কার্য বিশ্লেষণ কি?
প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কার্য বা সংশ্লিষ্ট কার্যাবলি, কার্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানব সম্পদের কার্যের প্রকৃতি, দায়িত্ব-কর্তব্য, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, গুণাবলি ইত্যাদি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও সংগঠিত করার প্রক্রিয়াকে কার্য বিশ্লেষণ বলে।
সুষ্ঠু মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো কার্য বিশ্লেষণ। এর সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের সকল মানব সম্পদ ও পদসমূহের কাজের তালিকা প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়। দক্ষ মানব সম্পদের সংগ্রহ ও নির্বাচনের এটি প্রাথমিক পদক্ষেপ।
কার্য বিশ্লেষণের সংজ্ঞা
কার্য বিশ্লেষণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Decenzo ও S. P. Robbins বলেন, “কার্য বিশ্লেষণ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট কার্যের প্রকৃতি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ এবং সংশ্লিষ্ট সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের বিচার করার একটি অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। এটি একটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া যা একটি পদ বা কার্যের কর্তব্য, দায়িত্ব এবং জবাবদিহিতাকে সংজ্ঞায়িত করার কাজে ব্যবহৃত হয়।”
Prof. R. Griffin এর মতে, “কার্য বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠানের কার্য সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধকরণের একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া।”
আরও পড়ুন: মানব সম্পদ পরিকল্পনার উপাদান সমূহ কী কী?
কার্য বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য
কার্য বিশ্লেষণের তথ্যাদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের ভিত্তিস্বরূপ। যে পদ্ধতিতেই তথ্য সংগ্রহ করা হোক না কেন এটি তিনটি ফলাফলের জন্ম দেয়। সেগুলো হলো কার্য বর্ণনা, কার্য নির্দিষ্টকরণ এবং কার্য মূল্যায়ন। নিম্নে কার্য বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
১। সংগ্রহ, নির্বাচন ও নিয়োগ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ
কার্য বিশ্লেষণ নির্দিষ্ট পদের কার্যক্রম ও বিষয়বস্তুর বর্ণনা দেয় এবং উক্ত কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মানব সম্পদের যোগ্যতা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসহ অন্যান্য গুণাবলি সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করে। এ সমস্ত তথ্যাদি কার্য বর্ণনা এবং কার্য নির্দিষ্টকরণ আকারে পাওয়া যায়; যা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্ন কাজে কি ধরনের লোক সংগ্রহ, নির্বাচন ও নিয়োগ করা প্রয়োজন তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। তাছাড়া এটি সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক কোজে নিয়োগ ও স্থাপনে সহায়তা দেয়।
২। প্রশিক্ষণ প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ
কার্য বর্ণনায় বিভিন্ন পদের কার্যক্রম, দক্ষতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদির বিবরণ দেয়। তাই নির্দিষ্ট পদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কার্য বিশ্লেষণের সাহায্যে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে মানব সম্পদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা হয়।
৩। কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন
কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কার্যসম্পাদন মানের সঙ্গে প্রত্যেক কর্মীর প্রকৃত কার্য সম্পাদনের তুলনা করে কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন করা হয়। কার্য বিশ্লেষণ ব্যবহার করে পদের সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম এবং কার্যসম্পাদনের মান নির্ধারণ করা হয়। কর্মীর দ্বারা সম্পাদিত কাজের আপেক্ষিক মূল্য নিরূপণের প্রক্রিয়া হচ্ছে কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন।
৪। সুষ্ঠু কার্য পরিবেশ নিশ্চিতকরণ
কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্য পরিবেশ সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। এক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং কার্য পরিবেশ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ নির্ধারণ করা সহজতর হয়।
৫। দায়িত্বপালন যাচাইকরণ
বিভিন্ন পদে কর্মরত ব্যক্তিদের আন্তরিক দায়িত্ব পালন সাংগাঠনিক লক্ষ্যার্জনে অত্যাবশ্যকীয় একটি বিষয়। কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কর্মীদের দায়িত্ব পালনে যে চিত্র পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে এর উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহজতর হয়।
৬। শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের উন্নয়ন
কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের অনেক কাছাকাছি যেতে সক্ষম হয়। এটি প্রতিষ্ঠানের শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখে।
৭। ক্ষতিপূরণ বা মজুরি ও বেতন
কার্য বিশ্লেষণের তথ্যাদি প্রত্যেকটি পদের আপেক্ষিক মূল্য নিরূপণ করে এর সঠিক ক্ষতিপূরণ বা বেতন ও মজুরি এবং ভাতাদি নির্ধারণে সহায়তা করে। পদ বা কার্যের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, দায়িত্ব-কর্তব্য এবং নিরাপত্তা, ঝুঁকি ইত্যাদি বিষয়াদির তুলনামূল বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিটি পদের বেতন ও মজুরি নির্ধারণ করা হয়।
৮। পদোন্নতি ও বদলি
কার্য বিশ্লেষণের তথ্যাদি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের পদোন্নতি ও বদলি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা করে।