ই আর জি তত্ত্ব
মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব সমালোচিত হওয়ায় এ তত্ত্বে কিছু সংযোজন করে Clayton P. Alderfer ই আর জি বা অস্তিত্ব রক্ষা, সম্পৃক্ততা, প্রবৃদ্ধি তত্ত্ব নামে একটি নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন।
C. Alderfer মনে করেন যে, প্রেষণার ক্ষেত্রে এ তত্ত্বটি অধিক কার্যকর ও বাস্তবসম্মত। তিনি তাঁর তত্ত্বে মানুষের অভাবকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন। এগুলো হলো- অস্তিত্ব রক্ষা, সম্পৃক্ততা এবং উন্নয়ন বা প্রবৃদ্ধি। ই আর জি তথা E. R. G. হচ্ছে Existence বা অস্তিত্ব রক্ষা, Relatedness বা সম্পৃক্ততা এবং Growth বা প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়ন।
এ তত্ত্ব অনুযায়ী কিছু কিছু চাহিদা অন্যান্যদের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কর্মীর একটি চাহিদা পূর্ণ হলে অন্য চাহিদা জাগে এবং প্রত্যেকটি চাহিদা পূরণের সাথে সাথে কর্মীর আচরণ পরিবর্তন সাধিত হয়। কোন ব্যক্তি উচ্চস্তরের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে বা হতাশা দেখা দিলে সে পুনরায় নিম্নস্তরের চাহিদা পূরণে সক্রিয় হয়ে উঠবে।
Alderfer এর ই আর জি তত্ত্বে বর্ণিত ৩টি চাহিদা স্তর সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
ক. অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা (Existence Need)
এ তত্ত্ব অনুযায়ী কর্মী প্রাথমিকভাবে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা পূর্ণ করার জন্য উৎসাহিত হয়। জৈবিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপাদানসমূহ এ স্তরের অন্তর্ভূক্ত। বেতন, ভৌত কার্যপরিবেশ ও কার্যাবস্থা, চাকরির নিরাপত্তা এবং প্রান্তিক সুবিধাদি প্রাপ্তি এরূপ চাহিদার মধ্যে পড়ে। টিকে থাকা তথা জৈবিক কল্যাণ বিধান এরূপ চাহিদার আওতাভুক্ত।
আরও পড়ুন: প্রত্যাশা তত্ত্ব আলোচনা কর
খ. সম্পৃক্ততার চাহিদা (Relatedness Need)
কর্মস্থলের মধ্যে এবং কার্যের বাইরের উপর, নীচ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানের লোকদের সঙ্গে এ পর্যায়ে কর্মীরা সম্পৃক্ত হতে চায়, গ্রহণযোগ্য হতে চায়, সম্পর্ক সৃষ্টি করতে চায়। সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন এবং সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করা এ পর্যায়ে কর্মীদের চাহিদার আওতাভুক্ত। আন্তঃব্যক্তিক সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন এরূপ চাহিদার অন্তর্ভুক্ত।
গ. প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়ন চাহিদা
এ পর্যায়ে কর্মীরা আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিপূর্ণতার চাহিদা মিটাতে সচেষ্ট হয়। এ পর্যায়ে কর্মী প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, আত্মপূর্ণতা লাভ করতে আগ্রহী হয়ে উঠে। ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য ব্যক্তির অন্তর্নিহিত প্রত্যাশা বা আকাঙ্ক্ষা এ পর্যায়ের আওতাভুক্ত।
ই আর জি তত্ত্বের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে চাহিদার স্তরের অগ্রসরতায় কোন কঠোরতা অবলম্বন করে না, বরং চাহিদার তিনটি স্তরেই যে কোনটি যে কোন সময় সক্রিয় হতে পারে। এমনকি যে কোন উচ্চতা স্তরের চাহিদা পূরণেও ক্মী সক্রিয় হতে পারে। এ তত্ত্বে এও বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যে কোন দুটি উচ্চস্তরের চাহিদা পূরণে সক্ষম না হলেও বা হতাশা দেখা দিলেও পুনরায় সে নিম্নস্তরের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হতে পারে এবং পরবর্তীতে আবার উচ্চস্তরের চাহিদা পূরণে অগ্রসর হতে পারে। তাই কর্মীর প্রেষণা জোগানোর জন্য ব্যবস্থাপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, কর্মী কোন স্তরের চাহিদা পূরণে অধিক আগ্রহী।
ই আর জি মডেলটি নিম্নে চিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো-