Home » শিশু অধিকার গুলো কি কি? শিশু অধিকার রক্ষায় ইউনিসেফের ভূমিকা
শিশু অধিকার গুলো কি কি

শিশু অধিকার গুলো কি কি? শিশু অধিকার রক্ষায় ইউনিসেফের ভূমিকা

by TRI

 

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে উল্লেখিত শিশু অধিকার সমূহ

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে ৩টি পরিচ্ছেদে মোট ৫৪ টি ধারা রয়েছে। এ শিশু অধিকার সনদে যেসকল শিশু অধিকারের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে নিম্নলিখিত অধিকারগুলো উল্লেখযোগ্য।

  • প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকার ও বিকাশের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সর্বাধিক নিশ্চয়তা পাবার অধিকার;
  • জাতীয়তা, নাম এবং পারিবারিক সম্পর্কসহ আইন সম্মত পরিচিতি সংরক্ষণের ব্যাপারে শিশুর অধিকার;
  • শিশুর স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশের অধিকার;
  • শিশুর চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার;
  • শিশুদের সংঘবদ্ধ হবার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার;
  • কোন শিশুর নিজস্ব গোপনীয়তা, আবাস কিংবা পত্র যোগাযোগের উপর স্বেচ্ছাচারী অথবা বেআইনী হস্তক্ষেপ কিংবা আক্রমণের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার অধিকার;
  • যে শিশু স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ভিত্তিতে তার পারিবারিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত অথবা যে শিশুকে তার সর্বোত্তম স্বার্থে ঐ পরিবেশে থাকতে দেয়া যাবে না, সেই শিশু রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত বিশেষ সুরক্ষা ও সহায়তার অধিকারী;
  • পঙ্গু শিশুর রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষ যত্ন লাভের অধিকার;
  • শিশুর সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মানের স্বাস্থ্যলাভ এবং ব্যাধির চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের সুবিধা ভোগের অধিকার;
  • শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত জীবনমানের অধিকার;
  • শিশুর শিক্ষালাভের অধিকার;
  • প্রতিটি শিশুর অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি লাভের অধিকার;
  • শিশুর বিশ্রাম ও অবকাশ যাপন, বয়স অনুযায়ী উপযুক্ত খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক জীবন ও সুকুমার শিল্পে অবাধে অংশগ্রহণের অধিকার।

আরও পড়ুন:   সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র সম্পর্কে লিখ

শিশু অধিকার রক্ষায় ইউনিসেফের ভূমিকা

জাতিসংঘের অন্যতম বহুল পরিচিত সংস্থা জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। এর মূখ্য দায়িত্বই হচ্ছে বিশ্বের শিশুদের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ সাধন। এ তহবিল উন্নয়নশীল দেশসমূহের সুযোগ ও অধিকার বঞ্চিত শিশুদের সুষ্ঠু স্বাস্থ্য প্রযত্ন ও পুষ্টি, ব্যবহারিক শিক্ষা, বিশুদ্ধ পানীয় জল এবংঅন্যান্য মৌলিক সুবিধা লাভের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে থাকে। ইউনিসেফ স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পল্লীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও অন্যান্য গণমুখী সেবার জন্য উপকরণ যোগান দেয় এবং এ ধরনের সেবা চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় স্থানীয় লোকজনকে প্রশিক্ষণ দানে সাহায্য করে। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে ইউনিসেফ গ্রাম বা শহরবাসীদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে কমিউনিটি পর্যায়ে এ ধরনের প্রচেষ্টাকে সহায়তা দানের উপর ক্রমবর্ধমানভাবে দৃষ্টি দিয়ে আসছে।

শিশুদের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণা ইউনিসেফের প্রচেষ্টার জন্য কাঠামো তৈরি করেছে। সাধারণ পরিষদ ১৯৫৯ সালে সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণা গ্রহণ করে। বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার কোন কোন ধারা শিশুদের বেলায়ও প্রযোজ্য বলে সেগুলো এই ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ঘোষণায় আরো বলা হয় শিশু “জন্মের আগে ও পরে যথাযথ আইনগত আশ্রয়সহ তার বিশেষ সুরক্ষা ও যত্নের প্রয়োজন।”

ঘোষণার মূল কথা হচ্ছে, মানুষের যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা শিশুর প্রাপ্য। ঘোষণায় বর্ণিত অধিকার ও স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দান এবং সেগুলো মেনে চলার জোর চেষ্টা চালানোর জন্যে বাবা-মা, ব্যক্তিমানুষ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারসমূহের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণার নীতিমালার একটিতে বলা হয়েছে, শিশুরা বিশেষ সুরক্ষা ভোগ করবে এবং তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দিতে হবে যাতে তারা স্বাভাবিক ও সুস্থ উপায়ে এবং স্বাধীনতা ও মর্যাদার পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে। সাধারণ পরিষদ ১৯৭৯ সালকে আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ ঘোষণা করে। শিশুদের কল্যাণ বৃদ্ধির জন্য গৃহীত নিজেদের কর্মসূচি পর্যালোচনায় সকল দেশকে উৎসাহিত করাই ছিল এর লক্ষ্য।

শিশু অধিকার সনদের প্রস্তাবনা

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের প্রস্তাবনায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে।

  • পরিবার যেহেতু সমাজের প্রাথমিক সংগঠন এবং এর সকল সদস্য বিশেষ করে শিশুদের বিকাশ ও কল্যাণের স্বাভাবিক পরিবেশ, সেহেতু তাকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা এবং সহায়তা দিতে হবে যাতে সমাজ অভ্যন্তরে সে তার দায়িত্বসমূহ পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে।
  • শিশুর ব্যক্তিত্বের পূর্ণ ও সুষম বিকাশের স্বার্থে আনন্দ, ভালবাসা ও সমঝোতাপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশে তাকে বেড়ে উঠতে দিতে হবে।
  • সমাজে স্বকীয় জীবনযাপনের জন্যে শিশুকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে তুলতে হবে এবং জাতিসংঘ ঘোষণায় বর্ণিত আদর্শসমূহের আলোকে বিশেষভাবে শান্তি, মর্যাদা, সহনশীলতা, স্বাধীনতা, সমতা ও সংহতির চেতনায় তাকে গড়তে হবে।
  • শিশু অধিকার সম্পর্কে ১৯২৪ সালের জেনেভা ঘোষণা ও ১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর সাধারণ পরিষদে গৃহীত শিশু অধিকার ঘোষণায় শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্নের কথা বর্ণিত হয়েছে এবং বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায়, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালায় (বিশেষভাবে ২৩ ও ২৪ অনুচ্ছেদ), অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালায় (বিশেষভাবে ১০ অনুচ্ছেদ) এবং শিশু কল্যাণের কাজে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অপরাপর বিশেষ সংগঠনসমূহের বিধিবিধান ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্রে তা স্বীকৃতি রয়েছে।
  • জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালক প্রদান ও দত্তক গ্রহণের প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখসহ শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণ সম্পর্কিত সামাজিক আইনগত নীতিমালা সংক্রান্ত ঘোষণা, শিশু সংক্রান্ত বিচারকার্য পরিচালনার জন্যে জাতিসংঘের আদর্শ ন্যূনতম বিধিমালা (বেইজিং রুলস), এবং জরুরি অবস্থা ও সশস্ত্র সংঘাতকালীন মহিলা ও শিশুর নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘোষণার কথা এ সনদে উল্লেখ রয়েছে।
  • বিশ্বের সকল দেশেই এমন শিশুরা রয়েছে যারা বিশেষ দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে বাস করছে, সেই সকল শিশুর জন্যে বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।
  • শিশু সুরক্ষা ও তাদের সুষম বিকাশের স্বার্থে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের গুরুত্বের কথা জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ স্বীকার করে।
  • প্রতিটি দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে উল্লেখ রয়েছে।

জাতিসংঘ শিশুসনদে আরও বলা হয়েছে যে, শরীক রাষ্ট্রসমূহ তাদের নিজ নিজ আওতাধীন প্রতিটি শিশুর জন্যে এ সনদে নির্ধারিত অধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং এগুলোর নিশ্চয়তা বিধান করবে। এ ব্যাপারে শিশু অথবা তার পিতামাতা কিংবা আইনসম্মত অভিভাবকের ক্ষেত্রে গোত্র, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক ও অন্যান্য মত, জাতীয়-গোষ্ঠীগত-সামাজিক পরিচয়, বিত্ত, সামর্থ, জন্মসূত্র কিংবা কৌলীন্য, নির্বিশেষে কোন ধরনের বৈষম্য করা হবে না। পিতা, আইনসম্মত অভিভাবক কিংবা পরিবারের সদস্যদের সামাজিক অবস্থান, কার্যকলাপ, ব্যক্ত মতামত কিংবা বিশ্বাসের কারণে যে কোন ধরনের বৈষম্য অথবা শাস্তি থেকে শিশুরা নিরাপদ থাকবে; এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে শরীক রাষ্ট্রসমূহ যথাযথ কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শিশুর পিতামাতা, আইনসম্মত অভিভাবক কিংবা আইনত দায়িত্ব বর্তায় এমন কোন ব্যক্তির অধিকার ও কর্তব্য বিবেচনায় রেখে শিশুর কল্যাণার্থে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও যত্ন নিশ্চিত করতে শরীক রাষ্ট্রসমূহ যথাযথ আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেবে।

সমাজকল্যাণমূলক সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আইন-আদালত, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কিংবা আইনসভা –যেই হোক না কেন, শিশু-সংক্রান্ত তাদের যে কোনো কার্যক্রমের প্রধান বিবেচ্য হবে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ। শরীক রাষ্ট্রসমূহ শিশুপরিচর্যা ও সুরক্ষার জন্যে প্রতিষ্ঠান, সেবা ও সুবিধাদি নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য এবং কর্মচারীর সংখ্যা ও যোগ্যতা সেই সাথে পর্যাপ্ত তদারকীর ব্যবস্থা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মানের অনুরূপ হতে হবে।

এ সনদে স্বীকৃত অধিকারসমূহ শরীক রাষ্ট্রসমূহ প্রয়োজনীয় আইনগত, প্রশাসনিক ও অপরাপর সকল ব্যবস্থা নেবে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহের ক্ষেত্রে শরীক রাষ্ট্রগুলো প্রাপ্ত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং প্রয়োজনবোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামোর মধ্যে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো নেবে। এ সনদে স্বীকৃত শিশুর অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে শিশুর বিকাশযোগ্যতার সাথে সংগতিপূর্ণ যথাযথ নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদানের প্রশ্নে পিতামাতা বা স্থানীয় রীতি অনুযায়ী সম্প্রসারিত পরিবার বা সমাজ সদস্য আইনসম্মত অভিভাবক অথবা আইনানুগভাবে শিশু দায়িত্ব প্রাপ্ত অন্য কোন ব্যক্তির দায়িত্ব, অধিকার এবং কর্তব্যের প্রতি শরীক রাষ্ট্রসমূহ সম্মান দেখাবে।

Related Posts