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর |
অন্যদিকে, নৃবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশ সংক্রান্ত আরেকটি মত অনুযায়ী, নৃবিজ্ঞান হচ্ছে পুনর্জাগরণ এর ফসল। এ প্রসঙ্গে Rowe বলেছেন, ইতালীয় রেনেসাঁতে নৃবিজ্ঞানের উৎপত্তির মূল নিহিত রয়েছে। তাঁর মতে, “চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীর ইতালীয় রেনেসাঁকালে নৃবিজ্ঞানের তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির আবির্ভাব ঘটেছিল।” নৃবিজ্ঞানের উদ্ভব সংক্রান্ত জ্ঞানসম্বন্ধীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী নৃবিজ্ঞানকে তখনই বিজ্ঞান বলা যাবে যখন এর অস্তিত্ব রক্ষার্থে কোন নৃবৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় কর্তৃক তত্ত্ব ও পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। একটি পৃথক জ্ঞানের শাখা হিসেবে আমেরিকাতেই নৃবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠা ও এর আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমেরিকায় এমন একটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায় যা বিবর্তনবাদকে খণ্ডন ও এথনোগ্রাফিক উপাত্ত সংগ্রহের লক্ষ্যে এক বৃহৎ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে আমেরিকার নবীন ও উদীয়মান নৃবিজ্ঞানীরা শামিল হয়েছিল। বর্তমানে নৃবিজ্ঞান অন্যান্য মানবিক বিজ্ঞানের পাশাপাশি পরিপূরক হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। এটি বর্তমানে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য অন্যান্য বিজ্ঞানকেও সহায়তা গ্রহণ করে থাকে। নৃবিজ্ঞানের সূচনাকাল হিসেবে অষ্টাদশ শতাব্দী বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এ সময়ে মানবজাতিকে সামগ্রিকভাবে জানার প্রচেষ্টা চালানো হয়। এক্ষেত্রে ঘিওরঘিটা জিনা (Gheorghita Geana) এবং ইভান্স প্রিচার্ড (E. E. Evans Pritchard) এর অবদান অগ্রগণ্য। মানুষকে সংজ্ঞায়িত ও শ্রেণীকরণ করার লক্ষ্যে কর্মরত বিচারক মনবেড্ডো (Mono Beddoe) এ সময়ের জাতক ছিলেন। আক্ষরিক অর্থে যথার্থই নৃবিজ্ঞান মানুষের বিজ্ঞান হিসেবে রূপদান করে নি। নৃবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাতে উদাহরণ দিতে গিয়ে দেখা গেছে যে, এর বেশিরভাগ উদাহরণই দেয়া হয়েছে আদিম সমাজ এবং সমাজের উপাত্তকে কেন্দ্র করে।
আরও পড়ুন
নৈতিকতা কি | নৈতিকতা কাকে বলে | নৈতিকতা বলতে কি বুঝায় |
অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে জার্মান ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে নৃবিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ম্যালিনোস্কি ও তাঁর অনুসারিগণ মাঠ গবেষণার মাধ্যমে নৃবিজ্ঞানের তথ্য উদ্ভাবন করেছেন। যেসব দেশে উপনিবেশ ছিল যেমন- ব্রিটেন, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ড সেসব দেশে নৃবিজ্ঞান অগ্রগণ্যতা লাভ করে। অন্যদিকে, কম উপনিবেশের দেশ যেমন- পোল্যান্ড, সুইডেন ও স্লোভানিয়ায় ইউরোপের জাতীয় ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির পাঠ গুরুত্ব পায়। মূলত উপনিবেশের উপস্থিতি সামাজিক নৃবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাকে ত্বরান্বিত করেছে।
স্থান-কাল পাত্রভেদে নৃবিজ্ঞানে সাধারণ মানুষের কথা বলার সুযোগ রয়েছে। আজকের বিশ্বে নৃবিজ্ঞানের চর্চা ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে নৃবিজ্ঞান নিজস্ব পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির কথা বলছে। এক সময় নৃবিজ্ঞানকে মানুষ সমানভাবে বুঝবে এবং মানুষের প্রচেষ্টায় পূর্ণতা লাভ করবে। নৃবিজ্ঞান মানুষের জীবনধারাকে কেন্দ্র করে সামাজিক সত্তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। নৃবিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রাণী হিসেবে মানুষের জীবন প্রণালী পর্যালোচনা করা।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
নৃবিজ্ঞান বলতে কি বুঝায়?
মানুষের জন্ম, পরিবার, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, সমাজ, অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, প্রথা, কৃষ্টি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে তাকে নৃবিজ্ঞান বলা হয়। অর্থাৎ মানুষের ইতিহাসের বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনাই নৃবিজ্ঞানের মুখ্য বিষয়।
নৃবিজ্ঞানের জনক কে?
গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসকে নৃবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
নৃবিজ্ঞান পড়ে কি হবে?
নৃবিজ্ঞান অধ্যয়নের দ্বারা সমাজ কাঠামো, ব্যক্তিত্ব, মানুষের গঠন, উৎপত্তি, সংস্কৃতি, বংশগত, উত্তরাধিকার, গোষ্ঠী প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।