জিডিপি (GDP)
জিডিপি এর পূর্ণরূপ হলো Gross Domestic Product। এটি মোট দেশজ উৎপাদন হিসেবে অভিহিত। একটি নির্দিষ্ট সময়ে, সাধারণত এক বছরে একটি দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম সৃষ্টি হয়, তার আর্থিক মূল্যকে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি বলা হয়।
মোট দেশজ উৎপাদনের হিসাবে, একটি দেশের অভ্যন্তরে অবস্থানরত দেশি ও বিদেশি সব নাগরিকের অবদান অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু বিদেশে অবস্থানরত দেশের নাগরিকের অবদান মোট দেশজ উৎপাদনের হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। ফলে জিডিপিকে নিম্নোক্ত সূত্রের সাহায্যে ব্যক্ত করা যায়।
জিডিপি = নির্দিষ্ট সময়ে দেশে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের আর্থিক মূল্য + দেশে বিদেশিদের অবদান – বিদেশে দেশের জনগণের অবদান।
উদাহরণ: এজন জাপানি অধ্যাপক বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করলে তাঁর উপার্জন বাংলাদেশের জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু একজন বাংলাদেশি অধ্যাপক জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করলে তাঁর উপার্জন বাংলাদেশের জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে না। তাঁর উপার্জন বাংলাদেশের জিএনআই এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।
জিডিপির হিসাবে বৈদেশিক বাণিজ্য তথা আমদানি-রপ্তানি অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে ব্যয়ের দিক থেকে ভোগ ব্যয়, বিনিয়োগ ব্যয় ও সরকারি ব্যয়ের সমষ্টিকে মোট দেশজ উৎপাদন বলা হয়ে থাকে।
GDP = C + I + G
এখানে, GDP = মোট দেশজ উৎপাদন
C = ভোগ ব্যয়
I = বিনিয়োগ ব্যয়
G = সরকারি ব্যয়
আরও পড়ুন:
ব্যক্তিগত আয় ও ব্যয়যোগ্য আয় কি? ব্যক্তিগত আয় ও ব্যয়যোগ্য আয়ের মধ্যে পার্থক্য
জিডিপি ও জিএনআই এর মধ্যে পার্থক্য
সামষ্টিক অর্থনীতির সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাতীয় আয়। জাতীয় আয় বিশ্লেষণে বিভিন্ন ধারণার ব্যবহার হয়ে থাকে। সেসব ধারণার মধ্যে জিডিপি ও জিএনআই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে জিডিপি ও জিএনআই ধারণাদ্বয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হলো-
১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য
একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে কোনো দেশের উৎপাদনের উপকরণকে ব্যবহার করে মোট যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম সৃষ্টি হয়, তার আর্থিক মূল্যকে জিএনআই বলে। পক্ষান্তরে, একটি দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে এক বছরে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের আর্থিক মূল্যের সমষ্টিকে জিডিপি বলে।
২. সূত্রগত পার্থক্য
GNI এর সূত্র হলো, GNI = C + I + G + (X – M)। এখানে, C = বেসরকারি ভোগ ব্যয় (Consumption), I = বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যয় (Investment Expenditure), G = সরকারি ব্যয় (Govt. Expenditure), X = রপ্তানি (Export), M = আমদানি (Import)।
অন্যদিকে, জিডিপির সূত্র হলো, GDP = C + I + G। এখানে, C = বেসরকারি ভোগ (Consumption Expenditure), I = বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যয় (Investment Expenditure), G = সরকারি ব্যয় (Govt. Expenditure) । এখানে X ও M তথ্য রপ্তানি ও আমদানিকৃত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার মূল্য অনুপস্থিত।
৩. দেশি বনাম বিদেশিদের আয়
দেশে ও বিদেশে কর্মরত দেশীয় নাগরিকদের আয় জিএনআই-এ অন্তর্ভূক্ত হয়। কিন্তু বিদেশে কর্মরত দেশীয় নাগরিকদের আয় জিডিপি-এর অন্তর্ভুক্ত নয়। অন্যদিকে, দেশে কর্মরত বিদেশিদের আয় জিডিপির অংশ কিন্তু জিএনআই-এর অংশ নয়।
৪. পরিধিগত পার্থক্য
জিএনআই একটি বিস্তৃত ধারণা। কিন্তু জিডিপি জিএনআই থেকে সংকীর্ণ ধারণা। কেননা, জিএনআই মূলত জিডিপিকে ধারণ করে।
৫. পরিমাণগত পার্থক্য
পরিমাণগত দিক থেকে জিএনআই ও জিডিপি-এর মধ্যে কখনো সমতা থাকতে পারে; আবার কখনো অসমতা বিরাজ করতে পারে।
৬. গুরুত্ব
জিএনআই এর অর্থনৈতিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম, অন্যদিকে জিডিপি এর অর্থনৈতিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি।
উপরিউক্ত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও উভয় ধারণাই জাতীয় আয়ের গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ণয়ে জিডিপি বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত ধারণা। তবে জিএনআই জিডিপি অপেক্ষা জটিল ও বৃহত্তর ধারণা।