অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ সমীক্ষা সমাজ গবেষণার একটি সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি। যখন কোনো গবেষণায় দীর্ঘ সময় ধরে তথ্য সংগ্রহের কোন সুযোগ থাকে না তখন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। ১৯৮০ এর শেষে এবং ১৯৯০ এর শুরু থেকে এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মূলত এ পদ্ধতি হচ্ছে জনগণের কাছ থেকে কিছু জানার প্রক্রিয়া।
অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ সমীক্ষাতে কোনো বিষয়ে অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে এর পরিচালনাকারী দল জনগণ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। তেমনি যে সকল জনগণ তথ্য প্রদান করে থাকে তারাও অনেক কিছু জানার সুযোগ পায়। প্রধানত এ পদ্ধতিতে গ্রামীণ জনগণের সাথে সরকারি, বেসরকারি, এবং বিভিন্ন এনজিওদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ হয়ে থাকে।
গ্রামীণ মানুষের অবস্থা এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ জানার জন্য অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ সমীক্ষা একটি প্রয়োজনীয় গুণগত পদ্ধতি। ইদানিংকালে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা এ পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। বিভিন্ন এনজিও এবং কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির প্রয়োগ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ সমীক্ষা এখন শুধুমাত্র গ্রামীণ গবেষণার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় না। এটি শহর সমাজের গবেষণার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ফোকাস দল আলোচনা কি? ফোকাস দলের বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি?
রবার্ট চেম্বারস (Robert Chambers) এর মতে, “অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ মূল্যায়ন এমন একটি পন্থা ও পদ্ধতির সমষ্টি যার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে এমনভাবে সক্ষম করে তোলা হয় যাতে তারা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, বৃদ্ধি ও নিজেদের অবস্থা বিশ্লেষণ করে কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারে।”
তাহলে আমরা বলতে পারি, অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ সমীক্ষা একটি স্বল্প সময়ের মধ্যে গ্রামীণ জনগণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি। গ্রামীণ মানুষের কৃষি ও স্বাস্থ্যকে মোটামুটিভাবে এ পদ্ধতির আওতায় আনা হয়। এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে এর শনাক্তকরণ উন্নয়ন সাধন করা এবং স্থানীয় লোকজনকে কোনো পরিকল্পনার আওতায় একসাথে কাজ করতে সক্ষম করা।
অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ সমীক্ষার বৈশিষ্ট্য
ক) এ পদ্ধতির সময়কাল খুব সংক্ষিপ্ত। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তথ্য সংগ্রহের কাজ সমাপ্ত করা হয়ে থাকে।
খ) কোনো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি গ্রামীণ জনসাধারণ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা।
গ) দীর্ঘমেয়াদি কোনো পর্যবেক্ষণের সুযোগ এ পদ্ধতিতে নেই।
ঘ) এ পদ্ধতির কাজ প্রধানত কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহৃত হয়।
ঙ) অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ সমীক্ষাতে গ্রামে যাবার পূর্বেই প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর বাছাই করে নেয়া হয়। সংগৃহীত তথ্যসমূহের চেকলিস্ট তৈরি করা হয়।
চ) গ্রামের লোকের সাহায্যে গ্রামের মানচিত্র তৈরি রকা হয় যাতে থাকে গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ।
ছ) গ্রামে যা কিছু পর্যবেক্ষণ করা হয় প্রধান উত্তরদাতাদের কাছ থেকে তার ব্যাখ্যা চাওয়া।
জ) এ পদ্ধতিতে প্রধান গবেষক গ্রামবাসীদের দলীয় আলোচনার আয়োজন করেন এবং গ্রামের ইতিহাসের প্রধান প্রধান বিষয়ে আলোচনা করতে বলেন।
ঝ) গ্রামীণ মানুষের চাহিদার প্রতি নজর রেখেই তাদের সহযোগিতা সাপেক্ষে সকল কাজ সমাধা করা হয়ে থাকে।