Home » ই গভর্নেন্স ও সুশাসন – পরস্পর কতটা সম্পর্কযুক্ত?
ই গভর্নেন্স ও সুশাসন

ই গভর্নেন্স ও সুশাসন – পরস্পর কতটা সম্পর্কযুক্ত?

by TRI

ই গভর্নেন্স ও সুশাসন এর পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই নিবিড়। আইনের শাসন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য সমানাধিকার, জনগণের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা, স্বাধীন বিচার বিভাগ, দক্ষ প্রশাসনব্যবস্থা, জনগণের অংশগ্রহণ, তথ্যের অবাধ প্রবাহ, জবাবদিহিতা প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে সুশাসন। এ সুশাসন বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো ই-গভর্নেন্স।

ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি সেবা এবং নাগরিকদের দাবি ও মতামত গ্রহণ ই-গভর্নেন্সেরই একটি অংশ। এ প্রক্রিয়া আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এবং তা সরকারের কর্মসম্পাদনে ব্যাপক পরিবর্তন ও সংস্কার আনয়নে সক্ষম। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ই-গভর্নেন্স যেসব ভূমিকা পালন করতে পারে সেগুলো হলো- জনগণকে প্রদত্ত সেবার মান উন্নয়ন, সরকারি দপ্তরগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, আইনের প্রয়োগ শক্তিশালীকরণ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসমূহে নাগরিক অগ্রাধিকার বৃদ্ধি করা, বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, জনজীবনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি।

আরও দেখুন:   ই গভর্নেন্স কি | ই গভর্নেন্স কাকে বলে | ই-গভর্নেন্স বলতে কি বুঝায়

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, পূর্ণাঙ্গভাবে ই-গভর্নেন্স চালু হলে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিনির্ভর হবে। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকদের কম্পিউটারাইজড জাতীয় পরিচয় পত্রের কথা বলা যায়। প্রতিটি জাতীয় পরিচয়পত্রের রয়েছে একটি পৃথক মৌলিক আইডি। জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিভিতে যদি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি হয় এবং সেই ডেটাবেজে নাগরিক সম্পর্কিত সব তথ্য থাকে তবে নাগরিকের জীবন অনেক সহজ হবে। প্রতিটি জাতীয় পরিচয়পত্রের আইডি নম্বরটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যভান্ডারের বিশেষ পরিচিতি নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। প্রতিটি ব্যক্তি তার নাগরিক ও সামাজিক জীবনে যেসব ভূমিকা পালন করবে তার তথ্য ঐ তথ্যভান্ডারে সঞ্চিত হবে। নাগরিক ব্যাংক ঋণ নিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ সম্পর্কিত তথ্য অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় ডেটাবেজে যুক্ত করবে। নাগরিক যদি আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করে তবে পুলিশ প্রশাসন সে সম্পর্কিত তথ্য – তথ্যভান্ডারে তুলে দেবে। এমনিভাবে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন, বিয়ে, সন্তান, মোবাইল নম্বর, জমি, গাড়িসহ সম্পদের মালিকানা, করের হিসাব এ ধরনের সব তথ্য হালনাগাদ থাকলে নাগরিককে সেবা পেতে সাধারণত যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয় তার মাত্রা কমে যাবে। প্রশাসন পরিচালনার জন্যও এটি সুবিধাজনক হবে। এ ধরনের একটি ডেটাবেজ অপরাধের মাত্রা কমাতে পারে।

আরও দেখুন:   ই গভর্নেন্স এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর।

অন্যদিকে নাগরিক যদি রাষ্ট্রীয় সেবাসমূহ অনলাইনের মাধ্যমে পায় তবে প্রশাসনিক দুর্নীতি হ্রাস পাবে, কাজকর্মের গতি বাড়বে এবং দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি অর্থেরও সাশ্রয় হবে। নাগরিকদের স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি তথ্যভাণ্ডার থাকলে সামাজিক সুরক্ষার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ যেমন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সাহায্য প্রদান, গরিব মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান প্রভৃতি কাজও সহজ হবে। এসব সেবা পাওয়ার জন্য নাগরিকদের প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। তবে এক্ষেত্রে নাগরিকের তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্ত।

ই গভর্নেন্স ও সুশাসনের ছক

এ ছকটি নমুনা হিসেবে দেওয়া হলো। ই-গভর্নেন্সের সাহায্যে মূলত নাগরিক সেবাসমূহ সহজে নাগরিকের কাছে পৌছানো যাবে। তবে এর মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অনেকাংশেই নির্ভর করবে নাগরিকদের নিজেদের ওপর। নাগরিক যদি তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে তবে ই-গভর্নেন্স সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারবে না।

Related Posts