শিশু শ্রম কি
বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা লাভের অধিকার এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অধিকার থেকে বঞ্চিত যে কোনো শিশুই শিশু শ্রমিক। আয় করার জন্য কাজ করতে গিয়ে শিশুরা তাদের বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী বিপদ, ঝুঁকি, শোষণ, বঞ্চনা ও আইনের জটিলতার সম্মুখীন হলে সেই কাজকে বলা হয় শিশু শ্রম ।
Social Work Dictionary (১৯৯৫- NASW)-র সংজ্ঞানুযায়ী “Child labour is paid or forced employment of children who are younger than a legally defined age.”
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ব্যাখ্যানুসারে, “যখন কোন শ্রম বা কর্ম পরিবেশ শিশুর স্বাস্থ্য বা দৈহিক, মানবিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক ও ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায় তখন তা শিশু শ্রম হিসেবে বিবেচিত হবে।”
আরও পড়ুন: মজুরি কাকে বলে? আর্থিক মজুরি ও প্রকৃত মজুরির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর
ILO কর্তৃক প্রকাশিত ১৯৯৯ সালে এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে ১৫ কোটি ৩০ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী দেশের মোট শ্রমশক্তির মধ্যে শতকরা ১২ ভাগ শিশু শ্রমিক।
জাতিসংঘ শিশু সনদে বর্ণিত সংজ্ঞানুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সকলেই শিশু। সে হিসাবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগই শিশু।
সুতরাং শিশু শ্রম বলতে শিল্প-কারখানা এবং শিল্প-কারখানার বাইরে বিভিন্ন পেশায় যদি শিশুরা নিয়োজিত থাকার ফলে শিশুদের দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করে, শিশু স্বাস্থ্যও বিকাশের জন্য ক্ষতিকর, সেসব পেশায় শিশুদের নিয়োজিত থাকাকে বলে শিশু । সুতরাং শিশুশ্রম হলো শিশুদের এমন কাজে নিয়োগ করা যা তাদের স্বাস্থ্য ও শারীরিক বিকাশের জন্য বিপজ্জনক।
বাংলাদেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধের উপায়
শিশুদের দিয়ে কাজ করানো, রোজগারে বাধ্য করা শুধু অমানবিকই নয় বরং অনৈতিক ও বেআইনিও বটে। তাই শিশু শ্রম বন্ধ হওয়া দারকার। শিশুশ্রম বন্ধ করার জন্য বিশ্বের উন্নত দেশসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে শিশুশ্রম বিরোধী আইন রয়েছে। আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সরকার নানামুখী পদক্ষেপও গ্রহণ করছে। কিন্তু তারপরেও উন্নত, অনুন্নত দেশসহ বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত শিশুশ্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের আইন ও পদক্ষেপ যত বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে শিশু শ্রমও বাড়ছে। বাংলাদেশের মত দারিদ্র্যপীড়িত ও উন্নয়নশীল দেশে শিশুশ্রম সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক কর্মসূচি/পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। না হলে শিশুশ্রম আরও বাড়বে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সঙ্কটাপন্ন করে তুলবে। বাংলাদেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা নিচে উল্লেখ করা হলো :
১। শিশু কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ ।
২। আইনগত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। ৩। পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রবর্তন।
৪। শ্রম ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন।
৫। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন।
উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার পাশাপাশি নিম্নোক্ত কর্মসূচিগুলো গ্রহণ করলে বাংলাদেশে শিশু শ্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব
হবে।
১। ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ ।
২। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ ।
৩। প্রচলিত আইনের কার্যকর সংশোধন এবং প্রয়োজন হলে নতুন আইন প্ৰণয়ন ।
৪। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন।
৫। সকল শিশুকে নিবন্ধীকরণ করা।
৬। দারিদ্র্য দূর করার জন্য দরিদ্র পরিবারগুলোর আয় বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত প্রকল্প গ্রহণ ।
৭। শিশু-কিশোরদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিকরণ।
৮। নিয়োগকর্তাদের শিশু আইন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধকরণ।