প্রেষণা চক্র কি
প্রেষণা একটি ধারাবাহিক বা অবিরাম প্রক্রিয়া। অভাবই হলো প্রেষণার মূল ভিত্তি। আর কোনো অভাববোধের প্রেক্ষিতে যে প্রেষণা প্রক্রিয়া শুরু হয় তা সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে সমাপ্তির পর পুনরায় নতুন করে আরেকটি অভাবের সৃষ্টি হয়। এভাবে যে প্রক্রিয়া চলমান থাকে, তাকে প্রেষণা চক্র বলে।
একজন ক্ষুধার্ত ব্যক্তি প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার পাওয়ার পর নতুনভাবে তার খাদ্য বা অন্য কোনো জিনিসের অভাব দেখা দিবে। একইভাবে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যেও বিভিন্ন অভাব বা আকাঙ্ক্ষা দেখা দেয়। এরপর অভাবসমূহ পূরণের মাধ্যমে কর্মীদের মাঝে কাজ সম্পাদনের অনুকূল মানসিকতা তৈরি হয়। পরবর্তীতে কর্মীদের মধ্যে আবার নতুন অভাবের সৃষ্টি হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত অভাব সৃষ্টি এবং তা পূরণের চেষ্টার মাধ্যমে চলতে থাকে প্রেষণা চক্র ।
অর্থাৎ, একটি অভাব পূরণের পর আরেকটি অভাব সৃষ্টি এবং তা পূরণের ক্রমাগত প্রক্রিয়াই হলো প্রেষণা চক্র ।
আরও পড়ুন: প্রেষণা কাকে বলে? প্রেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
প্রেষণা চক্রের ধাপ কি কি
নিম্নে প্রেষণা চক্রের ধাপগুলো আলোচনা করা হলো-
১। অভাব বা প্রয়োজন
প্রেষণার মূল ভিত্তি কিংবা উৎস হলো অভাব বা প্রয়োজন অনুভব করা। মানুষ বা কর্মীদের জৈবিক অথবা মানসিক অসমতাজনিত কারণে কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হওয়াকে অভাব বলে। মানুষ তার চাহিদা, প্রয়োজন বা অভাব পূরণের লক্ষ্যেই কাজ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের চাহিদার মধ্যে জৈবিক চাহিদা, নিরাপত্তার চাহিদা, সামাজিক চাহিদা, মর্যাদার চাহিদা ও আত্মপূর্ণতার চাহিদা অন্তর্ভুক্ত। ধরা যাক, একজন ব্যক্তি ক্ষুধার্ত। এক্ষেত্রে তিনি খাদ্যের অভাব বোধ করছেন।
২। তাড়না
অভাব বা প্রয়োজনের কারণেই কর্মীদের মধ্যে তাড়না তৈরি হয়ে থাকে। অভাব পূরণে কর্মীর কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠাকে তাড়না বলে। কোনো ব্যক্তিকে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখলে বোঝা যায়, সে কোনো না কোনা লক্ষ্য অর্ঝনের আকাঙ্ক্ষায় তাড়িত হয়েছে। আর এ লক্ষ্য অর্জনই তখন তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত হয়। উক্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি যেকোনো কঠিন ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জ নিতে সম্মত হন। যেমন: ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটি ক্ষুধা অনুভব থেকে কর্মচঞ্চল বা অস্থির হয়ে ওঠেন।
৩। লক্ষ্যাভিমুখী আচরণ
তাড়না থেকে ব্যক্তি বা কর্মী লক্ষ্যাভিমুখী আচরণের উদ্বুদ্ধ হন। এ পর্যায়ে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে কর্মীর আচরণ নির্ধারিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ, তাড়না থেকে কর্মী কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। এরপর, ঐ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তিনি পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে থাকেন। যেমন: উল্লিখিত ক্ষুধার্ত ব্যক্তি খাবার রান্না করে বা কিনে ক্ষুধা মেটানোর চেষ্টা করবেন।
৪। উদ্দীপক প্রাপ্তি
প্রেষণার ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টিকারী উপাদান হলো উদ্দীপক। প্রেষণা প্রক্রিয়ার এ পর্যায়ে কর্মী সুনির্দিষ্ট কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে অভাব পূরণে সক্ষম হন। এ অভাব পূর্ণই হলো কর্মীর মূল লক্ষ্য। এভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে কর্মীদের নির্দিষ্ট কোনো চাওয়ার সমাপ্তি হয়। অর্থাৎ, কর্মীর একটি অতৃপ্ত চাহিদা পূরণ হয়। যেমন: খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটি অভাব পূরণে সক্ষম হন।
৫। সন্তুষ্টি অর্জন
অভাব পূরণের মধ্য দিয়েই মূলত সন্তুষ্টি আসে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন উদ্দীপক অর্থাৎ, সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে কর্মীদের চাহিদা পূরণ করতে পারলেই তারা সন্তুষ্টি লাভ করে। এটিই হলো প্রেষণা চক্রের চূড়ান্ত পর্যায়। এখানে ব্যবস্থাপকদের করণীয় শেষ হয়। যেমন: ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটি খাবার খাওয়ার পরে তার অভাব বা প্রয়োজন দূর হয় এবং পরিতৃপ্তি বা সন্তুষ্টি অনুভব করে।