Home » বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ আলোচনা কর
বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ

বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ আলোচনা কর

by TRI

বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত সবাই অত্যধিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দরুণ অতিষ্ঠ। এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সমস্যাটি কিভাবে সৃষ্টি হয় অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ কি কি সেসব বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলে তুলে ধরবো।

আরও পড়ুন:   মুদ্রাস্ফীতি কি বা কাকে বলে ? বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণ গুলো কি কি ?

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ

বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ হলেও এদেশে খাদ্য ঘাটতি বহুকাল আগ থেকেই। অন্যদিকে বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। ফলে দেশের মানুষের বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় যেমন : চাল, ডাল, আটা, তেল ইত্যাদি দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা পূরণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর এত বেশি পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করতে যেয়ে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে এবং দিনে দিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনও ৩৮% লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্যের যোগান দেয়া এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা জনগণের যেমন প্রাণের দাবি ঠিক তেমনি সরকারের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । নিচে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ গুলো চিহ্নিত করা হলো :

১। চাহিদার অস্বাভাবিকতা এবং যোগানের অপ্রতুলতা

অর্থনীতির ভাষায় চাহিদার তুলনায় যোগান অপ্রতুল হলে নির্দিষ্ট পণ্যাদির দাম বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী, বাংলাদেশেও বর্তমান চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে ভোগ্য দ্রব্যাদির দাম নিত্য নতুন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

২। ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট

সারা পৃথিবীতে যে কোন দ্রব্যাদির দাম নির্ধারণ পৃথক হলেও তাদের কাজের ধরন প্রায় একই। ভোগ্যসামগ্রীর মধ্যে দেশে উৎপাদিত কৃষিসামগ্রীর বাজার তারা নিয়ন্ত্রিত করছে। আর নব্য মধ্যসত্ত্বভোগীর কারণে পণ্যের উৎপাদিত দাম তথা প্রকৃত দাম থেকে যেমন— কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে ক্রেতারা চড়া দামে পণ্য কিনে তার মাশুল দিচ্ছে।

৩। অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং চাষাবাদের জমির অপ্রতুলতা

বাংলাদেশে অপরিকল্পিত জনসংখ্যাবৃদ্ধির বিপরীতে চাষাবাদের জমি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে দিন দিন চাষাবাদের জমি কমে যাচ্ছে এবং উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে। যদিও জনসংখ্যাকে অনেক সমস্যা হিসেবে দেখতে নারাজ তথাপি জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করা এখনও সম্ভব হয় নি

৪। জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এর নেতিবাচক প্রভাবে যে সকল দেশ শিকার হয়েছে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। উল্লেখ্য প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততার কারণে এদেশের অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে ভোগ্যপণ্যের যোগান কমে যায় এবং দাম বৃদ্ধি পায় ।

৫। বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি

বাংলাদেশের পণ্যের বাজারে বিশ্ববাজারের প্রভাব পরিলক্ষিত। উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট প্রভাব বিস্তার করে। বর্তমান সময়েও বাংলাদেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে ভোক্তা শ্রেণির চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে এক শ্রেণি অর্থের পাহাড় গড়ে তুলছে।

৬। অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি

মুদ্রার মান অবমূল্যায়নের ফলশ্রুতিতে যে কোন দেশের অর্থনীতি কাঠামো ভেঙ্গে যাওয়া স্বাভাবিক । বাংলাদেশে চলমান বিশ্ব মন্দার প্রভাব এবং অন্যান্য কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির প্রভাব ভোগ্যপণ্যসহ পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

৭। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা

বলার অপেক্ষা রাখে না স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ দ্বি-দলীয় ধারার এক রাজনৈতিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ। আর এই রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরই দেশের স্বার্থকে অবহেলা করে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় যে কোন ইস্যুতে মতানৈক্যের পরিবর্তে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ঘটনা ঘটছে। আর এর প্রভাব ভোগ্যসামগ্রীর বাজার মূল্যের উপর পড়ছে।

৮। মধ্যসত্ত্বভোগীর দৌরাত্ম্য

বর্তমান সময়ে একটি নতুন ধারায় সামন্ত প্রভু সৃষ্টি হয়েছে। আর এ সমস্ত প্রভুরা আদিম সামন্ত প্রভুর ভূমিকায় এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনতে পারে নি। তাই বিশ্ববাজারের পণ্যের মূল্যের দাম বৃদ্ধি ও হ্রাসের প্রভাব আমাদের বাজারেও পড়ে।

আরও পড়ুন:   মুদ্রাস্ফীতির ফলাফল আলোচনা কর

৯। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা

যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে পরিবহন খরচ হ্রাস পায়। ফলে ভোগ্যপণ্য পরিবহন খরচ হ্রাস পেলে তার দামও স্বাভাবিক থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিকতার ছোঁয়া পেলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। ফলে এর সুফল এখনও দেশবাসী পাচ্ছে না।

১০। বাজার মনিটরিংয়ের অভাব

পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে হলে বাজার মনিটরিং করা সরকার কর্তৃক খুবই জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশে বাজার মনিটরিংয়ের উপরে কোন গুরুত্বারোপ করা হয় না। নামমাত্র কোন সময় করলেও তাও আবার দুর্নীতির কোষে প্রশ্নবিদ্ধ ।

পরিশেষে বলা যায়, সারা বছরই আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও একটা বিশেষ সময় তা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। যেমন : রমজানের আগমনী বার্তায় পণ্য মূল্য দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। তবে পণ্যের যোগান নয়, বরং অসাধু ব্যবসায়ী, মজুদদারি ও নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থাই এই মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

Related Posts