সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কিত আলোচনা থেকে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনেকটাই বোঝা যায়। সমাজবিজ্ঞান যেহেতু সমাজকাঠামো তথা ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক, ভূমিকা ও কার্যাবলি সম্পর্কে পাঠ করে, সেহেতু সমাজবিজ্ঞান পাঠে যে কোনো কৌতুহলী পাঠক সমাজ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারবে।
নিচের আলোচনার দ্বারা সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-
সমাজ সম্পর্কে জানতে
সমাজ ছাড়া মানুষ বসবাস করতে পারে না। প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী এফ এইচ বলেন, ‘মানুষ নিয়েই সমাজ, মানুষ পরস্পরের সাথে যৌথভাবে মিলেমিশে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যদি ঐক্যবদ্ধ হয় বা কোনো সংগঠন গড়ে তোলে তবে তাকে সমাজ বলে।’ আর এ সমাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য।
সম্প্রদায় সম্পর্কে জানতে
সম্প্রদায় হচ্ছে রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, ধর্ম, ভাষা ও অন্যান্য সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ একই এলাকায় বসবাসকারী জনসমষ্টি। যেমন- বাঙালি সম্প্রদায়, মুসলিম সম্প্রদায়, হিন্দু সম্প্রদায় ইত্যাদি। যদিও বাংলাদেশে সম্প্রদায়ের সাথে ধর্মীয়বোধ যুক্ত তবে তা সমাজবিজ্ঞানসম্মত নয়। সমাজবিজ্ঞানীরা সামাজিক ব্যাখ্যায় সম্প্রদায়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। সমাজবিজ্ঞান পাঠের দ্বারা সম্প্রদায় সম্পর্কে গভীরভাবে জানা যায়।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা কর
সংঘ সম্পর্কে জানতে
সুনির্দিষ্ট কোনো এক বা একাধিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে যখন কিছু সংখ্যক লোক সমষ্টিবদ্ধ হয় তখন তাকে সংঘ বা সমিতি বলে। যেমন- ট্রেড ইউনিয়ন, ফুটবল ক্লাব, ক্রিকেট দল, রাজনৈতিক দল, শিক্ষক সমিতি ইত্যাদি। সামাজিক মানুষ সমাজে সংঘ বা সমিতির মাধ্যমে নানা উদ্দেশ্য সাধন করে। যেমন- ফুটবল খেলোয়াড়গণ ফুটবল ক্লাবের সদস্যভুক্ত হয়ে তাদের খেলাধুলার উদ্দেশ্য সাধন করে। এ সংঘ বা সমিতির ব্যাপক আলোচনা একমাত্র সমাজবিজ্ঞানেই হয়ে থাকে।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে
সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি যখন পালন করা অলঙ্ঘনীয় ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন তাকে প্রতিষ্ঠান বলে। সমাজের বৈচিত্র্য ও জটিলতা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিক গঠনমূলক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, মনস্তাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার জন্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান আবশ্যক।
সমাজ কাঠামো সম্পর্কে জানতে
সমাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার প্রয়োজনে গড়ে উঠেছে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আর এ প্রতিষ্ঠানের দ্বারা গড়ে উঠেছে সুষ্ঠু মানব প্রক্রিয়া যাকে সমাজ বলা হয়। সমাজের এসব প্রতিষ্ঠানকে একত্রে সমাজ কাঠামো বলে। বস্তুতপক্ষে এগুলোই হচ্ছে সমাজকাঠামো যার মাধ্যমে সমাজ টিকে থাকে। এ বিষয়ে ধারণা পেতে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান আহরণ অপরিহার্য।
সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে ধারণা পেতে
সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে যে উঁচু-নীচু ভেদাভেদ তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী, পদমর্যাদা, সামাজিক উঁচু-নীচু ভেদাভেদ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান একান্ত জরুরি।
আরও পড়ুন: সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা কর
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে
সমাজকে সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্খলভাবে টিকিয়ে রাখতে কতকগুলো রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজস্থ মানুষের কার্যকলাপকে পরিচালনা করতে হয়। যখন ব্যক্তি বা সমষ্টির আচার-আচরণের ওপর সমাজের এরুপ চাপ আরোপিত হয় তখন একে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে। এ সম্পর্কে জানার জন্য সমাজ গবেষক ও শিক্ষার্থীসহ সকলকে সমাজবিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হয়।
সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে জানতে
সামাজিক সমস্য সম্পর্কে জানতেও সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের উন্নতি আর উৎকর্ষতার সাথে সাথে মানব সমাজের জটিলতা বৃদ্ধির ফলে সমাজে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীগণ এ সকল সমস্যার কারণ প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন- যা একমাত্র সমাজবিজ্ঞানের দ্বারাই জানা সম্ভবপর হয়।
সামাজিক পরিবর্তন এর গতি-প্রকৃতি জানতে
মানবসমাজ পরিবর্তনশীল। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর সমাজব্যবস্থা, রীতিনীতি ও চিন্তাধারা যেরুপ ছিল আজ তার পরিবর্তন হয়েছে। অর্থনৈতিক জীবনধারা পরিবর্তনের সাথে সাথে তার সামাজিক আচারবিধি, রীতিনীতি ও চিন্তাধারারও পরিবর্তন হয়েছে। এ ব্যাপারে সূক্ষ্মভাবে জানার জন্য শিক্ষার্থীদের সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন আবশ্যক।
সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে
সামাজিক ইতিহাস হলো একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের অতীতের নির্দিষ্ট সময়ের সমাজব্যবস্থার পূর্ণ বিবরণ। ভবিষ্যতে সমাজকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে হলে অতীতের মানব গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা, আইন-কানুন, রীতি-নীতি জানা দরকার। তাই এক্ষেত্রে সামাজিক ইতিহাসের জ্ঞান খুবই জরুরি।