টমাস হবসের সামাজিক চুক্তি মতবাদটি এসেছে মূলত তাঁর প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য আলোচনার প্রাক্কালে। তিনি প্রকৃতির রাজ্যের মানুষের প্রকৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করে মন্তব্য করেছেন, “Human nature is nasty, brutish, solitary, poor and short.”
হবস্ আরও বলেছিলেন, মানুষের কাছে যখন ন্যায় অন্যায় বলতে কিছু ছিল না, তখন তারা ছিল নৈতিকতার বাইরে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ শাসনব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। জনগণের মঙ্গলের জন্য এক শাসকের রাজ্য শাসনের নীতির প্রতি আগ্রহী হয়। জনগণের এ অনুভূতি থেকে সামাজিক চুক্তির উৎপত্তি হয়।
হবসের সামাজিক চুক্তি মতবাদ
প্রকৃতির রাজ্যের নৈরাজ্যজনক অবস্থার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ নিজেদের মধ্যে একটা চুক্তি করল। প্রকৃতির রাজ্যে তারা যেসব অধিকার ভোগ করত সেগুলো হয় পরিত্যাগ করল, নয়তো হস্তান্তর করল। উদ্দেশ্য হল অধিকতর কল্যাণ বা মঙ্গল কামনা। যুক্তিবাদিতায় প্রভাবিত বিচক্ষণ মানুষ নিরাপত্তা ও শান্তিকে কলহের চেয়ে অধিক কাম্য মনে করতে শুরু করল।
হবস্ বলেছেন, “The mutual transferring of right is that which men call contract.” প্রতিটি ব্যক্তি নিজেকে শাসন করার অধিকার চুক্তির ফলে গঠিত সরকারের হাতে অর্পণ করল। এখানে শর্ত হল যে, অন্যান্য ব্যক্তিরা এভাবে তাদের অধিকার একই শাসন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবে। সমস্ত ইচ্ছা একটিমাত্র ইচ্ছায় এবং বিভিন্ন সত্তা একটিমাত্র সত্তায় পরিণত হবে। একেই কমনওয়েলথ বলা হয়। ল্যাটিন ভাষায় এর নাম ‘সিভিটাস’।
হবস্ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “লেভিয়েথান”-এ বলেছিলেন, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপায়ণ একমাত্র এ কমনওয়েলথের মাধ্যমে সম্ভব। এ কমনওয়েলথ বা সিভিটাস ও রাষ্ট্রীয় সংগঠনকে হসব্ মরণশীল ভগবান (Mortal God) বলেছেন এবং মরণশীল ভগবান অমর ভগবানের অধীনে অবস্থান করবে।
এটাই হবসের সামাজিক চুক্তি মতবাদ
আরও পড়ুন: টমাস হবসের সার্বভৌমত্ব তত্ত্ব আলোচনা কর
সামাজিক চুক্তির বৈশিষ্ট্য
অধ্যাপক ডানিং (Dunning) হবসের সামাজিক চুক্তির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। যথা-
১) চুক্তির স্বাক্ষরকারীরা স্বতন্ত্র ব্যক্তি। অর্থাৎ তারা গোষ্ঠীবদ্ধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে এগিয়ে আসে নি। অথবা, তারা কোন উর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষের পরামর্শে চুক্তি সম্পাদন করে নি। প্রকৃতির রাজ্যে তারা যে সমতা ভোগ করত সে সমতার ভিত্তিতে চুক্তি করেছে।
২) সার্বভৌম ক্ষমতা কার হাতে অর্পণ করা হবে এ ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মতামত প্রাধান্য পেয়েছিল এবং এটা চুক্তির একটি অংশ। সংখ্যালঘু অংশ সংখ্যাগুরুর মত মেনে নিয়েছিল।
৩) শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যই চুক্তি করা হয়েছিল এবং এটা চুক্তির একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
৪) জনগণ নিজেরাই নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছিল। এর মধ্যে সার্বভৌম শক্তির কোন অংশগ্রহণ ছিল না।