মানি লন্ডারিং কি
অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে অবৈধভাবে স্থানান্তর করাকে মানি লন্ডারিং বলে।
অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ মানুষ গোপন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। এতে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ সহজে অবৈধ উপার্জন সম্পর্কে জানতে পারে না। প্রথমে অবৈধ উপার্জন ব্যাংকে জমা করে পরিচিতজনদের হিসাবে স্থানান্তর করে। পরিচিতজনদের হিসাব থেকে উক্ত অর্থ উত্তোলন করে বৈধ কাজে ব্যবহার করা হয়, যাতে লোকজন অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে না পারে। অবৈধ অর্থের এসব অবৈধ স্থানান্তরই মানি লন্ডারিং ।
মানি লন্ডারিং কিভাবে হয়?
মানিলন্ডারিং করার ক্ষেত্রে কোনো ধরা-বাধা নিয়ম নেই। তবে সাধারণত নিচের তিনটি উপায় বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং হয়। যেমন-
ক) প্লেসমেন্ট
কোনো অপরাধমূলক কাজ থেকে উদ্ভূত বা উপার্জিত অর্থ প্রথমবারের মতো অর্থ ব্যবস্থায় প্রবেশ করে তখন তাকে প্লেসমেন্ট বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইকারী বা ঘুষের অর্থ একটি ব্যাংক হিসাবে জমা হলে তখন এর প্লেসমেন্ট ঘটে।
খ) লেয়ারিং
লেয়ারিং বলতে প্লেসমেন্ট করা অর্থ পর্যায়ক্রমে জটিল লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এ প্রক্রিয়া অর্থের উৎস লুকানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সফার, বিদেশি ব্যাংক ড্রাফট, ট্রাভেলারস চেক, একটি ব্যাংক একাউন্ট থেকে ব্যাংকের অন্যান্য শাখায় বিভিন্ন নামে অর্থের স্থানান্তর বা জমা করা।
গ) ইন্টিগ্রেশন
লেয়ারিং সফল হলে ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ এমনভাবে ব্যবহৃত হয় যাতে এটি একটি বৈধ পন্থায় উপার্জিত বলে মনে হয়। এভাবেই লন্ডারিংকৃত অর্থ অর্থনীতিতে পুনর্বহাল হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অবৈধ অর্থে কেনা সম্পত্তি বিক্রি, বিমা পলিসির ঘন ঘন বাতিলকরণ প্রভৃতি।
আরও পড়ুন: ই-ব্যাংকিং কি? ই-ব্যাংকিং এর সুবিধা আলোচনা কর
মানি লন্ডারিং করলে কি শাস্তি হয়?
কোনো ব্যক্তি মানি লন্ডারিং অপরাধ করলে বা অপরাধ করার চেষ্টা, সাহায্য বা ষড়যন্ত্র করলে তিনি ন্যূনতম ৪ বছর এবং সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। এর অতিরিক্ত দ্বিগুণ মূলধনের সমপরিমাণ বা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যেটি বেশি, সে অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
আদালত কোনো অর্থদন্ড বা দন্ডের অতিরিক্ত হিসেবে দন্ডিত ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিতে পারবে, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানি লন্ডারিং বা কোনো সম্পৃক্ত অপরাধের সাথে যুক্ত।
এ ধারার অধীন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মানিলন্ডারিং অপরাধ করলে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ২০ লক্ষ টাকা, যা অধিক হয়, জরিমানা করা যাবে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিলযোগ্য হবে।