প্লেটোর শিক্ষা ব্যবস্থা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যার দ্বারা একটি সমাজের ইউনিটসমূহ সামাজিক চেতনা ও প্রেরণায় ভরপুর করে তোলে এবং সামাজিক চাহিদাগুলো পরিপূরর্ণ করে। এটি এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা ব্যক্তি অতি সহজেই সমাজে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে প্রেরণা লাভ করে।
প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থা
প্লেটোর কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রের মূলভিত্তিই ছিল তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থা। তিনি তাঁর বিখ্যাত “The Republic” গ্রন্থে এই শিক্ষাতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। প্লেটোর ন্যায়ধর্ম ব্যক্তিদেরকে সমাজে ঐক্যবদ্ধভাবে বাস করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। তবে এরূপ অবস্থা সৃষ্টির পিছনে ব্যক্তির উপযুক্ত শিক্ষার প্রয়োজন আছে। নিঃস্বার্থভাবে রাষ্ট্রের প্রতি সকলকে স্বীয় কর্ম করে যেতে প্লেটোর শিক্ষা ব্যবস্থা যথোপযুক্ত ট্রেনিং দান করে। এরূপ মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি দু’টি মতবাদ দিয়ে গেছেন। প্রথমটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা ও অন্যটি সাম্যবাদের উপর নির্ভরশীল একটি নতুন সামাজিক ব্যবস্থা।
প্লেটোর শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ-
ক) রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা
প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার আরেকটি দিক হল যে, তিনি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি জোর দিয়েছেন। ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা জনগণকে রাষ্ট্রের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে প্রেরণা জোগান। এটি রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য আবশ্যক।
খ) বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা ও নারী-পুরুষের মর্যাদা
প্লেটো বলেছেন, “আদর্শ রাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থা হবে বাধ্যতামূলক এবং তা সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত হবে।” তিনি বিশ্বাস করতেন, স্বাভাবিক যোগ্যতার দিক থেক নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ তারা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে অভিন্ন। কাজেই নারীরাও নিজেদেরেকে উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে অভিভাভকের মর্যাদায় উন্নীত করতে পারেন।
গ) শিক্ষাব্যবস্থা ও দার্শনিক রাজা
প্লেটো তাঁর শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে দার্শনিক রাজাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। মানবজীবনে মনকে উন্নততর দৃষ্টিভঙ্গিতে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাকেই তিনি একমাত্র মাধ্যম বলে মনে করেন। মানব আত্মার পূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্য এবং রাষ্ট্রের নৈতিক জীবনে নাগরিকদের পদার্পণের উদ্দেশ্যে প্লেটো শিক্ষাকেই একমাত্র উপায় বলে বর্ণান করেন। তাঁর শিক্ষাব্যবস্থা ব্যক্তিকে সমাজের সাথে খাপখাইয়ে চলতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি সঠিক সত্যকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর
প্লেটোর শিক্ষা ব্যবস্থার স্তর
প্লেটো শিক্ষাব্যবস্থাকে দু’টি প্রধান স্তরে বিভক্ত করেছেন। যেমন-
১) প্রাথমিক শিক্ষা ও
২) উচ্চতর শিক্ষা।
প্রাথমিক শিক্ষা
প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার লক্ষ্য হবে শিশুর অন্তরে মহৎ ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা। প্লেটোর মতে, প্রাথমিক শিক্ষার বয়ঃসীমা হবে শৈশব থেক ২০ বছর পর্যন্ত। প্রাথমিক শিক্ষা প্রধানত দু’টি পর্যায়ে বিভক্ত থাকবে। যথা-
ক) সঙ্গীতমূলক শিক্ষা
সঙ্গীতমূলক শিক্ষা যেমন- সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ অবদান কবিতা, গান, গঠনমূলক শিল্প ইত্যাদির চর্চার মধ্যদিয়ে শিশুরা প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ লাভ করবে।
খ) ব্যায়মমূলক শিক্ষা
ব্যায়মমূলক শিক্ষাব্যবস্থায় অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীগণ শারীরিক ব্যায়াম বা দেহচর্চার মধ্যদিয়ে নিয়মানুবর্তিতা ও আত্মসংযম আয়ত্ত করতে শিখবে এবং সেই সঙ্গে মানবোচিত গুণাবলির উৎকর্ষ সাধন করতে শিখবে।
উচ্চতর শিক্ষা
প্লেটোর শিক্ষা ব্যবস্থায় উচ্চতর শিক্ষা তিনটি স্তরে বিভক্ত। যথা-
ক) ২০ থেকে ৩০ বছর
এ সময় গভীরভাবে গণিত, জ্যামিতি, সঙ্গীত ও জ্যোতিশাস্ত্র শিক্ষা করতে হবে। শিক্ষা শেষে একটি বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচিত করা হবে।
খ) ৩০ থেকে ৩৫ বছর
এ পর্যায়ে উচ্চ দর্শনের জ্ঞান অর্জন অন্তর্ভূক্ত থাকবে। এর আগে উচ্চতর দর্শন শিক্ষা দেওয়া হবে না। কেননা, পরিণত বয়স ছাড়া উচ্চতর দর্শন গ্রহণ একটি জটিল হয়ে যায়।
গ) ৩৫ থেকে ৫০ বছর
এ পর্যায়ে বাস্তব কর্মসাধনার কৌশল শিক্ষা দেওয়া হবে। এ সময়ের শিক্ষার্থীগণ রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করবে। এ বয়সে শিক্ষার্থীদের উপর রাষ্ট্রের দায়িত্ব অর্পণ করা হলে সুশাসন পাওয়া সম্ভব হবে।
2 comments
খুব ভালো।। অনেক উপকৃত হলাম🌼
ধন্যবাদ
Comments are closed.