মানসিক চাপের কারণ বা উৎস
মানসিক চাপের কারণ বা উপাদানসমূহকে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা-
ক) সাংগঠনিক ও পরিবেশগত উপাদান এবং
খ) ব্যক্তিগত উপাদান।
নিম্নে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ক. সাংগঠনিক ও পরিবেশগত উপাদান
সাংগঠনিক নানা উপাদান কর্মীর মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভুল-ত্রুটি পরিহার, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্যসাধন, তত্ত্বাবধায়কের আচরণ, সহকর্মীদের মনোভাব, অতিরিক্ত কার্যসম্পাদন ইত্যাদি। এবং পরিবেশগত উপাদানের মধ্যে কার্যসূচি, কাজের প্রকৃতি, চাকরির নিরাপত্তা, কর্মপন্থা ইত্যাদি কর্মীর মধ্যে মারাত্মক মানসিক চাপের জন্ম দেয়। সাংগঠনিক ও পরিবেশগত উপাদান থেকে সৃষ্ট মানসিক চাপের কারণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. কার্য চাহিদা
কর্মীর কার্য বা পদ সম্পর্কিত উপাদানসমূহ হচ্ছে কার্য চাহিদা। ব্যক্তির কার্য ডিজাইন, কাজের পরিবেশ ও অবস্থা ইত্যাদি কার্য চাহিদার অন্তর্ভূক্ত। কর্মীর নিজের এবং অন্যের কাজের আন্তঃনির্ভরতা, কাজের কোটা, কর্ম স্বাধীনতার মাত্রা, কর্মক্ষেত্রে তাপমাত্রা, গোলযোগ ও অন্যান্য অপ্রত্যাশিত কাজের পরিবেশ, অত্যধিক ভিড়, কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ষমূহ কর্মীর মানসিক চাপ সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করে।
২. ভূমিকার চাহিদা
প্রতিষ্ঠানের কার্যসম্পাদনে কর্মীর নিজের দ্বারা সৃষ্ট বিশেষ ভূমিকা রাখার কারণেও মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। ভূমিকা চাহিদাকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-
- ভূমিকার দ্বন্দ্ব: কর্মীর মধ্যে এরূপ প্রত্যাশা সৃষ্টি করে যা তৃপ্ত করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে, তখন মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।
- কাজের অতিরিক্ত বোঝা: প্রাপ্ত সময়ের তুলনায় কর্মী যখন অধিক কাজের প্রত্যাশা করে তখন মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।
- ভূমিকার অনিশ্চয়তা: কর্মী যখন প্রত্যাশিত ভূমিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে না বা কর্মী কি করছে তা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকে না তখন নানাপ্রকার মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: মানসিক চাপ বলতে কি বুঝায়? মানসিক চাপের লক্ষণসমূহ কী কী?
৩. আন্তঃব্যক্তিক চাহিদা
অন্যান্য কর্মীদের দ্বারা নানাপ্রকার চাপ সৃষ্টি করাকে আন্তঃব্যক্তিক চাহিদা বলে। সহকর্মীদের কাছ থেকে সামাজিক সমর্থন ও সহযোগিতার অভাব এবং আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের প্রভাবে মানসিক চাপের সৃষ্টি করে।
৪. সংগঠন কাঠামো
সংগঠন কাঠামোর গঠন প্রকৃতিও কর্মীর মানসিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে। সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন, সংগঠন কাঠামো অনুযায়ী কর্মীর অবস্থান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্মীর অংশগ্রহণের সুযোগের অভাব কর্মীর মনে মানসিক চাপের সৃষ্টি করে।
৫. সাংগঠনিক নেতৃত্ব
প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানের ধরন বা স্টাইলকে সাংগঠনিক নেতৃত্ব বলে। কিছু কিছু কর্মকর্তার আচরণ কর্মীর মনে ভয়-ভীতি, দুশ্চিন্তা ও টেনশনের সৃষ্টি করে। কোন কোন কর্মকর্তা অবাস্তবভাবে স্বল্প সময়ে কর্মসম্পাদনের জন্য কর্মীর উপর চাপ প্রয়োগ করে, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করে এবং স্বভাবজাতভাবে কর্মীর উপর নানাভাবে পীড়ন সৃষ্টি করে কর্মীকে সদা সন্ত্রস্ত রাখে যা কর্মীর মধ্যে মারাত্মক মানসিক চাপের জন্ম দেয়।
৬. চাকরির নিরাপত্তা
কর্মক্ষেত্রে কর্মীর চাকরির নিরাপত্তা কর্মীর মধ্যে নানা উদ্বিগ্নতা ও দুশ্চিন্তার জন্ম দেয়। কর্মক্ষেত্রে কর্মীর মানমর্যাদা রক্ষা, কাজের স্বীকৃতি, সময়মতো পদোন্নতি, পদাবনতি, বদলি, বরখাস্ত ইত্যাদি কর্মীকে মারাত্মক চাপের মধ্যে রাখে এবং কর্মীর মনে মানসিক চাপের সৃষ্টি করে।
৭. পরিবেশগত অন্যান্য উপাদান
পরিবেশগত নানা উপাদান যেমন- কর্মস্পৃহা, কার্যসূচি, কার্য প্রকৃতি, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও কর্মীর প্রভাব ইত্যাদি কর্মীর মনে মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। পরিবেশের সাথে খাপ-খাইয়ে নিতে না পারার ব্যর্থতা কর্মীকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে কর্মী নিজেকে অসহায় ভাবে এবং কর্মীর মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।
খ. ব্যক্তিগত উপাদানসমূহ
ব্যক্তিগত নানা সমস্যা কর্মীর মনে মানসিক চাপ সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করতে পারে। পারিবারিক নানা সমস্যা, অসুখ-বিসুখ, চিকিৎসা, শিক্ষা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তা, ব্যক্তিগত আর্থিক সমস্যা ইত্যাদি কর্মীর মনে নানা উদ্বিগ্নতার জন্ম দেয় এবং মারাত্মক মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের জন্ম, সন্তানাদির লেখাপড়া, সুচিকিৎসা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন মেটানো, প্রত্যাশা পূরণ ইত্যাদি কারণে কর্মীর মধ্যে নানা মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে কর্মীর বিরূপ আচরণ প্রতিফলিত হয়।