অলিগোপলি বাজার
গ্রিক শব্দ Olisgos-এর অর্থ মুষ্টিমেয় Polis এর অর্থ বিক্রেতা। তাই অলিগোপলি বলতে মুষ্টিমেয় বিক্রেতার বাজার বোঝানো হয়। বাজারে স্বল্পসংখ্যক ফার্ম কোনো দ্রব্যের উৎপাদন বা বিক্রয়া পরিচালনা করলে সেই বাজারকে স্বল্পসংখ্যক বিক্রেতার বাজার বা অলিগোপলি বাজার বলে। অর্থাৎ, একটি শিল্পে উৎপাদনক্ষেত্রে স্বল্পসংখ্যক ফার্মের সমাবেশকে অলিগোপলি বলে।
অলিগোপলি বাজারে উৎপন্ন দ্রব্য প্রভেদীকৃত হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। মোট উৎপাদনের প্রায় সবটাই মুষ্টিমেয় ফার্মের হাতে থাকে। দাম পরিচালনা, উৎপাদন নির্ধারণ, বিজ্ঞাপন প্রচার এবং বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এসব ক্ষেত্রে ফার্মগুলোর আন্তঃনির্ভরশীলতা প্রকাশ পায়।
মোটর গাড়ি, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, ওষুধ ও রাসায়নিক শিল্প, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং কম্পিউটারের ন্যায় উৎপন্ন দ্রব্যের ক্ষেত্রে অলিগোপলি বাজার পরিলক্ষিত হয়।
অলিগোপলি বাজারের বৈশিষ্ট্য
অলিগোপলি বাজারের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ-
১. দ্রব্যের প্রকৃতি
অলিগোপলি বাজারে উৎপাদিত দ্রব্যগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমজাতীয় হয়। অলিগোপলি বাজারে উৎপন্ন দ্রব্য প্রভেদীকৃত হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।
২. বিক্রেতার সংখ্যা
অলিগোপলি বাজারে দুই বা ততোধিক বিক্রেতা থাকে। তবে তা অসংখ্য নয়।
আরও পড়ুন: একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাকে বলে? এ বাজারের বৈশিষ্ট্য কি কি?
৩. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা
শিল্পের অন্তর্গত অন্যান্য ফার্মের উৎপাদন ও দাম সম্পর্কিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ করে প্রত্যেক ফার্ম নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফার্মগুলোর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা উপলব্ধি করা যায়।
৪. দামের অনমনীয়তা
দাম কমিয়ে বা বাড়িয়ে অলিগোপলি বাজারে কোনো ফার্ম লাভবান হতে পারে না। তাই এ বাজারে দামের অনমনীয়তা লক্ষ করা যায়।
৫. দাম ব্যতিরেকে প্রতিযোগিতা
দামের অনমনীয়তার কারণে অলিগোপলিতে ফার্ম ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য দাম ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে প্রতিযোগিতার আশ্রয় গ্রহণ করে।
৬. বিজ্ঞাপন প্রচার
অন্যের কাছ থেকে কীভাবে ক্রেতা ছিনিয়ে আনা যায় এবং নিজ দ্রব্যের অনুরক্ত ক্রেতাদের কীভাবে ধরে রাখা যায়, সে লক্ষ্যে নিজ দ্রব্যের উৎকর্ষ প্রচারের জন্য বিক্রেতা বিজ্ঞপন প্রচারের আশ্রয় নেয়।
৭. দ্রব্যের বস্তুগত পার্থক্য
অলিগোপলি ফার্ম দ্রব্যের বস্তুগত পার্থক্য দেখিয়ে চাহিদা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করে। ফলে এ বাজারে দ্রব্যের বস্তুগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
৮. নতুন ফার্মের প্রবেশে বাধা
প্রযুক্তিগত বাধার কারণে এ বাজারে নতুন ফার্মের পক্ষে উৎপাদন ও বাজারজাত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৯. দলীয় মনোভাব
অলিগোপলিতে সর্বদা একক ফার্ম সিদ্ধান্ত নেয় না। কয়েকটি ফার্ম দলবদ্ধ হয়ে উৎপাদন বা বিক্রয়কাজ পরিচালনা কের। কখনো নেতৃস্থানীয় ফার্মের মাধ্যমে, আবার কখনো কার্টেলের মাধ্যম ফার্ম বিক্রয়কাজ পরিচালনা করে।
১০. দাম নেতৃত্ব
এরূপ বাজারে ফার্ম অনেক সময় দাম প্রতিযোগিতার পরিবর্ত প্রভাবশালী কোনো ফার্মের দাম নেতৃত্ব মেনে নেয়।
১১. অনিশ্চিত চাহিদারেখা
এ বাজারে একটি ফার্ম দাম পরিবর্তন করলে অন্য ফার্ম দাম পরিবর্তন করতে পারে, আবার দাম স্থিরও রাখতে পারে। ফলে, ফার্মের চাহিদারেখার প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়।
১২. ফার্মের আকৃতি
অলিগোপলি বাজারে বিভিন্ন আকৃতির ফার্মের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। আয়তন ও খরচের দিক থেকে কোনো কোনো ফার্ম বড়; আবার কোনো কোনো ফার্ম ছোট আকৃতির হতে পারে।