রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার
গণতান্ত্রিক সরকারের একটি প্রধান রূপ হলো রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। রাষ্ট্র্রপতি শাসিত সরকার বলতে এমন শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকে এবং রাষ্ট্রপতি সাধারণত আইনসভার কাছে দায়ী থাকেন না; বরং তার দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে থাকে।
এ সরকার ব্যবস্থাকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থার বিপরীত রূপ মনে করা হয়। কেননা, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় পরিলক্ষিত হয় না। এ সরকার ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তুলনামূলকভাবে স্থায়ী।
আরও পড়ুন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
১। রাষ্ট্রপতি প্রকৃত শাসক
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একই সাথে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান। আইনগত দিক থেকে এবং বাস্তবে তিনিই রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতার অধিকারী ও প্রকৃত শাসক। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানের ন্যায় তিনি পরোক্ষভাবে সরকার পরিচালনা করেন না। তিনি শাসন বিভাগের প্রধান এবং প্রত্যক্ষভাবে শাসন বিভাগের কার্যাবলি পরিচালনা করেন।
২। মন্ত্রিপরিষদ রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ আইনসভার সদস্য নন এবং রাষ্ট্রপতির সহকর্মীও নন বরং অধস্তন কর্মচারী মাত্র। তাই মন্ত্রীগণ তাদের নিজ নিজ কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী থাকেন। রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো ব্যক্তিকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ ও অপসারণ করতে পারেন।
৩। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকর
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকর রয়েছে। এ সরকার ব্যবস্থায় আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পরস্পর স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারে।
৪। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় আইনসভা সাধারণত দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হয়। রাষ্ট্রপতি আইনসভা ভেঙে দিতে পারেন না। আইনসভা আইন প্রণয়নে স্বাধীন ক্ষমতা ভোগ করে থাকে।
৫। বিচার বিভাগের প্রাধান্য
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় বিচার বিভাগের প্রাধান্য থাকে। বিচার বিভাগ আইন বিভাগের প্রণীত আইন ও শাসন বিভাগের কার্যক্রমের বৈধতা যাচাই করতে পারে। এছাড়া বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬। সরকারের স্থায়িত্ব
এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় সরকারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত থাকে। রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন। তার কার্যকালের মেয়াদ সমাপ্ত না হলে তাকে অভিসংশন ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত করা যায় না।
৭। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় সংবিধান সাধারণত লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় হয়ে থাকে। এ শাসনব্যবস্থায় আইন বিভাগ বা শাসন বিভাগ এককভাবে সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে না। সাংবিধানিকভাবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয়।