Home » গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব বর্ণনা
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব বর্ণনা

by TRI

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব – গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কেন গুরুত্বপূর্ণ তা নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হবে।

রাষ্ট্র দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্যের জন্যে তিনটি শর্তের উল্লেখ করেছিলেন। শর্তগুলো হলো-

১ . গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে গ্রহণ করার ও সামর্থ দেওয়ার ইচ্ছা জনগণের থাকা প্রয়োজন।

২. ব্যক্তিগত অধিকার সংরক্ষণের জন্য জনগণকে সদা-সতর্ক থাকতে হবে।

৩. নিজ নিজ নাগরিক কর্তব্য পালন এবং অধিকার রক্ষা করার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার ইচ্ছা ও সামর্থ্য জনগণের থাকতে হবে।

আরও দেখুন:   গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কি | গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপাদান গুলো কি কি

স্টুয়ার্ট মিল প্রদত্ত প্রথম শর্তটি ব্যাখ্যা করলে প্রতীয়মান হয় যে, জনগণের ওপর গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে। বস্তুত জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা ও ভাবধারা যতই বিস্তার লাভ করবে গণতন্ত্র ততই সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবে। অর্থাৎ এককথায় বলা যায়, গণতন্ত্রের সফলতা নির্ভর করে গণতান্ত্রিক চেতনা বা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর। গণতান্ত্রিক মল্যবোধ গণতন্ত্রকে সফলতা দান করে এবং নাগরিকের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায় ও নাগরিকদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শেখায়। পাশাপাশি নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি যে সমস্যার মুখোমুখি হবে তার সমাধানের পথও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দেখিয়ে দেয়। ব্যক্তির সহনশীল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাসের জন্য যে সুষ্ঠু ও সামাজিক পরিবেশের প্রয়োজন তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার মধ্য দিয়ে অর্জিত হতে পারে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো-

. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা দ্বারা দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে যারাই শাসক হিসেবে আবির্ভূত হোক না কেন প্রত্যেকেই নাগরিক ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করবে।

২. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চার ফলে নাগরিক অধিকারসমূহ সুরক্ষিত হয়। নাগরিকের সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অন্যান্য অধিকারগুলো সংরক্ষণে ব্যক্তি ও রাষ্ট্র উভয়েই গুরুত্ব দেয়।

৩. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নাগরিকের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে। রাষ্ট্রীয় কাজে সকল নাগরিকের সমঅংশগ্রহণের সুযোগ থাকায় প্রত্যেকে এটি ভাবতে শিখে যে, রাষ্ট্রীয় বিষয়ে তার ভূমিকা রয়েছে। ফলে নাগরিকের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়।

৪. সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা প্রয়োজন। জনগণের সন্তুষ্টির ওপর সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। জনগণের আস্থা ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সরকার সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে।

৫. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা দ্বারা সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে প্রত্যেকেই রাষ্ট্রের কাজে সমভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। ভোটাধিকার, নির্বাচনে প্রার্থিতার অধিকার, সরকারি কাজের সমালোচনার অধিকার, আন্দোলন-বিক্ষোভ, সভা-সমিতি প্রভৃতির অধিকার সকল নাগরিক সমভাবে ভোগ করার সুযোগ লাভ করে।

৬. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা দ্বারা সকলের মধ্যে জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। নাগরিকদের মধ্যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতের ভিন্নতা থাকলেও জাতীয় বিষয়ে একমত পোষণ করে। ফলে রাষ্ট্রীয় কল্যাণের পথ সুগম হয়।

৭. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা দ্বারা শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অনুযায়ী শাসক নিজেকে শাসনকারী মনে করে না বরং নাগরিকদের সেবক মনে করে। এর মাধ্যমে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

৮. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা দ্বারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যে কোনো রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

৯. গণতান্ত্রিক মল্যবোধের চর্চা দ্বারা রাজনৈতিক সহনশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। সহনশীলতা বলতে বোঝায় সহ্য করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা। নিজের ইচ্ছার বিপরীত বা অন্যের পৃথক মতকে সহ্য করা বা গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতাই সহনশীলতা। সহনশীলতার দ্বারা রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

১০. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা দ্বারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়। দুর্নীতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

১১. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা দ্বারা রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একদল অপর দলের মতের বিরোধিতা করতে পারে। তবে সে বিরোধিতায় সৌজন্যবোধ রক্ষা করা হয়।

১২. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হলে নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য স্বাধীনতা রক্ষা করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্যতম একটি উপাদান।

Related Posts