উৎপাদন অপেক্ষক
অপেক্ষক একটি গাণিতিক ধারণা। দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে বিশেষ সম্পর্কের গাণিতিক প্রকাশকে অপেক্ষক বলে। চলক সাধারণত স্বাধীন ও অধীন এ দুই ভাগে বিভাক্ত। ফলে, স্বাধীন চলক ও অধীণ চলকের মধ্যকার সম্পর্কের গাণিতিক প্রকাশকে অপেক্ষক বলা হয়।
উৎপাদনের পরিমাণ উৎপাদন উপকরণের উপর নির্ভর করে। এখানে, উৎপাদনের উপকরণ স্বাধীন চলক ও উৎপাদনের পরিমাণ অধীন চলক। তাই উৎপাদন অপেক্ষক দ্বারা উৎপাদনের উপকরণ ও উৎপাদনের পরিমাণের মধ্যকার সম্পর্কের প্রকাশ ঘটে।
অর্থাৎ, উৎপাদন ও উপকরণের মধ্যে যে কারিগরি সম্পর্ক তাকে উৎপাদন অপেক্ষক বলে।
আরও পড়ুন: যোগানের নির্ধারকসমূহ কি কি?
উৎপাদনের উপকরণ
উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত উপকরণসমূহকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১. ভূমি (Land);
২. শ্রম (Labour);
৩. মূলধন (Capital) ও
৪. সংগঠন (Organization)
উল্লেখ্য, আধুনিককালে অর্থনীতিবিদরা উৎপাদনের পঞ্চম উপকরণ হিসেবে প্রযুক্তিকে চিহ্নিত করেছেন।
নিচে উৎপাদনের উপকরণসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো-
১. ভূমি
সাধারণত ভূমি বলতে ভূপৃষ্ঠ বা মাটিকে বোঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে ভূমি বলতে প্রকৃতি প্রদত্ত যাবতীয় সম্পদকে বোঝায়, যা উৎপাদনকাজে সহায়তা করে। ভূমির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ভূমি প্রকৃতির দান। প্রকৃতি মুক্তহস্তে মানুষকে তা দান করেছে। এর সৃষ্টির পেছনে মানুষের হাত নেই। ভূমি প্রকৃতির দান বলে এর যোগান দাম নেই। ভূমি স্থানান্তরযোগ্য নয়; কিন্তু এর মালিকানা পরিবর্তনযোগ্য।
উৎপাদনক্ষেত্রে ভূমির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তবে কৃষি উৎপাদনে এর গুরুত্ব সর্বাধিক। শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী সমাজব্যবস্থায় কৃষি ছিল প্রধান চালিকাশক্তি। ফলে তখন ভূমির গুরুত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি।
২. শ্রম
শ্রম বলতে সাধারণত মানুষের বা শ্রমিকের কায়িক বা শারীরিক পরিশ্রমকে বোঝানো হয়ে থাকে। তবে অর্থনীতিতে উৎপাদনকাজে ব্যবহৃত মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনে পরিশ্রমকে শ্রম বলা হয়। শ্রমিকের কর্মশক্তিই হলো শ্রম। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, নিছক আনন্দ লাভের উদ্দেশ্যে এ কর্মশক্তি ব্যবহার করলে তাকে শ্রম বলা হয় না। ফলে নিজের আনন্দের জন্য গান গাইলে তা শ্রম নয়।
শ্রম ও শ্রমিক অবিচ্ছেদ্য এবং শ্রম সক্রিয় উপাদান বলে উৎপাদন প্রক্রিয়ার চালিকাশক্তি শ্রম। প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমের গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত কম হলেও সমাজতান্ত্রিক সমাজে এর গুরুত্ব সর্বাধিক।
৩. মূলধন
মূলধন বলতে সাধারণত টাকা-পয়সাকে বোঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে মূলধন বলতে উৎপাদিত উপাদানকে বোঝায়, যা পুনরায় অধিক উৎপাদনের জন্য উৎপাদনকাজে ব্যবহৃত হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে উৎপাদনক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, বাড়ি-ঘর, কাঁচামাল, বিদ্যুৎ ইত্যাদি মূলধন হিসেবে আখ্যায়িত। কেননা, এসব সম্পদ মানুষের তৈরি এবং তা পুনরায় উৎপাদনকার্যে অধিক উৎপাদনে নিয়োজিত।
৪. সংগঠন
উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভূমি, শ্রম ও মূলধন সংগ্রহ, সংযোজন ও নিয়োগ করে সুষ্ঠুভাবে উৎপাদনকাজ পরিচালনা করাকে সংগঠন বলে। যিনি এ কাজ করে থাকেন, তিনি সংগঠক নামে অভিহিত। সংগঠক বা উদ্যোক্তাকে অধ্যাপক মার্শাল Captain of the Industry বলে অভিহিত করেন। একজন দক্ষ সংগঠক সঠিক পরিকল্পনা, উপকরণের সুষ্ঠু সমন্বয়, তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শন এবং নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও তার প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদনক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেন। আর বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে সংগঠনের গুরুত্ব অনেক বেশি।
৫. প্রযুক্তি
সাধারণত আধুনিককালের উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহারকে প্রযুক্তি বলে অভিহিত করা হয়। অর্থনীতিতে সর্বাধিক উৎপাদনে দক্ষতার সাথে উপকরণসমূহকে ব্যবহার করার কৌশলকে প্রযুক্তি বলে। প্রযুক্তি বলতে শুধু যন্ত্রকে বোঝায় না। যন্ত্র মানুষের জ্ঞানকে উন্নততর করতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। আর এ জ্ঞানই প্রযুক্তি।