ই গভর্নেন্স এর সুবিধা
আধুনিক কল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সদা সচেষ্ট থাকে। এ জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া উন্নয়নের জন্য সরকার ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগকে সহজতর করা প্রয়োজন। ই-গভর্নেন্স এ ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। ই গভর্নেন্সের ফলে সরকারের কাজের গতি বাড়ে ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পায়। অবাধ তথ্যপ্রবাহ, স্বচ্ছতা এবং সরকার ও প্রশাসনের জবাবদিহিতা, নিশ্চিত করা সহজ হয়। ই-গভর্নেন্স সরকারি সেবার মান উন্নত করে এবং সেবার খরচ কমায়। বর্তমানে উন্নত দেশের সরকারি সেবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ই-গভর্নেন্স দ্বারা পরিচালিত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ই-গভর্নেন্সের প্রসার দিনে দিনে বাড়ছে। নিম্নে ই গভর্নেন্স এর সুবিধা গুলো আলোচনা করা হলো-
১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
সরকারের সব নীতিমালা, গেজেট, প্রস্তাবিত নীতিমালা বা আইনের খসড়া, পরিকল্পনা, বাজেট প্রভৃতি অনলাইনে সাধারণ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে প্রয়োজনে নাগরিকরা তাদের মতামত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতে পারবে। ফলে সরকারের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ হবে।
২. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস
আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতামুক্ত দক্ষ প্রশাসন নিশ্চিত করা সহজ হবে। কারণ কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের কারণে প্রশাসন হয়ে উঠবে গতিশীল। সরকারি কার্যক্রম বিষয়ে দ্রুত তথ্য পাওয়া বা যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। ফলে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমবে।
আরও দেখুন:
ই গভর্নেন্স কি | ই গভর্নেন্স কাকে বলে | ই-গভর্নেন্স বলতে কি বুঝায়
ই গভর্নেন্স এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর।
ই গভর্নেন্স ও সুশাসন – পরস্পর কতটা সম্পর্কযুক্ত?
৩. দুর্নীতি রোধ
অনলাইনে টেন্ডার, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি প্রকাশ করার ফলে অনিয়ম, সন্ত্রাসী কার্যক্রম কমে যাবে। সবকিছু অটোমেশনের মাধ্যমে হওয়ায় দুর্নীতির সুযোগ অনেকটাই কমে যাবে।
৪. ই-পুলিশিং ব্যবস্থা
ই-পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হলে প্রতিটি পুলিশ থানাকে একটি সমন্বিত নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এতে করে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিং করা সহজ হবে। জিডি ও এজাহার এন্ট্রি, মামলা নিষ্পত্তির তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকবে যাতে করে আদালত বা অন্য কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় চাইলে মামলা সংক্রান্ত তথ্য পাবেন। এতে অভিযোগ ও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সহজ হবে।
৫. ই-হেলথ
ই-হেলথ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে মানুষ প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকেও দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা বা পরামর্শ পেতে পারবে।
৬. ই-লার্নিং
ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে পড়াশোনা ও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা যায়। শিক্ষার প্রসারে এটি ব্যাপক অবদান রাখছে।
৭. ই-কমার্স
ই-কমার্স ও এম কমার্সের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শুরু করে স্টকমার্কেটের শেয়ার পর্যন্ত বহুবিধ পণ্য ও সেবা ক্রয় করা সম্ভব হয়।
৮. অনলাইন ব্যাংকিং
অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নাগরিকরা ২৪ ঘণ্টা ই-ব্যাংকিং সেবা পেতে পারেন। এছাড়া এখন অনেক ধরনের সরকারি কর, ফি ও পরিসেবার বিল অনলাইনে পরিশোধ করা যায়।
৯. তথ্যভাণ্ডার
ন্যাশনাল ডেটাবেজ তৈরি করা সম্ভব হলে এতে প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিচিতি ও মানবসম্পদ বিষয়ক তথ্য স্থান পাবে। ফলে এ ডেটাবেজ একই সাথে নাগরিক পরিচয়পত্র সনাক্তকরণের মাধ্যম ও জাতীয় মানবসম্পদ সংক্রান্ত তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করবে।
১০. ই-রেজিস্ট্রেশন
নাগরিকরা খুব সহজেই অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন, কর বিবরণী জমা, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন ও বিভিন্ন সরকারি ফরম খুব সহজেই পূরণ করতে পারবে।
১১. ইন্টারনেট পোর্টাল সুবিধা
বাংলাদেশ সরকার ই-গভর্নেন্সের আওতায় একটি ইন্টারনেট পোর্টাল চালু করেছে। এর ফলে একই জায়গায় অবস্থান করে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহ ছাড়াও ইলেক্ট্রনিক শেয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট, বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ঘোষণা, আলোচনা, নিউজ সার্ভিস, ওয়েব মেইল চেকিং ইত্যাদি সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে সরকারি কর্মকর্তারা একটি জায়গায় থেকেই অনেক সেবা এক সঙ্গে গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছেন।
১২. সর্বজনীন তথ্য প্রবাহ
জনগণ অফিসে অফিসে না গিয়ে ঘরে বসেই কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে অনলাইনে অনেক কাজ করতে পারবে। খুব সহজেই যেকোনো প্রয়োজনীয় তথ্য, নথি এবং হিসাব বিনিময় ও সংরক্ষণ করতে পারবে। নাগরিকরা অনলাইনে সহজে তাদের মতামত দিতে পারবে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পক্ষেও ঘরে বসে বিভিন্ন রকম প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা ও সরকারি সেবা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
অর্থাৎ ই-গভর্নেন্স শুধু ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি বা উপরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত বিষয় নয়, শাসনব্যবস্থার সংস্কার সাধনের একটি বড় মাধ্যমও। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা, বাণিজ্য, যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রের গন্ডী ছাড়িয়ে সুশাসনের ক্ষেত্রেও বড় অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। ই-গভর্নেন্স চালু করার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা রাষ্ট্র পরিচালকদের গোচরীভূত করার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা ই গভর্নেন্স এর সুবিধা গুলো সম্পর্কে জানতে পারলেন। লেখাটি থেকে উপকৃত হলে অবশ্যই অন্যদের সাথেও শেয়ার করবেন।