ঝুঁকি কি?
মানুষের জীবনের প্রতিটি স্তরে কিছু না কিছু অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। এই অনিশ্চয়তার কারণে ক্ষয় ক্ষতি, আপদ বিপদ বা হারানোর যে সম্ভাবনা থাকে তাকে আমরা ঝুঁকি বলি। মানুষ, ভবিষ্যৎ ঘটনাবলি সম্পর্কে পারফেক্ট ধারণা দিতে অক্ষম বিধায় ঝুঁকির উদ্ভব হয়।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ‘ঝুঁকি’ অতি পরিচিত একটি ধারণা। নানা দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকের দৃষ্টিতে ঝুুঁকি হচ্ছে প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ার আশংকা। আবার কারো মতে ঝুঁকি হচ্ছে ক্ষতিতে সম্ভাবনা। প্রকল্পের ক্ষেত্রে ঝুঁকি হচ্ছে প্রকল্প থেকে প্রত্যাশিত আয় বা অন্য কোনো নির্ধারিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হবার আশঙ্কা।
ঝুঁকি কি – এ সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
S. S. Robbins এর মতে, “ঝুঁকি হলো অনিশ্চয়তার ফল বা অনিশ্চিয়তা হতে উৎপন্ন যা ব্যাপকভাবে মানব জ্ঞানে সম্পূর্ণতা বা তাদের বিচার বুদ্ধির অসামর্থ্যতার সাথে সম্পৃক্ত।”
জন, জে হেমটনের মতে, “বিনিয়োগ হতে প্রকৃত প্রাপ্তি পূর্বাভাস থেকে কম হওয়ার সম্ভাবনাই ঝুঁকি।”
আরও পড়ুন: মাধ্যমিক তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি আলোচনা কর
ঝুঁকির প্রকারভেদ
ঝুঁকিকে নিম্নোক্তভাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায়। যথা-
১। ব্যবসায় ঝুঁকি
ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনায় যে ঝুঁকি বিদ্যমান তাকে ব্যবসায় ঝুঁকি বলে। মুলত প্রাকৃতিক ও মানবিক কারণে ব্যবসায় ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। ব্যবসায় ঝুঁকি ব্যবসায়ের সম্পত্তির সাথে জড়িত। এটা মুনাফার উপার সরাসরি প্রভাব ফেলে। সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত না করতে পারলে ব্যবসায় ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২। খাঁটি ঝুঁকি
যে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লোকসানের সম্ভাবনা থাকে, কোন লাভের সম্ভাবনা থাকে না তাকে বিশুদ্ধ বা খাঁটি ঝুঁকি বলে। এখানে লাভ দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনাকে পূরণ করা সম্ভব হয় না। খাঁটি ঝুঁকিকে আবার নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) বীমাযোগ্য ঝুঁকি
বীমাযোগ্য ঝুঁকিকে আবার তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-
- সম্পত্তি ঝুঁকি: কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা পরিবারের মালিকানাধীন কোন সম্পত্তি ক্ষতি, বিনষ্ট, হারানো বা মূল্য হ্রাসের ঝুঁকিকে সম্পত্তি ঝুঁকি বলা হয়।
- দায় ঝুঁকি: প্রতিষ্ঠান যে সকল পক্ষের নিকট দায়বদ্ধ থাকে, কোন কারণে ঐ সকল দায় বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকিকে দায় ঝুঁকি বলে।
- ব্যক্তিগত ঝুঁকি: শ্রমিক, কর্মচারী বা কর্মকর্তার নিকট কোন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে ব্যক্তিগত ঝুঁকি বলে।
খ) বীমা অযোগ্য ঝুঁকি
বীমা অযোগ্য ঝুঁকিকে নিম্নোক্ত তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-
- বাজার ঝুঁকি: পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে বাজার সম্পর্কে সঠিক পূর্বাভাসে ব্যর্থ হলে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে বাজার ঝুঁকি বলে। এটা মূলত বাজার গবেষকগণের ব্যর্থতার জন্য সৃষ্টি হয়।
- রাজনৈতিক ঝুঁকি: বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঝুঁকি বিবেচনা করতে হয়। কারণ কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে, সেই দেশের কোম্পানিগুলোর সিকিউরিটির আয়ের পরিমাণ কমে যায়। এটি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারী এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী উভয়কেই প্রভাবিত করে।
- উৎপাদন ঝুঁকি: পণ্য উৎপাদনকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। আর এ অনিশ্চয়তা থেকেই উৎপাদন ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। যেমন- কাঁচামাল সরবরাহে ঘাটতি, শ্রমিকের স্বল্পতা, যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততা ইত্যাদি।
৩। আর্থিক ঝুঁকি
আর্থিক ঝুঁকি ব্যবসায়ের মূলধন কাঠামোর সাথে সম্পৃক্ত। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মূলধনের ক্ষতির সম্ভাবনা আর্থিক ঝুঁকি। মূলধন কাঠামোতে স্থায়ী আর্থিক ব্যয়যুক্ত তহবিলের ব্যবহার কমিয়ে আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করা যেতে পারে। কেননা ব্যবসায়ের মূলধন তহবিলে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।