মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন কি?
ভারতবর্ষের শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতিতে ১৯০৯ সালের মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। ‘Indian Council Act, 1892’-এর কার্যকারিতা ব্রিটিশ সরকারের কাছে সন্তোষজনক মনে হলেও তা শিক্ষিত, সচেতন ভারতীয়দের তুষ্ট করতে পারেনি। ফলে ভারতীয়দের আইন পরিষদে প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি অব্যাহত থাকে। ১৯০৬ সালে মুসলমানদের স্বার্থ ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং তারা মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন দাবি করে। এরূপ পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল Lord Minto এবং ভারত সচিব Lord Morley ১৯০৯ সালে ভারত শাসন আইন প্রবর্তন করেন যা ‘Morly-Minto Reform Act,-1909’ নামেও পরিচিত।
ভারতীয় কাউন্সিল আইন ১৮৬১ ব্যাখ্যা কর |
মর্লে মিন্টো সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য
১৯০৯ সালের মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন বা ভারতীয় কাউন্সিল আইন বিভিন্ন দিক দিয়ে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। নিচে এ আইনের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-
১. পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী
১৯০৯ সালের মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনে সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী প্রথা প্রবর্তন করা হয়। কেননা পূর্ব থেকেই মুসলমানগণ পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছিল এবং ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মুসলমানদের ভূমিকার প্রেক্ষিতে আইনসভায় অধিক সংখ্যক আসন দাবি করছিল। কারণ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ায় মুসলমানগণ হতাশায় নিমজ্জিত হয়। ফলে মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি গৃহীত হয়।
২. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সম্প্রসারণ
মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ সম্প্রসারিত হয়। যেমন কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে গভর্নর জেনারেল ও তাঁর শাসন পরিষদের ৭ জন সদস্য ছাড়াও অতিরিক্ত ৬০ জন সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে, আইন পরিষদে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়।
৩. প্রাদেশিক আইন পরিষদের সম্প্রসারণ
একইভাবে এ আইনে প্রাদেশিক আইন পরিষদগুলোর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। অপেক্ষাকৃত বড় বড় প্রদেশের আইন পরিষদগুলোতে সর্বাধিক ৫০ জন এবং ছোট ছোট প্রদেশগুলোতে সর্বাধিক ৩০ জন সদস্য রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
৪. বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি
৯০৯ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনেই সর্বপ্রথম প্রাদেশিক আইন পরিষদগুলোতে বেসরকারি সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধিপূর্বক সরকারি সদস্যসংখ্যা লোপ করা হয়।
৫. ভারতীয় আইন পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি
১৯০৯ সালের সংস্কার আইনে আইন পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আইন পরিষদ আইন প্রণয়নের প্রস্তাব সরকারের নিকট পাঠাতে পারে। এছাড়া বাজেট ও জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য প্রস্তাব পাঠাতে পারে।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন সংক্ষেপে আলোচনা কর |
৬. শাসন পরিষদে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তি
১৯০৯ সালের মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তি। উল্লেখ্য যে, মি. সিং সর্বপ্রথম গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন।
৭. নির্বাচন পদ্ধতি গৃহীত
এ আইনেই সর্বপ্রথম নির্বাচন পদ্ধতি গৃহীত হয়। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যগণ নির্বাচনের মাধ্যমে স্বপদে দায়িত্ব পালন করেন।
৮. অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচন অনুপস্থিত
এ আইনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এতে নির্বাচন ব্যবস্থা অঞ্চলভিত্তিক করা হয়নি। মূলত স্থানীয় পরিষদ, ভূস্বামী, বণিক সমিতি, শিক্ষিত শ্রেণি ইত্যাদি নিয়ে নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয়।