Home » বাজার বলতে কি বুঝায়? বাজারের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ আলোচনা কর।

বাজার বলতে কি বুঝায়? বাজারের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ আলোচনা কর।

by TRI

বাজার কাকে বলে?

সাধারণ অর্থে বাজার বলতে কোনো স্থানকে বোঝায় যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতার প্রত্যক্ষ দরকষাকষির মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে বাজার শব্দটি বিশেষ অর্থ বহন করে। অর্থনীতিতে বাজার বলতে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট দামে, নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রব্য ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হওয়াকে বোঝায়। 

অধ্যাপক চ্যাপম্যান এর মতে, “বাজার বলতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানকে বোঝায় না, বরং এক বা একাধিক দ্রব্যকে বোঝায়, যা ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দামে ক্রয়-বিক্রয় হয়।”

অধ্যাপক পি. এ. স্যামুয়েলসন বলেন, “বাজার হলো কোনো দ্রব্যের ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রব্যটির দাম ও পরিমাণ নির্ধারণের একটি কৌশল।”

বাজারের বৈশিষ্ট্য

বাজারে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়:

১. বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী।

২. ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য এক বা একাধিক দ্রব্য থাকে।

৩. নির্দিষ্ট দামে দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হয়।

৪. ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতা কিংবা প্রতিযোগীতাহীনভাবে দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হয়।

৫. বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ থাকার কারণে বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হয়।

আরও পড়ুন:  উৎপাদন অপেক্ষক কি? উৎপাদনের উপকরণ কয়টি ও কি কি?

বাজারের প্রকারভেদ

অর্থনীতিতে বিভিন্ন প্রকারের বাজারের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। স্থান-কাল, পরিধি ও ক্রেতা-বিক্রেতার প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে নিম্নোক্ত শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-

ক) সময়ের ভিত্তিতে

সময়ের ভিত্তিতে বাজারকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. অতি স্বল্পকালীন বাজার

যখন কোনো পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়, তখন সে বাজারকে অতি স্বল্পকালীন বাজার বলে। এ ধরনের বাজারের চাহিদার পরিবর্তনের ফলে দামের পরিবর্তন ঘটে এবং চাহিদা অনুসারে যোগানের পরিবর্তন সম্ভব হয় না। যেমন- মাছ, মাংস, সবজির বাজার ইত্যাদি।

২. স্বল্পকালীন বাজার

যে বাজারে দ্রব্যের চাহিদার পরিবর্তনের সাথে সাথে যোগানের সামান্য পরিবর্তন হয়, তাকে স্বল্পকালীন বাজার বলে। এ ধরনের বাজার কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়ে ক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। দাম নির্ধারণে এ বাজারে যোগানের চেয়ে চাহিদার ভূমিকা বেশি থাকে। যেমন- শাড়ি, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদির বাজার।

৩. দীর্ঘকালীন বাজার

যে বাজারে উৎপাদন ফার্ম স্থির এবং পরিবর্তনশীল উভয় ধরনের উপাদানের নিয়োগ বাড়িয়ে দ্রব্যের চাহিদা অনুসারে যোগানের ব্যবস্থা করতে পারে, তাকে দীর্ঘকালীন বাজার বলে। এ বাজারে দাম নির্ধারণ চাহিদা ও যোগানের সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘটে। যেমন- কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, রেফ্রিজারেটর, মোটর গাড়ি ইত্যাদির বাজার।

৪. অতি দীর্ঘকালীন বাজার

যে বাজারে উৎপাদন ফার্ম উৎপাদনকাজে ব্যবহৃত পুরনো প্রযুক্তির পরিবর্তে নতুন প্রযুক্তির প্রবর্তন ঘটায়, এরূপ বাজারে চাহিদার সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটে। এ বাজারে চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে যোগান বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় বলে দাম নির্ধারণ অনিশ্চিত থাকে। যেমন- সোনা-রুপার বাজার।

খ. আয়তন বা পরিধি ভিত্তিতে

আয়তন বা পরিধি অনুসারে বাজারকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-

১. স্থানীয় বাজার

যে দ্রব্যের বাজার দেশের একটি বিশেষ স্থান বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তাকে স্থানীয় বাজার বলে। যেমন- সবজির বাজার, দুধের বাজার, মাছের বাজার ইত্যাদি।

২. জাতীয় বাজার

কোনো দ্রব্যের বাজার যদি একটি দেশের সমগ্র স্থান বা অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত থাকে, তবে তাকে জাতীয় বাজার বলে। যেমন- দেশীয় বস্ত্র, প্রসাধনীর বাজার ইত্যাদি।

৩. আন্তর্জাতিক বাজার

কোনো পণ্যের বাজার যখন দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্যান্য দেশেও সম্প্রসারিত হয়, তখন তাকে আন্তর্জাতিক বাজার বলে। যেমন- সোনা, রুপা, পাট, তেল প্রভৃতির বাজার।

গ. প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে

প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে ‍দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার

যে বাজার কাঠামোতে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা সদৃশ দ্রব্য বা সেবা নিয়ে নির্দিষ্ট বাজার দামে নিজেদের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতা কেউই নিজ নিজ কার্যকলাপের মাধ্যমে বাজার দামকে প্রভাবিত করতে পারে না, ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই দাম গ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হয়, যে দাম বাজারের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং ক্রেতা ও বিক্রেতাকে সেই নির্ধারিত দাম মেনে চলতে হয়, এ ধরনের বাজার পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে অভিহিত।

২. অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার

যে বাজারে এক বা একাধিক কিন্তু অসংখ্য নয়, ক্রেতা ও বিক্রেতা অসম প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে, তাকে অপূর্ণ প্রতিযোগিতামীলক বাজার বলে। এ ধরনের বাজারে প্রতিযোগিতা পূর্ণাঙ্গ নয়। এসব বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়। এসব বাজারে সামান্য পরিমাণে প্রতিযোগিতা আবার অপ্রতিযোগিতাও লক্ষ করা যায়।

Related Posts