মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা
শিক্ষাক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার ব্যবহার ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভীক্ষার সাহায্যে প্রার্থীর ব্যবহার, আচার-আচরণ সম্পর্কিত সম্ভাব্য তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। প্রার্থীর আচরণ, মনোভাব, ঝোঁক, আগ্রহ, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, ব্যক্তিত্ব ও মানসিক শক্তি ইত্যাদির তুলনামূলক যাচাই করার প্রক্রিয়াকে মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা বা পরীক্ষা বলে।
Groon bach এর মতে, “A test is a systematic procedure for comparing the behaviors of two ore more persons.” অর্থাৎ, দুই বা ততোধিক ব্যক্তির আচরণের মধ্যে তুলনা করার পদ্ধতিগত প্রক্রিয়াকে পরীক্ষা বা অভীক্ষা বলে।
D. J. Cherrington এর মতে, “A personnel test is an objective and standardized measure of such human characteristics as aptitudes, interests and personalities.” অর্থাৎ, কর্মী অভীক্ষা হচ্ছে এমন একটি উদ্দেশ্যমূলক মানসম্পন্ন পরিমাপন প্রক্রিয়া যা মানবীয় বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলিসমূহ যেমন- প্রবণতা, আগ্রহ এবং ব্যক্তিত্বের পরিমাপ করে।
মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার উদ্দেশ্য
To place right man in the right post. অর্থাৎ, সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক পদে স্থাপন হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য। প্রার্থীর মানসিক ক্ষমতা, ঝোঁক বা প্রবণতা, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, ব্যক্তিত্ব, কার্যসম্পাদন ক্ষমতা ইত্যাদি যাচাইপূর্বক ভবিষ্যৎ কার্যসম্পাদনের সফলতা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। প্রার্থীর আচরণ বিশ্লেষণ করে যথোপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন করার লক্ষ্যে মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
নিম্নে মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার উদ্দেশ্য সমূহ বর্ণিত হলো-
১. মানসিকতা যাচাই
প্রার্থীর বুদ্ধিমত্তা, আগ্রহ, প্রবণতা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদিসহ মানসিক ক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এর ফলে প্রার্থীকে যথোপযুক্ত কাজে নিয়োগ করা সহজ হয়।
২. সঠিক নির্বাচন
বিভিন্ন প্রকার অভীক্ষার মাধ্যমে বহুসংখ্যক প্রার্থীর মধ্য থেকে তুলনা করে পদ অনুযায়ী যোগ্যতম ও সঠিক প্রার্থীক নির্বাচন করা মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য্
৩. প্রার্থীর মনোভাব সম্পর্কে জানা
মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার মাধ্যমে পদ ও কার্য সম্পর্কে প্রার্থীর মনোভাব সম্পর্কে পূর্বানুমান করা সহজ হয়।
আরও পড়ুন: মানব সম্পদ সংগ্রহের অভ্যন্তরীণ উৎস কি কি?
৪. তুলনামূলক মূল্যায়ন
একই ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রার্থীর তুলনামূলক মূল্যায়ন করে সর্বোত্তম প্রার্থী নির্বাচনের উদ্দেশ্যে মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
৫. প্রশিক্ষণ প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুমান
মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর বিভিন্ন বিষয়ে নানাবিধ তথ্যাদি সংগ্রহ করা সহজ হয়। এর ফলে নিয়োগোত্ত্র প্রার্থীর প্রশিক্ষণ প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করা যায়।
৬. প্রশিক্ষণ ব্যয় হ্রাস
মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রার্থীর ঘাটতির দিকসমূহ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। ফলে বিশেষ দিকসমূহের জন্য নিয়োগ পরবর্তী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রশিক্ষণ ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব হয়।
৭. কর্ম পরিত্যাগ হ্রাস
পদ ও কাজের প্রতি প্রার্থীর আগ্রহ, ঝোঁক, দক্ষতা ও জ্ঞান ইত্যাদি পরিমাপের ফলে প্রার্থীকে সঠিক পদে নিয়োগ দেয়া যায়। ফলে কর্মীর কাজে উৎসাহ ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায়। পছন্দ ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজে নিয়োগ দেয়ায় কর্মীর কার্যসন্তুষ্টি আনয়ন করা সম্ভব হয় বিধায় কর্ম পরিত্যাগের হার হ্রাস পায়।