সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র এর প্রস্তাবনা
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ তার সিদ্ধান্ত নং ২১৭ এ (১১১) দ্বারা বিশ্বজনীন মানবাধিকারসমূহ গ্রহণ ও ঘোষণা করে। এ ঘোষণাপত্রের শিরোনাম হচ্ছে, “সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র”। কেন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র জারি করা হল, কি এর উদ্দেশ্য, এর প্রয়োজনীয়তাই বা কতটুকু সে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে প্রস্তাবনায়। প্রস্তাবনায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ ঘোষণার যৌক্তিকতা। বিশ্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করার জন্যে এ প্রস্তাবনার অবতারণা করা হয়েছে। এ কারণেই সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে হলে আমাদের এর প্রস্তাবনা যথার্থভাবেই বুঝতে হবে।
অনুচ্ছেদ: এক
প্রস্তাবনার শুরুতেই বলা হয়েছে, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও বিশ্বশান্তির ভিত্তি হচ্ছে মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা ও অবিচ্ছেদ্য অধিকারের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি নিশ্চিত করা হচ্ছে এই ঘোষণাপত্রের অন্যতম লক্ষ্য। বস্তুত বিশ্বশান্তি, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে হলে সকল মানুষের সহজাত মর্যাদার স্বীকৃতি দিতে হবে, স্বীকৃতি দিতে হবে মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের। এ উপলব্ধি বিশ্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র জারি করার পেছনে প্রথম প্রেরণা। সকল মানুষের সহজাত, মর্যাদা ও অধিকারের স্বীকৃতির জন্যেই এ ঘোষণাপত্র জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মানবাধিকার কি? মানবাধিকারের পরিধি ও তাৎপর্য আলোচনা কর
অনুচ্ছেদ: দুই
প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ একটি উপলব্ধি ও একটি প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। উপলব্ধি হচ্ছে যে, মানব জাতির বিবেককে দারুণভাবে আঘাত করেছে এমন কিছু বর্বরোচিত ক্রিয়াকলাপ সংঘটিত হয়েছে বিশ্বে এবং এসব হওয়ার কারণ হচ্ছে মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা ও অবমাননা। প্রত্যয়টি হচ্ছে যে, সকল মানুষ বাকস্বাধীনতা, বিশ্বাসের স্বাধীনতা, এবং ভয় ও অভাব থেকে মুক্তি ভোগ করবে এমন একটি বিশ্ব গড়ে তোলা। প্রথমাংশে একটি পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে যেখানে মানুষের বসবাস সত্যিই দুঃসাধ্য আর শেষাংশে একটি অনুকূল বসবাসযোগ্য শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার কথা বলা হয়েছে।
বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার, নিষ্ঠুর, আচরণের শিকার না হওয়ার অধিকার ইত্যকার কতিপয় মানবাধিকার নিয়ে মানুষ আসে এ পৃথিবীতে। এসকল অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে যুদ্ধ নামের কোন বর্বরোচিত ঘটনা পৃথিবীতে ঘটতে পারে না। যুদ্ধ তখনই বাঁধে যখন কিছু কর্তৃত্বসম্পন্ন ও ক্ষমতাশালী মানুষ মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে এবং মানবাধিকারকে অবমাননা করে। তাদের এ হীন আচরণই মানুষের লাঞ্চিত হওয়ার মূল কারণ। মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা ও অবমাননাই যে যুদ্ধের মতো বর্বরোচিত কর্মকান্ডের কারণ মানব জাতির সেই উপলব্ধি জাগ্রত হয়েছে এবং সেটা প্রতিফলিত হয়েছে প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ। এই উপলব্ধির কারণে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব সংস্থা “জাতিসংঘ”। মানব সভ্যতার এক সংকটময় মুহূর্তে যুদ্ধ বিধ্বস্ত, আতংকগ্রস্ত এবং অসহায় মানুষের নিকট শান্তি, নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের স্বপ্ন নিয়ে আবির্ভূত হয় জাতিসংঘ।
অনুচ্ছেদ: তিন
মানুষ বিদ্রোহ করে, বিপ্লব করে, প্রতিরোধ করে, প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত নিয়মের বিরুদ্ধে, অনিয়মের বিরুদ্ধে, অন্যায় অত্যাচার ও নিপীড়ন উৎপীড়নের বিরুদ্ধে। মানুষ বিদ্রোহ করে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে। কিন্তু কখন মানুষ বিদ্রোহ করে? মানুষ তখনই বিদ্রোহ করে যখন স্বাভাবিকভাবে অন্যায়, অত্যাচার, অনিয়ম ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়া যায় না। যখন আইনের অনুশাসন সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে না তখনই মানুষ বিদ্রোহ করে, বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়। প্রকৃতপক্ষে বিদ্রোহ সরল স্বাভাবিক কোন পথ নয়। এটি প্রতিকারের সর্বশেষ উপায়। মানুষ যাতে এ চূড়ান্ত পথটি গ্রহণ করতে বাধ্য না হয়, যাতে বিদ্রোহের আশ্রয় করতে না হয় সেজন্যে আইনের অনুশাসন সুপ্রতিষ্ঠিত থাকা দরকার। আইন যদি মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতাকে সুরক্ষা করে তাহলে মানুষ বিদ্রোহের পথে এগুবে না। তবে আইন হতে হবে সার্বজনীন।
তাই প্রস্তাবনায় তৃতীয় অনুচ্ছেদ এ উপলব্ধি ব্যক্ত করা হয়েছে যে, আইনের অনুশাসনের দ্বারা মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। এটা এজন্যে অপরিহার্য যে, আইনের অনুশাসনের দ্বারা মানবাধিকার রক্ষা না করলে বঞ্চিত মানুষ, বিপন্ন মানুষ বিদ্রোহ করবে। আর যখনই সমাজে বিদ্রোহ দেখা দেবে তখন সর্বস্তরের মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসবে, যা শান্তিপ্রিয় মানুষের কাম্য নয়।
অনুচ্ছেদ: চার
প্রস্তাবনার চতুর্থ অনুচ্ছেদ বিশ্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপযোগিতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যে এটা অবশ্যই দরকার। সারাবিশ্বে এখন অনেকগুলো জাতীয় রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান। রাষ্ট্রসমূহ স্বাধীন ও স্বার্বভৌম কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সর্বাধিক উন্নত দেশসমূহও কোন না কোনভাবে অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া বিশ্বের ভারসাম্যহীন উন্নয়ন মানবতার জন্যে হুমকিস্বরূপ। অধিকন্তু বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদে সকল মানুষের অধিকার রয়েছে। তাই জাতিসমূহের মধ্যে সহযোগিতা দরকার। আর সহযোগিতার জন্যে দরকার বন্ধুত্ব ও মৈত্রী। বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন এবং মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধির জন্যে জাতিসমূহের মধ্যে মৈত্রী অপরিহার্য। কিন্তু বিভিন্নজাতির মধ্যে মৈত্রী ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।
জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, মৈত্রীর সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাইলে সকল মানুষের সমঅধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বার্থের সংঘাতে কারো অধিকার যাতে বিনষ্ট না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মৈত্রীর সম্পর্ক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্বাভাবিক, সুস্থ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি। এ সম্পর্ক তখনই প্রতিষ্ঠা পাবে যখন সকল মানুষের মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হবে। তাই বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও মৈত্রীয় বন্ধন সুদৃঢ় করার জন্যে মানবাধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অনুচ্ছেদ: পাঁচ
জাতিসংঘ সনদ প্রণয়নের সময় এতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ অর্থাৎ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রবর্গ এ মর্মে দৃঢ়বিশ্বাস ব্যক্ত করেছে যে, মৌলিক মানবাধিকার, মানব ব্যক্তিত্বের মর্যাদা এবং নারী-পুরুষ সমান। প্রত্যেকের রয়েছে সমানাধিকার। বস্তুত, সকল মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সমান এবং প্রত্যেকেই জন্মগতভাবে সমমর্যাদার অধিকারী। জাতিসংঘ সনদে মানব সমাজের অগ্রগতি সাধন ও জীবন মানের উন্নতি বিধানের জন্যে সংকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। সামাজিক অগ্রগতি ও জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন করা হবে বৃহত্তর মুক্ত পরিবেশে। শৃঙ্খলিত মানুষ সুখী নয় তাই বন্ধীত্বের মধ্যে প্রাচুর্যও মানুষের কাম্য নয়। মানুষ উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সাথে স্বাধীনতা চায়। জাতিসংঘ সনদের মধ্যে বিভিন্ন জাতি ও জনগোষ্ঠী, যারা এতে অংশগ্রহণ করেছে তারা ঘোষণা করেছে এবং দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে যে, বৃহত্তর মুক্ত পরিবেশ সমাজের অগ্রগতি ও জীবন যাত্রার উন্নত মানের বিধান করা হবে। এ সংকল্প বা প্রত্যয় বাস্তবায়নের জন্যে দরকার মানবাধিকার আরো সুস্পষ্ট করে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা এবং এসকল মানবাধিকার যাতে প্রতিপালিত হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
অনুচ্ছেদ: ছয়
মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা এবং এগুলো প্রতিপালনের উন্নতি বিধান করতে কাউকে বাধ্য করা হয়নি। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং মানুষের মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জোর করে আদায় করা যায় না। এসব ক্ষেত্রে শ্রদ্ধাবোধ জাগাতে দরকার শিক্ষা, অনুপ্রেরণা ও প্রভাবিতকরণ। মানুষকে এ বিষয়টি বুঝাতে হবে যে, নিজের শ্রদ্ধা সম্মান রক্ষা করতে হলে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে, অন্যের মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি অবজ্ঞা করা যাবে না। জাতিসংঘ সনদে অংশগ্রহণকারী সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে বাধ্য করা হয়নি বরং সকল সদস্য রাষ্ট্র নিজেরা স্বেচ্ছায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে যে, তারা মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে এবং এগুলো প্রতিফলনের উন্নতি বিধান করবে।
জাতিসমূহ যখন স্বেচ্ছায় কোন প্রতিশ্রুতি দেয় তখন স্বাভাবিকভাবেই এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তায় তাদের উপর। প্রতিশ্রুতিকে কিভাবে সর্বোত্তম কার্যকর করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নেয়া ও তার সফল বাস্তবায়নের দায়িত্বও বর্তায় জাতিসমূহের উপর। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রবর্গ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও জাগ্রত করবে এবং এ বিষয়টি প্রতিপালন ও উন্নতি বিধান করবে জাতিসংঘের সহযোগিতায়। জাতিসমূহের স্বেচ্ছাপ্রদত্ত উক্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্যে দরকার মানবাধিকারগুলো সুনির্দিষ্ট করা এবং এগুলোর অর্জনের আইনগত ভিত্তি তৈরি করা।
অনুচ্ছেদ: সাত
মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শন করা এবং এগুলো প্রতিপালন ও উন্নতি বিধানের যে প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রসমূহ দিয়েছে সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্যে দরকার একটি সাধারণ সমঝোতা গড়ে তোলা। সমঝোতায় আসতে হবে মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার বিষয়ে। স্বাধীনতা ও মৌলিক মানবাধিকারের বিষয়টি সার্বজনীন। দুনিয়ার সকল অঞ্চলের সকল অবস্থার সকল মানুষের জন্যে এ অধিকার ও স্বাধীনতা সমান। কেউ তা পাবে আর কেউ পাবে না এমনটি হয় না। এ সার্বজনীন বিষয়টি যথাযথভাবে তখনই বাস্তবায়িত হতে পারে যখন দেখা যায় সকলেই এ ব্যাপারে একমত। মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার ব্যাপারে সকলে একমত হলেই তা রক্ষা করতে পারে। আর তাই মানবাধিকারের বিষয়ে একটি সাধারণ সমঝোতা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। সাধারণ সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত না হলে মানবাধিকারের বিষয়টি সার্বজনীন হতে পারে না।
বিশ্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারের লক্ষ্য ও তার বাস্তবায়ন
এ ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারের দু’টি লক্ষ্য রয়েছে।
১. যাতে সকল সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিটি অংশ এ ঘোষণার কথা সর্বদা মনে রেখে অধ্যাপনা ও শিক্ষার মাধ্যমে এসকল অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান বৃদ্ধি করতে কঠোরভাবে চেষ্টা করে।
২. যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রগতিশীল কর্মব্যবস্থার মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জনগোষ্ঠীসমূহ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের শাসনাধীন ভূখন্ডের জনগণের মধ্যে এসব অধিকার ও স্বাধীনতার সার্বজনীন ও কার্যকরী স্বীকৃতি ও প্রতিপালন নিশ্চিত করতে প্রয়াস পায়।
এখানে যে দু’টি লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে প্রথমটি অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান। আর দ্বিতীয়টি অর্জনের উপায় হচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রগতিশীল কর্মব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। এ দু’টি লক্ষ্য বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হল-
মানবাধিকারে বর্ণিত অধিকার ও স্বাধীনতাকে কার্যকর করতে হলে এসবের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি করতে হবে। মানবাধিকার তথা অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হরে সেটা মানুষের প্রতিই সম্মান প্রদর্শন করা হবে। আবার অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখালে মানুষ এর প্রতিদান দেবে অর্থাৎ নিজের অধিকার এবং স্বাধীনতা ও সম্মানের সাথে রক্ষিত হবে। এ বিষয়টি হচ্ছে পরস্পরের পরিপূরক। শুধু একক চেষ্টায়ই তাকে সংরক্ষণ করা যায় না, সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমে কার্যকর করতে হয়। মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান বৃদ্ধি করতে হলে কঠোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রতিকূল পরিবেশে মানবাধিকার প্রতিনিয়তই হুমকির সম্মুখীন। এমতাবস্থায় সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি এবং কঠোর প্রচেষ্টা ছাড়া তা রক্ষিত হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে সহায়তা নিতে হবে শিক্ষা ও অধ্যাপনার। এর মাধ্যমে অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান বৃদ্ধির চেষ্টা করা যায়।
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে বর্ণিত অধিকার ও স্বাধীনতার সার্বজনীন স্বীকৃতি ও কার্যকর প্রতিপালনের লক্ষ্যে এ ঘোষণাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার করা হয়েছে। অধিকার ও স্বাধীনতার সার্বজনীন স্বীকৃতি ও কার্যকর প্রতিপালন নিশ্চিত করার দায়িত্ব জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের। এ ঘোষণাপত্র সকল সদস্যরাষ্ট্র স্বেচ্ছায় গ্রহণ ও প্রচার করেছে। অতএব, তাকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্বও তাদের। রাষ্ট্রসমূহ তাদের জনগোষ্ঠী এবং জনগণের মধ্যে এসকল অধিকার ও স্বাধীনতার সার্বজনীন স্বীকৃতি ও কার্যকর প্রতিপালন নিশ্চিত করবে। এর জন্যে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মব্যবস্থা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করবে এবং এ কর্মব্যবস্থা হবে প্রগতিশীল।