বিনিয়োগ
বিনিয়োগ বলতে নতুন মূলধন সৃষ্টিকে বোঝায়। নতুন মূলধন সৃষ্টির জন্য ব্যবসা বাণিজ্যে অর্থ খাটানো বা লগ্নি করা হয়। এই লগ্নিকৃত অর্থকেই বিনিয়োগ বলে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বলতে বেসরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগের সমষ্টিকে বোঝানো হয়।
অর্থনীতিবিদ রবিনসন বলেন, “বিনিয়োগ বলতে বিদ্যমান মূলধনের সাথে মূলধন স্টক বৃদ্ধি করাকে বোঝায়।”
অর্থনীতিবিদ হিকস বলেন, “মূলধন সামগ্রী বৃদ্ধি বা নতুন সাজ-সরঞ্জাম তৈরিকে বিনিয়োগ বলে।”
অতএব, একটি নির্দিষ্ট সময় কোনো দেশে বর্তমান মূলধনের সাথে যে অতিরিক্ত মূলধন সংযোজিত হয়, তাকে বিনিয়োগ বলে।
উদাহরণ: ধরি, একটি দেশে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে মূলধনের পরিমাণ ছিল ১,৫০,০০,০০০ টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২,০০,০০,০০০ টাকা। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের বিনিয়োগের পরিমাণ ২,০০,০০,০০০ – ১,৫০,০০,০০০ টাকা = ৫০,০০,০০০ টাকা।
আরও পড়ুন: ভোগ অপেক্ষক কি? ভোগ অপেক্ষক কত প্রকার ও কি কি?
বিনিয়োগের প্রকারভেদ
বিনিয়োগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) স্বয়ম্ভূত বিনিয়োগ
আয়ের পরিবর্তনে যে বিনিয়োগের পরিবর্তন ঘটে না, তাকে স্বয়ম্ভূত বিনিয়োগ বলে। শূন্য আয়েও স্বয়ম্ভূত বিনিয়োগ একই থাকে। স্বয়ম্ভূত বিনিয়োগ আয়ের উপর নির্ভরশীলন নয়।
২) প্ররোচিত বিনিয়োগ
আয়ের পরিবর্তনে যে বিনিয়োগের পরিবর্তন ঘটে, তাকে প্ররোচিত বিনিয়োগ বলে। আয় শূন্য হলে এ বিনিয়োগ শূন্য হয়।
বিনিয়োগের নির্ধারকসমূহ
যেসব বিষয় দ্বারা বিনিয়োগ প্রভাবিত হয় সেসব বিষয় বিনিয়োগের নির্ধারক বলে পরিচিত। বিনিয়োগের নির্ধারকসমূহ নিম্নরূপ:
১) আয়
আয় দ্বারা বিনিয়োগ প্রভাবিত হয়। আয় বাড়লে সামগ্রিক চাহিদা বাড়ে, দ্রব্যের দাম বাড়ে, মুনাফা বাড়ে। ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
২) সুদের হার
সুদের হারের সাথে বিনিয়োগের সম্পর্ক ঋণাত্মক। সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগ কমে। আবার, সুদের হার কমলে বিনিয়োগ বাড়ে।
৩) মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা
অতিরিক্ত এক একক মূলধন ব্যবহার থেকে ব্যয়ের উপর যে প্রত্যাশিত মুনাফা পাওয়া যায়, তাকে মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা বলে। মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা সুদের হারের চেয়ে বেশি হলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়, আবার সুদের হারের চেয়ে মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা কম হলে বিনিয়োগ কমে।
৪) মুনাফা
উৎপাদনক্ষেত্রে মুনাফা বাড়লে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ে এবং মুনাফা কমলে বিনিয়োগ কমে।
৫) রাষ্ট্রীয় নীতি
রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নীতি বিশেষ করে চাহিদা ও রাজস্বনীতি দ্বারা হ্রাস-বৃদ্ধি, ট্যাক্স হলিডে, ভর্তুকি প্রদান, ঋণের সুবিধা প্রভৃতির মাধ্যমে বিনিয়োগ পরিবর্তিত হয়।
৬) মূলধনী দ্রব্যের খরচ
মূলধনী দ্রব্যের খরচ বেশি হলে মুনাফা কমে বলে বিনিয়োগও কমে। খরচ কমলে মুনাফা বৃদ্ধি পায়। ফলে বিনিয়োগ বাড়ে।
৭) ভোগপ্রবণতা
ভোগপ্রবণতা বাড়লে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে।
৮) অবকাঠামোগত অবস্থা
উন্নত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো যেমন- রাস্তাঘাট, পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা ইত্যাদি বিনিয়োগকারীকে অধিক বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে।
৯) উদ্যোক্তা
দক্ষ ও উদ্যমী উদ্যোক্তার ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন খরচ হ্রাস পায়। ফলে বিনিয়োগ বাড়ে।
১০) সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা
সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, অস্থিতিশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ বিনিয়োগ কমিয়ে দেয়।
এছাড়াও পুঁজির মজুদ, জনসংখ্যা, উৎপাদনকৌশল, উন্নয়ন কর্মসূচি ইত্যাদি দ্বারা একটি দেশের বিনিয়োগ প্রভাবিত হয়ে থাকে।