শের শাহ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক ধ্রুবতারা। স্বীয় যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধার গুণে তিনি যে কীর্তি স্থাপন করে গেছেন ইতিহাসে তা অম্লান হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন আফগান শূর বংশের প্রতিষ্ঠাতা। ১৫৪০ সালের ১৭ মে কনৌজের যুদ্ধে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে পরাজিত করে কিছুদিনের জন্য মুঘল সিংহাসনও দখল করেছিলেন শেরশাহ।
শের শাহের পরিচয়
আফগান বংশোদ্ভূত শের শাহের পারিবারিক নাম ফরিদ শূর। তাঁর পিতামহের নাম ইব্রাহিম শূর এবং পিতার নাম হাসান শূর। হাসান শূর দিল্লির লোদী সুলতান বাহালুল লোদীর (১৪০৫-৮৯) শাসনামলে ভারতবর্ষে এসে বিহারের সাসারাম অঞ্চলে জায়গির লাভ করেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৪৭২ সালে মতান্তরে ১৪৮৬ সালে ফরিদের জন্ম হয়। বিমাতার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ১৪৯৪ সালে তিনি গৃহত্যাগ করে শিক্ষা-সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল জৌনপুরে চলে আসেন। অল্পদিনের মধ্যে তিনি আরবি ও ফারসি ভাষায় দক্ষতা লাভ করেন।
আরও পড়ুন: ইবনে বতুতা কে ছিলেন? তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
এদিকে তার পিতা নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফরিদকে সাসারামে ফিরিয়ে আনেন এবং তার উপর জায়গিরের দায়িত্বভার অর্পণ করেন। দক্ষতার সাথে জায়গির পরিচালনা করে প্রজাসাধারণের ভালোবসায় সিক্ত হয়েও বিমাতার চক্রান্তে আবারো তিনি সাসারাম ত্যাগে বাধ্য হন। পিতার মৃত্যুর পর সাসারামে ফিরে এলেও বৈমাত্রেয় ভাই সুলাইমানের ষড়যন্ত্রে জায়গির হারিয়ে ১৫২২ সালে বিহারের সুলতান বাহার খান লোহানীর অধীনে চাকরি নেন। সেখানে একাই একটি বাঘ হত্যা করে বাহার খান কর্তৃক ‘শের খাঁ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৫২৮ সালে শের শাহ মুঘল সম্রাট বাবরের সহায়তায় সাসারামের জায়গিরে ফিরে আসেন। এদিকে বাহার খানের মৃত্যু হলে শের খান শিশু রাজা জামাল খানের অভিভাবক নিযুক্ত হন। ১৫৩০ সালে চুনার দুর্গাধিপতি তাজ খানের বিধবা পত্নী মালিকাকে বিয়ে করে তিনি চুনার দুর্গ অধিকার করে নেন।
১৫৪৫ সালে চান্দেল রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় কালিগঞ্চর দুর্গে বারুদের বিস্ফোরণের ফলে শের শাহের মৃত্যু হয়।
শেরশাহের উল্লেখযোগ্য অবদান
শেরশাহের উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড অন্যতম। এর আরেক নাম সড়ক-ই-আজম। বাংলার সোনারগাঁও থেকে সিন্ধু অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২৪০০ কিলোমিটারের এ রাস্তা সেসময় যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতির সূচনা করেছিল। আজও পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা এই গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড।