রাষ্ট্রের উপাদান
রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও রাষ্ট্রের উপাদান বা বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে মোটামুটিভাবে সবাই একমত। রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি বিচার–বিশ্লেষণ করে এর উপাদানসমূহকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা–
ক. মুখ্য উপাদান (Vital Elements) ও খ. গৌণ উপাদান (Auxiliary Elements)।
ক. মুখ্য উপাদান (Vital Elements)
রাষ্ট্র গঠনের জন্য মুখ্য বা মৌলিক উপাদান চারটি। এ সকল উপাদানের যে কোনো একটির অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। মুখ্য উপাদানসমূহ নিম্নরূপ:
১. জনসমষ্টি (Population)
২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড (Definite Territory)
৩. সরকার (Government)
৪. সার্বভৌমত্ব (Sovereignty)
নিয়ে এ উপাদানগুলো সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচনা করা হলো।
১.জনসমষ্টি (Population)
জনসমষ্টি হলো রাষ্ট্রের প্রাথমিক উপাদান বা বৈশিষ্ট্য। জনসমষ্টিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র গঠিত হয়। জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্রের কথা কল্পনাও করা যায় না। তবে জনসমষ্টিকে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। কোনো জনমানবহীন মরুভূমি বা অরণ্য রাষ্ট্র বলে বিবেচিত হতে পারে না। প্রফেসর লীকক (Leacock) এ প্রসঙ্গে বলেন, “It goes without saying that an uninhabited portion of the earth, taken itself cannot form the state.” বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী কখনো রাষ্ট্র গঠন করতে পারে না। যেমন– ভাসমান বা যাযাবর জনগোষ্ঠী বহু যুগ পর্যন্ত রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি। তবে জনসমষ্টির কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। রাষ্ট্রভেদে জনসমষ্টি কম বা বেশি দেখা যায়। বর্তমান বিশ্বে সানমেরিনো, ভ্যাটিকান সিটি, মোনাকো, নাউরুর মতো রাষ্ট্রগুলোতে জনসংখ্যা ৩০ হাজারের নিচে।
অপরদিকে ভারত, চীনের জনসংখ্যা ১০০ কোটির ঊর্ধ্বে। তবে রাষ্ট্রের আয়তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জনসংখ্যার পরিমাণ ঠিক রাখা উচিত। তবে রাষ্ট্র গঠনের জন্য জনসংখ্যার পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও কাম্য জনসংখ্যাই সব রাষ্ট্রের আর্থিক উন্নয়ন ও সুশাসনের মাপকাঠির মানদত্ত হতে পারে। কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বে জনসংখ্যা সমস্যার বিশ্লেষণে জনসংখ্যাকে দেশের সমস্ত সম্পদের সাথে তুলনা করা হয়। কাম্য জনসংখ্যার তুলনায় কোনো দেশের জনসংখ্যা বেশিও হলে সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে দেশে বেকার সমস্যা দেখা দেয়। যেমন– বাংলাদেশের জনসংখ্যা কাম্য জনসংখ্যা অপেক্ষা অনেক বেশি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল (Aristotle) যথার্থই বলেছেন, “রাষ্ট্রের জনসংখ্যা এত কম হবে না যাতে রাষ্ট্রীয় কাজে লোকবলের অভাব ঘটে। আবার এত বেশি হবে না রাষ্ট্র তাদের ভরণ–পোষণ করতে অপারগ হয়।” (The number of population should be neither too small nor too large, it should be large enough to be self-sufficient and small enough to be well governed.)
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত সঠিক মতবাদ
২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড (Definite Territory)
রাষ্ট্র গঠনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড। নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাষ্ট্রের জনসমষ্টিকে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। ভূখণ্ড বলতে কেবল ভূমি বা জলাশয়কে বোঝায় না, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বলতে রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট জলভূমি, স্থলভূমি, রাষ্ট্রীয় সীমানায় প্রবাহিত সমুদ্র মহাসমুদ্র, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জলসীমা এবং সেই সাথে স্থল ও জলভাগের উপরিস্থিত আকাশ সীমাকে বোঝায়। (The word territory covers the surface of the land within well-defined boundaries, the sub-soil, lakes and rivers and also air space above the land.) জনসমষ্টি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের অধিকারী না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে স্থায়ীভাবে বসবাস করার পূর্বেও সংঘবদ্ধ ছিল। কিন্তু তারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকার কারণে রাষ্ট্র গঠন করতে সক্ষম হয়নি। প্রফেসর ব্লুন্টসলি (Bluntchli)-এর মতে, “As the state has its personal basis in the people. So it has its material basis in the land. The people do not become state until they have acquired territory,”
তবে জনসমষ্টির ন্যায় ভূখণ্ডের আয়তন সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। রাষ্ট্রের আয়তন ছোটও হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। যেমন– ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে মোনাকোর আয়তন মাত্র ১.৯৫ বর্গ কি. মি. কিন্তু রাশিয়ার আয়তন ১,৭০,৭৫,৪০০ বর্গ কি. মি.। রাশিয়ার মতো দেশ পৃথিবীর প্রায় এক–পঞ্চমাংশ জুড়ে রয়েছে। বৃহৎ রাষ্ট্রের তুলনায় ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অনেক কম। এ সকল রাষ্ট্র অতি সহজেই বড় রাষ্ট্রের আক্রমণের শিকার হতে পারে। অপরদিকে, বৃহৎ রাষ্ট্রের পক্ষে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। দার্শনিক রুশো (Rousseau) বলেন, “রাষ্ট্রের আয়তন যত ক্ষুদ্র হবে সে রাষ্ট্র তত শক্তিসম্পন্ন হবে।”
রাষ্ট্রের ভূখণ্ড অখণ্ড হতে পারে আবার খণ্ডিত হতে পারে। যেমন— বাংলাদেশ অখণ্ড ভূখণ্ডের অধিকারী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা ও হাওয়াই অঙ্গরাজ্য মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে। আবার ইন্দোনেশিয়া ছোট–বড় সব মিলিয়ে ১০,০০০ থেকে ১৪,০০০ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন না হয়ে সংযুক্ত হলে অনেক ভালো হয়।
৩. সরকার (Government)
রাষ্ট্র গঠনের তৃতীয় উপাদান হলো সরকার। রাষ্ট্র পরিচালনার ভার যাদের উপর ন্যস্ত থাকে, তাদেরকে সমষ্টিগতভাবে সরকার বলে। সরকার হলো এমন একটি সংগঠন যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ইচ্ছা, অনিচ্ছা প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়। সরকার ব্যতীত কোনো রাষ্ট্র গঠন করা যায় না। রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য সরকারের বিকল্প নেই। মূলত রাষ্ট্র একটি তত্ত্বগত ধারণা, সরকার হলো রাষ্ট্রের রূপকার। অধ্যাপক গেটেল (Gettel)- এর মতে, “সরকার হলো রাষ্ট্রের একটি সংস্থা বা যন্ত্র।” (Government is the organisation or machinery of the state). অধ্যাপক গার্নার (Garner) বলেন, “সরকার হলো একটি কার্যনির্বাহী মাধ্যম বা যন্ত্র যার মাধ্যমে সরকারের সাধারণ নীতি নির্ধারিত হয় এবং যার দ্বারা সাধারণ কাজ–কর্ম নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সাধারণ স্বার্থ সাধিত হয়।” (Government is the agency or machinery through which common policies are determined and by which common affairs are regulated and common interests promoted).
সংক্ষেপে সরকার বলতে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বোঝায়। ব্যাপক অর্থে সরকার গঠিত হয় সকল নাগরিকের সম্মতিক্রমে তাদের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার গঠন ও পরিবর্তন করে থাকে। সরকার তার তিনটি অঙ্গের মাধ্যমে যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে। এগুলো হলো— শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ। শাসন বিভাগের প্রধান কাজ হলো দেশ শাসন করা এবং আইন বলবৎ করা। আইন বিভাগের প্রধান কাজ হলো আইন প্রণয়ন করা। আর বিচার বিভাগের প্রধান কাজ হলো আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। বিভিন্ন রাষ্ট্রে সরকারের রূপ ও প্রকৃতি বিভিন্ন প্রকার। যেমন— রাজতান্ত্রিক সরকার, প্রজাতান্ত্রিক সরকার, সংসদীয় সরকার, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার, গণতান্ত্রিক সরকার, একনায়কতান্ত্রিক সরকার ইত্যাদি। তবে সরকারের রূপ ও প্রকৃতি যাই হোক না কেন সরকার ব্যতীত রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। সরকারের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়। সরকার রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক স্বরূপ।
৪. সার্বভৌমত্ব (Sovereignty)
রাষ্ট্র গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ উপাদান হলো সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের চরম, চূড়ান্ত, অবাধ ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী না হলে কোনো দেশ রাষ্ট্র বলে বিবেচিত হয় না। সার্বভৌমত্ব অন্যান্য সামাজিক সংঘ ও প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রকে আলাদা করেছে। সরকার চির পরিবর্তনশীল। কিন্তু সার্বভৌম ক্ষমতার কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তাই জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সরকার থাকলেই তাকে রাষ্ট্র বলা যায় না। বরং সরকারের সার্বভৌম ক্ষমতা বিদ্যমান থাকলেই রাষ্ট্র বলে পরিগণিত হয়। সার্বভৌম ক্ষমতার সংস্পর্শে একটি জনসংগঠন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশগুলোতে জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সরকার রয়েছে কিন্তু সার্বভৌম ক্ষমতা নেই বলে সেগুলো রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত নয়। এ ক্ষমতা কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। তেমনি জাতিসংঘ (UNO), ওআইসি (OIC), কমনওয়েলথ (Common wealth) প্রভৃতি সংস্থাও রাষ্ট্র নয়। ব্লাকস্টোন (Blackstone)-এর মতে, “Sovereign power means the supreme, irresistable, absolute and uncontrolled authority.” সার্বভৌম ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে এবং রাষ্ট্র এর অধীনস্ত সকলকে আদেশ–নির্দেশ প্রদান করতে পারে।
আরও পড়ুন: প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার প্রকৃতি পরিধি ও বিষয়বস্তু
সার্বভৌমত্বের দুটি দিক রয়েছে। যথা– অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব ও বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের বলে রাষ্ট্র তার এলাকার ভিতর সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ও আনুগত্য লাভ করে। বাহ্যিক সার্বভৌমত্বের বলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র অন্য সকল রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকে। এ ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের প্রাণস্বরূপ। মানুষ যেমন তার প্রাণ হস্তান্তর করতে পারে না, তেমনি সার্বভৌম ক্ষমতাও হস্তান্তর করা যায় না, সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তর করলে রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটে।
সার্বভৌম ক্ষমতার অভাবে রাষ্ট্র জনপদ, উপনিবেশ বা অধীন রাজ্য বলে পরিগণিত হবে। যেমন– ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত ভারতের জনসমষ্টি, ভূখণ্ড ও সরকার ছিল, তথাপি ভারত রাষ্ট্র বলে পরিচিত হতো না। কেননা এর সার্বভৌম ক্ষমতা ছিল না। এটি ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। তেমনি ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি অর্জন করতে পারেনি। কেননা তখন বাংলাদেশের সার্বভৌম ক্ষমতা ছিল না। এটি ছিল পাকিস্তানের করতলগত। ১৯৭১ সালে সার্বভৌম ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন–সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
খ. গৌণ উপাদান (Auxiliary Elements)
রাষ্ট্র গঠনের মুখ্য চারটি উপাদানসমূহের যে কোনো একটির অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হয় না। উল্লিখিত চারটি উপাদান ছাড়াও আধুনিক রাষ্ট্রে আরও কতিপয় উপাদান বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ সকল উপাদান রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও দাবিকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এগুলো গৌণ উপাদান নামে পরিচিত। গৌণ উপাদানগুলো নিম্নরূপ:
১. স্থায়িত্ব (Permanence)
রাষ্ট্র একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। সরকারের পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয় না। রাষ্ট্রের রূপান্তর ঘটতে পারে। কিন্তু তা সহজে ধ্বংস হতে পারে না। অন্যান্য সংস্থা রাষ্ট্রের মতো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ১৯৬৭ সালের ৩০ মে সামরিক গভর্নর লে. ক. ওডুকো পূর্ব নাইজেরিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে বায়াফ্রা নামকরণ করেন এবং এ অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু তার স্বাধীনতা ঘোষণা স্থায়িত্ব অর্জন করতে পারেনি। ১৯৭০ সালে নাইজেরিয়ার ফেডারেল বাহিনী বায়ক্রো দখল করে নেয়।
২. স্বীকৃতি (Recognition)
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রাষ্ট্রের একটি ঐচ্ছিক বা গৌণ উপাদান হিসেবে গণ্য হয়। স্বাধীনতা লাভের পরপরই কোনো রাষ্ট্রকে জাতিসংঘসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন করতে হয়। জাতিসংঘ এবং বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলেই নবগঠিত রাষ্ট্রটি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অন্যান্য উপাদানের মতো তেমন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নয়। সমাজতান্ত্রিক চীন ১৯৪৯ সালে রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতির পূর্ব পর্যন্ত শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করেছে।
৩. সাম্য (Equality)
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে বিশ্বের সকল রাষ্ট্র সমান। কোনো রাষ্ট্র স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমান অধিকার ও মর্যাদার দাবিদার হয়। জাতিসংঘের মূলনীতিতে বলা হয়েছে– ‘জাতিসংঘ এর সকল সদস্যের সার্বভৌম ক্ষমতার স্বীকৃতি এবং সমমর্যাদার নীতিতে বিশ্বাসী।” জাতিসংঘে ছোট–বড় প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের একটি করে ভোট রয়েছে।
৪. পূর্ণ স্বাধীনতা
পূর্ণ স্বাধীনতা হলো রাষ্ট্রের অন্যতম গৌণ উপাদান। কোনো রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভের পর অন্য রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বাধীন থাকতে হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে কোনো রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং সন্ধি বা চুক্তি সম্পাদন করতে পারে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায় যে, রাষ্ট্র গঠনের মুখ্য উপাদানগুলোর পাশাপাশি গৌণ উপাদানগুলোর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। মুখ্য উপাদানগুলোর কোনো একটির অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব নয়। তবে সার্বভৌমত্ত্ব হলো রাষ্ট্রের স্বতন্ত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ উপাদান যা ব্যতীত কোনো দেশ রাষ্ট্র বলে বিবেচিত হতে পারে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেলিনেক (Jellinek) যথার্থই বলেছেন, “The soul element of the state is sovereignty which regarded as the life and soul of the state.”