গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সকল প্রশাসনিক ও সরকারি কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হলো সচিবালয় (Secretariat)। সমগ্র প্রশাসনিক সংগঠনের স্নায়ুকেন্দ্র এবং সরকারি কর্মকাণ্ডের প্রধান নীতিনির্ধারণী সংস্থা হচ্ছে সচিবালয়। যাবতীয় সরকারি সিদ্ধান্ত ও নীতি সর্বপ্রথম সচিবালয়ে গৃহীত হয়। বাংলাদেশের প্রশাসনিক সংগঠনের সর্বশীর্ষে রয়েছে সচিবালয়।
সচিবালয়ের গঠন
সচিবালয় গঠিত হয় মন্ত্রণালয়সমূহের সমন্বয়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বিত রূপই হলো সচিবালয়। পাকিস্তান শাসন আমলে পাকিস্তান সরকারের অধীনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের প্রাদেশিক মন্ত্রীদের অধীনে কয়েকটি বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত একটি সচিবালয় থাকত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পর প্রাদেশিক প্রশাসনিক কাঠামোটি বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনে রূপান্তরিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের অধীনে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগসহ একটি সচিবালয় ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে অস্থায়ী সরকারের বিলুপ্তি ঘটলে একটি সম্প্রসারিত মন্ত্রণালয় এবং ১৯টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে সচিবালয় পুনঃগঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী |
বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৫ (৬) অনুচ্ছেদে বর্ণিত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতির জারিকৃত আদেশ অনুসারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। এছাড়া সরকারি কার্যবিধির ৪(১) ধারার আলোকে প্রণীত ‘সচিবালয় নির্দেশনাবলি’ নামে আরেক দলিলের মাধ্যমে সচিবালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহে সরকারি কার্যক্রমের ধরন নির্ধারিত হয়। সচিব হলেন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রধান। তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন, নিয়মশৃঙ্খলা ও ন্যস্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও অধীন অফিসসমূহের কার্যবিধি যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে কি না তা সতর্কতার সাথে তদারক করেন। এছাড়া তিনি মন্ত্রণালয়ের কার্যকলাপ সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে অবহিত করেন।
প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে একজন সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব দায়িত্ব পালন করেন। একটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এটিকে বিভিন্ন উইং শাখা ও সেকশনে বিভক্ত করা হয়।
উইং বা উপবিভাগ-এর দায়িত্বে থাকেন একজন যুগগ্ম সচিব বা উপসচিব। শাখা- কয়েকটি সেকশন নিয়ে একটি শাখা গঠিত হয়। এর দায়িত্বে থাকেন একজন উপসচিব বা সমমর্যাদার কর্মকর্তা।
সেকশন– সেকশন হলো কার্যক্রম পরিচালনার মৌলিক একক। এর দায়িত্বে থাকেন একজন সহকারী সচিব। তবে সহকারী সচিবকে সহায়তা করার জন্য একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োজিত থাকেন।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাঠামো নিচের ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো-
চিত্র: সচিবালয়ের গঠন
সচিবালয়ের কার্যাবলি
বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের স্নায়ুকেন্দ্র (nerve centre) হলো সচিবালয়। বাংলাদেশ সচিবালয় যেসব কার্যাবলি সম্পাদন করে তা নিচে তুলে ধরা হলো-
১. নীতি প্রণয়ন: সচিবালয় হলো সরকারের নীতিনির্ধারণী শীর্ষস্থানীয় সংস্থা। নীতিনির্ধারণ ও কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার উপাত্ত, প্রমাণ, সংবাদ ও অন্যান্য বিষয় সংগ্রহ ও সংরক্ষণের গুরুদায়িত্ব সচিব বহন করেন।
২. পরিকল্পনা গ্রহণ: সরকারের যাবতীয় পরিকল্পনা সচিবালয়েই গৃহীত হয়। অতঃপর তা বাস্তবায়নের জন্য এখান থেকেই নির্বাহী সংগঠনে প্রেরিত হয়।
৩. বাস্তবায়নাধীন পরিকল্পনাগুলোর মূল্যায়ন: বাংলাদেশ সচিবালয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সরকারের বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন কর্মসূচির মূল্যায়ন করা। সেই সাথে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা।
৪. মন্ত্রীদের সহায়তা প্রদান: মন্ত্রিগণ জাতীয় সংসদে যে সকল তথ্য উপস্থাপন করেন তার যোগান দেয় সচিবালয়। কারণ সচিবালয়েই সকল সরকারি তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
৫. কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশ সচিবালয় প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অনুরূপ অন্যান্য কাজকর্মও সচিবালয় করে থাকে।