গবেষণায় তত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তত্ত্ব হচ্ছে গবেষণার মূল চালিকাশক্তি। এটি গবেষণাকর্মের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তত্ত্বের গঠন সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনে গবেষণার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ কারণেই তত্ত্ব ও গবেষণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং পরস্পর নির্ভরশীল।
বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হল দুইটি। যথা- যুক্তি ও পর্যবেক্ষণ। এটা বলা হয়ে থাকে যে, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বিজ্ঞানের যৌক্তিক উপাদান নিয়ে এবং গবেষণা তথ্য পর্যবেক্ষণীয় উপাদান নিয়ে আলোচনা করে। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব কোনো বিষয়ের বিভিন্ন অংশের মধ্যে বিদ্যমান যৌক্তিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, ঐসব সম্পর্ক বাস্তবে বিদ্যমান কি-না গবেষণা তা পরীক্ষা করার কলাকৌশল প্রদান করে। আসল কথা হল, তত্ত্ব, তথ্য ও গবেষণা পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং পারস্পরিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে উভয়েই বিকশিত হয়। নিম্নে তত্ত্ব ও গবেষণার মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরা হলো-
১। তত্ত্ব গবেষণায় ধারণাগত কাঠামো প্রদান করে। এটি গবেষকের জন্য একটি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। কেননা গবেষণায় কি ধরনের পদ্ধতি ও তথ্য ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে বিন্যস্ত করা লাগবে তা বলে দিবে এই কাঠামো।
২। গবেষণা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কোনো বিষয়ে গবেষণার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করাও গবেষণার অন্যতম লক্ষ্য। আর তত্ত্ব কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন নতুন গবেষণা পরিচালনা করা যেতে পারে তা নির্দেশ করে।
আরও পড়ুন: সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
৩। তত্ত্ব প্রকল্প গঠনে সহায়তা করতে পারে। তবে প্রকল্প যাচাই করে তত্ত্বের পরীক্ষা করা হয়। তথ্যভিত্তিক প্রমান সাপেক্ষে প্রয়োজনে কোনো তত্ত্বকে সংশোধন করা বা বাদ দেয়া হয় এবং নতুন তত্ত্ব নির্মিত হয়। এভাবে গবেষণার ফলাফল নুতন তত্ত্ব গঠনের ভিত্তি হিসেব ব্যবহৃত হতে পারে।
৪। তত্ত্বের অন্যতম কাজ হচ্ছে ভবিষ্যদ্বাণী করা। এটি ঘটনাকে বর্ণনা করে, কার্যকারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করে ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। মূলত তত্ত্ব ব্যতীত বিজ্ঞান ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না।
৫। গবেষণার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে তত্ত্ব। তাই Bernard Phillips বলেন, তত্ত্ব গবেষণা ইতিহাসের সংকলন (Codification of the history of research)।
৬। তত্ত্ব তথ্যের উপর ভিত্তিশীল ও অভিজ্ঞতালবদ্ধ জ্ঞানের সাথে সংগতিপূর্ণ।
৭। তত্ত্ব সংশ্লিষ্ট ঘটনাসমূহের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক নির্দেশ করে, কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে এবং জ্ঞানকে অধিক সুষ্ঠু ও সম্পূর্ণরূপে বিশ্লেষণ করে।
৮। তত্ত্বের আসল কাজ বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ করা। এটি বিভিন্ন চলকগুলোর মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে সাধারণীকরণ করে এবং আইন প্রতিষ্ঠা করে।
৯। তত্ত্ব কেবল তথ্যের প্রকৃতিই নির্দেশ করে না বরং পর্যবেক্ষণীয় তথ্যের পরিধিও সীমিত করে দেয়। এরূপ সীমিত পরিধিতে একজন গবেষক সুষ্ঠু, সঠিক ও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেন এবং তার ব্যবস্থাপনাও বৃদ্ধি পায়।
১০। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান তত্ত্বই সরবরা করে থাকে।