Home » ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর

by TRI

ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সমূহ

ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করা হয় ১৯৪৭ সালে, স্বাধীনতা লাভের তিন বছর পর ১৯৫০ সালের প্রথম দিকে। প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণী তাদের ধ্যানধারণা, চিন্তাভাবনা ও স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখেই সংবিধান প্রণয়ন করেন। ভারতীয় সংবিধানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে ভারতীয় সংবিধানের এমন কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলো একে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সংবিধান থেকে স্বাতন্ত্র্য প্রদান করেছে। নিম্নে ভারতীয় সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-

১. বৃহত্তম ও জটিল প্রকৃতির

ভারতীয় সংবিধানের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি বিশ্বের বৃহত্তম ও জটিল প্রকৃতির সংবিধান। কেননা, এ সংবিধানের মত বিম্বের অন্য কোন দেশের সংবিধানে এত বেশি ধারা, উপধারা, তালিকা প্রস্তাবনা ইত্যাদি নেই। ভারতের মতে, বিশাল দেশের নানা ধরনের বিচিত্র সমস্যার সমাধান সংবিধানের মাধ্যমে করতে যাওয়ার ফলে এর আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানে ৪০০টি ধারা এবং ১০টি তালিকা রয়েছে। আর আকৃতিতে বৃহৎ হওয়ার ফলে সংবিধানটি জটিল প্রকৃতির হয়ে পড়েছে।

দেশপ্রেম কি? দেশপ্রেম কাকে বলে?

২. ধর্মনিরপেক্ষতা

ভারতীয় সংবিধানের আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ধর্মনিরপেক্ষতা। এখানে কোন রাষ্ট্রীয় ধর্ম নেই। রাষ্ট্র বিশেষ কোন ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে না। কতকগুলো বাধানিষেধ স্বীকার করে নিয়ে সব ব্যক্তিই নিজ নিজ বিবেক অনুযায়ী স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণ ও ধর্মপ্রচার করতে পারে।

৩. জনগণের সার্বভৌমত্ব

সংবিধানের প্রস্তাবনায় একে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্ররূপে গণ্য করা হয়। শাসন ক্ষমতা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে অর্পিত হয়। রাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিগণিত হয়। অভ্যন্তরীণ ও বহির্ব্যাপারে ভারতবর্ষ সম্পূর্ণ স্বাধীন।

৪. নাগরিকদের মৌলিক অধিকার

ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকরা ছয় ধরনের মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে। যথা- ক) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, খ) স্বাধীনতার অধিকার, গ) সাম্যের অধিকার, ঘ) ধর্মের অধিকার, ঙ) শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক অধিকার এবং চ) শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার। তবে এসব অধিকার অবাধ ও নিরঙ্কুশ নয়।

৫. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা

সংবিধান অনুযায়ী ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু আকৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র হলেও প্রকৃতিগতভাবে ভারত একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। কেননা, ভারতীয় সংবিধানে এমন কতকগুলো ব্যবস্থা রয়েছে, যার দ্বারা কেন্দ্রীয় সর্বতোমুখী প্রাধান্য স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

৬. লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের সংমিশ্রণ

ভারতীয় সংবিধান বিস্তারিতভাবে লিখিত হলেও এর মধ্যে অলিখিত সংবিধানের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা- প্রথা, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি ইত্যাদি ভারতীয় সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। এসব কারণে ভারতীয় সংবিধানকে সম্পূর্ণভাবে লিখিত সংবিধান না বলে লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের সংমিশ্রণে বলা যেতে পারে।

৭. সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান

প্রকৃতিগতভাবে ভারতীয় সংবিধান একদিকে যেমন সুপরিবর্তনীয়, অন্যদিকে তেমনি দুষ্পরিবর্তনীয়। পুরানো রাজ্যের সীমান বা নাম পরিবর্তন নতুন রাজ্যের সৃষ্টি, বিধান পরিষদের সৃষ্টি বা বিলোপ সাধন প্রভৃতি বিষয় পরিবর্তনের জন্য পার্লামেন্টের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি প্রভৃতি বিষয়ক ধারাগুলো পরিবর্তনের জন্য পার্লামেন্টর উভয় কক্ষের প্রত্যেকটিতেেোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন হয়।

৮. জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ব্যবস্থা

অপ্রত্যাশিত সংকটকালীন অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য সংবিধানের অষ্টাদশ অংশে রাষ্ট্রপতির হাতে জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। যথা- ক) জাতীয় জরুরি অবস্থা, খ) রাজ্যগুলোতে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা এবং গ) আর্থিক জরুরি অবস্থা। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শক্রমে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

৯. ভাষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা

ভারত একটি বহু ভাষাভাষী দেশ। এখানে প্রায় ৮৪৫ টি ভাষায় মানুষ কথা বলে। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করাই ছিল সংবিধান প্রণেতাদের সামনে অন্যতম প্রধান সমস্যা। সংবিধানে ৩৫০ ও ৩৫১ নং ধারা দু’টিতে ভাষা সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েকটি বিশেষ নির্দেশ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্বের অন্য কোন সংবিধানে ভাষার ব্যাপারে এত বিস্তারিত আলোচনা করা হয় নি।

 

Related Posts