একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার হচ্ছে এমন এক ধরনের বাজারকাঠামো, যেখানে যথেষ্ট ছোট ছোট ফার্ম অবস্থান করে, তারা সদৃশ কিন্তু সামান্য প্রভেদীকৃত দ্রব্য উৎপাদন করে, তাদের শিল্পে প্রবেশ ও প্রস্থানের স্বাধীনতা থাকে এবং বাজার সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার জ্ঞান অপূর্ণাঙ্গ। যেমন- টুথপেস্ট, সাবান, কলম, সিগারেট ইত্যাদির বাজার একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার।
অধ্যাপক ই. এইচ, চেম্বারলিন এর মতে, “যে বাজারে বহুসংখ্যক বিক্রেতা একই জাতীয় কিন্তু পৃথকীকৃত দ্রব্য বিক্রি করে, তাকে একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতার বাজার বলে।” (“Monopolistic Competition refers to the market organisation in which there are many sellers of differentiated product” – E. H. Chamberlin)
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্য
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়-
১. অধিকসংখ্যক ছোট ছোট ফার্ম
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বহুসংখ্যক ছোট ছোট ফার্ম থাকে। বাজারে মোট উৎপাদনের সামান্য অংম এক-একটি ফার্মের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২. উৎপাদিত দ্রব্য পৃথকীকরণ
বিভিন্ন ফার্মের উৎপাদিত দ্রব্যগুলো অনেকটা সদৃশ হলেও একটি অপরটির পরিবর্তক। দ্রব্যগুলোর মধ্যে গুণগত ও বহিরাবরণের মধ্যে পার্থক্য থাকে।
আরও পড়ুন: একচেটিয়া বাজার কাকে বলে? একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
৩. সহজে প্রবেশ ও প্রস্থান
একচেটিয়া প্রতিযোগিতার বাজারে কোনো ফার্মের প্রবেশ ও প্রস্থানে কোনো বাধা থাকে না। ফার্মের প্রবেশ ও প্রস্থান হয় সহজ ও অবাধ।
৪. বাজার সম্পর্কে অপূর্ণাঙ্গ জ্ঞান
এ বাজার সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার জ্ঞান অপূর্ণাঙ্গ। ক্রেতার জ্ঞান দ্রব্যের অন্তর্নিহিত গুণাগুণ সম্পর্কে অপূর্ণাঙ্গ, আবার বিক্রেতা অপরাপর ফার্ম সম্পর্কে অবগত নয়।
৫. বিজ্ঞাপন ব্যয়
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বাজারে উৎপাদিত দ্রব্যের পার্থক্য ও বিশেষত্ব তুলে ধরে ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা সৃষ্টি করা হয়। ফলে বিজ্ঞাপন বাবদ এ বাজারে ব্যয় হয়ে থাকে।
৬. ‘শিল্প’ এর পরিবর্তে ‘গ্রুপ’ ধারণা
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ফার্মগুলো একবারে সমজাতীয় দ্রব্য উৎপাদন না করে পৃথকীকৃত দ্রব্য উৎপাদন করে। সাধারণত সমজাতীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী ফার্মের সমষ্টিকে শিল্প বলে। তাই এ বাজারে ফার্মের সমষ্টিকে শিল্প না বলে গ্রুপ বলা হয়।
৭. স্বাধীন দামনীতি
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রতিটি ফার্ম পৃথকীকৃত দ্রব্য বিক্রয় করে বলে তারা স্বাধীন দামনীতি গ্রহণ করতে পারে।
৮. অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা
এ বাজারে ফার্মসমূহের অতিরিক্ত উৎপাদনের ক্ষমতা থাকে।
৯. মুনাফা
এ বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলেও তা অবাধ নয়। তাই এ ধরনের বাজারে স্বল্পকালে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হলেও দীর্ঘকালে স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে।
১০. দ্রব্য সম্পর্কে আগাম ধারণা
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বাজারে ক্রেতারা দ্রব্যের প্রকৃতি, গুণাগুণ ও দাম সম্পর্কে আগাম ধারণা লাভ করে।
১১. চাহিদা তথা গড় আয় রেখা
এ বাজারে চাহিদা তথা গড় আয় রেখা নিম্নগামী প্রকৃতির হয়। কারণ, ফার্ম তার উৎপাদিত পৃথকীকৃত দ্রব্যের যোগান পরিবর্তন করে দামের উপর প্রভাব খাটাতে পারে।