দেশপ্রেম কি বা কাকে বলে?
দেশপ্রেমের ধারণা অনেক প্রাচীন। তবে এ ধারণাটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় আধুনিক ইউরোপে। মধ্যযুগে ইউরোপে রাজানুগত্য বা রাজার প্রতি ভালোবাসা ছিল। এ অবস্থার বিপরীতে দেশপ্রেম বা দেশানুগত্য ধারণাটি জন্মলাভ করেছে। দেশপ্রেম শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Patriotism’। ইংরেজিতে এ শব্দটি সম্পর্কে যে ধারণা দেওয়া হয় তা হলো, দেশকে প্রবলভাবে সমর্থন করা এবং দেশকে রক্ষা করতে শত্রু বা অনিষ্টকারীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে প্রস্তুত থাকা। বর্তমানে দেশের প্রচলিত আইন-কানুন মেনে চলা, দেশীয় পণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া, জাতীয় সম্পদের সুরক্ষা ও অপচয় রোধ, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ইত্যাদিও দেশপ্রেমের অন্তর্ভুক্ত বিষয় বলে বিবেচিত।
হেনরি জর্জ লিডেল এবং রবার্ট স্কট (Henry George Liddell & Robert Scott) দেশপ্রেমের ধারণা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘দেশাত্মবোধ হলো প্রত্যেকের মাতৃভূমির সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয় যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে।’ মাতৃভূমির প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম। এটি নাগরিকের এক পবিত্র অনুভূতি। দেশের মাটি, সম্পদ, পরিবেশ ও প্রতিবেশ, ভাষা ও সংস্কৃতি আর দেশবাসীর প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের সাথে একাত্মতা বোধ করা ইত্যাদি দেশপ্রেমের অংশ। সাধারণ মানবিক গুণ যেমন সততা, দয়া, সরলতা এসব কিছুর চেয়ে মানুষ দেশপ্রেমকে বড় করে দেখে।
জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো |
বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বে একটি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা অনেকাংশে নির্ভর করে জাতির দেশপ্রেমের ওপর। নাগরিক এবং রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনগুলো যদি দেশপ্রেমকে অগ্রাধিকার দেয় তবেই দেশের উন্নয়ন হবে। দেশপ্রেমের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে জাতীয় ঐক্য। যে দেশগুলো উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের উন্নয়নে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে দেশপ্রেম। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নাগরিক কখনও কর ফাঁকি দেবে না, দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করবে না বা জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট করবে না।
একজন মার্কিন গবেষক দেশপ্রেম সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে এ বিষয়ে কয়েকটি ধারণা দিয়েছিলেন। সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. দেশপ্রেম মানে আমাদের দেশ অন্য দেশের চেয়ে ভালো তা মনে করা নয়; বরং আমরা এ রাষ্ট্রের নাগরিক এটি মনে করার মধ্যেই গর্ববোধ করা।
২. সমাজের এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজ করতে দেশপ্রেম শক্তি যোগায়।
৩. দেশপ্রেম মানুষকে কোনো স্বার্থের জন্য নয়, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে শেখায়।
৪. দেশপ্রেম অন্যের বিপদকে নিজের মনে করতে শেখায়।
৫. স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র কত মূল্যের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে তা বুঝতে শেখায় এবং জীবন দিয়ে হলেও তা রক্ষা করতে। উদ্বুদ্ধ করে।
আলোচনার শেষে আমরা বলতে পারি, দেশপ্রেম হলো একটি মানসিক ও বিমূর্ত ধারণা। দেশপ্রেম জাতি, জাতীয়তা ও রাষ্ট্র গঠন এবং রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখার মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করে।