যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার শর্তাবলী
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার কতগুলো শর্তাবলী আছে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
১। ভৌগোলিক নৈকট্য
ভৌগোলিক নৈকট্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার অন্যতম শর্ত। ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়া বিভিন্ন প্রদেশের অধিবাসীদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় না। তাই প্রদেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে তাদের ভৌগোলিক নৈকট্য একান্তভাবে প্রয়োজন।
২। ভাষা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐক্য
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার অন্যতম শর্ত হলো ভাষা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐক্য। ভাষা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐক্য নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি করে। ফলে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় হয়। পক্ষান্তরে, এগুলোর অনুপস্থিতি প্রদেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ সৃষ্টি করে। যেমন- ভারতের কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের শিখদের বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবের মূলে রয়েছে ধর্মীয় ঐক্য। আবার পাকিস্তান সৃষ্টির পর ভাষা ও সাংস্কৃতিক বিরোধ পাকিস্তান ভাঙনের সূত্রপাত ঘটায়।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কি? যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য কি কি?
৩। যোগ্য নেতৃত্ব
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সাফল্য যোগ্য নেতৃত্বের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। সৎ, সাহসী, দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের ভাব সৃষ্টি করে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সাফল্যকে সুনিশ্চিত কর। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাসীন নেতারা যদি প্রদেশগুলোর অধিবাসীদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে অক্ষম হন তাহলে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরতে বাধ্য।
৪। বিচার বিভাগের প্রাধান্য
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার আবশ্যকীয় শর্ত হলো বিচার বিভাগের প্রাধান্যের স্বীকৃতি। বিচার বিভাগের প্রাধান্য থাকলে বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে কোনোরূপ দ্বন্দ্ব দেখা দিলে যাতে সঠিক বিচারের মাধ্যমে মীমাংসা এবং সংবিধানের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় সেজন্য বিচার বিভাগের প্রাধান্যের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
৫। প্রতিনিধিদের সমতা
ক্ষুদ্র-বৃহৎ এবং জনবহুল-জনবিরল-নির্বিশেষে সব প্রদেশ থেকে সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভার উচ্চকক্ষ গঠিত হওয়া উচিত। আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়ও এ সমপ্রতিনিধিত্বের নীতি মেনে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। এর ফলে কোনো প্রদেশেরই ক্ষোভ থঅকবে না, যা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সাফল্যের জন্য উপযোগী।
৬। উপযুক্ত শিক্ষা বিস্তার ও রাজনৈতিক চেতনা
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থাকে গ্রহণ ও সংরক্ষণ করার মতো সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক বিশেষভাবে প্রয়োজন। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের শিক্ষাদীক্ষা ও রাজনৈতিক চেতনার বিকাশের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি এবং একই সাথে আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্যবোধের সৃষ্টি করতে হবে। তবেই যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা সাফল্য লাভ করবে।
৭। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় সংবিধান অবশ্যই দুষ্পরিবর্তনীয় হতে হবে। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান পরিবর্তনপদ্ধতি জটিল প্রকৃতির হওয়ায এককভাবে কোনো সরকারই তা পরিবর্তন করতে পারে না। ফলে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যকার সাংবিধানিক ক্ষমতার বণ্টন অক্ষুণ্ণ থাকে এবং প্রত্যেকেই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারে।
৮। আর্থিক সামর্থ্য
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও জটিল সরকার পদ্ধতি। এর সরকারব্যবস্থা পরিচালনা ও প্রতিপালনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থার সাফল্য অর্জিত হবে না।