ভার্সাই সন্ধি একটি শান্তি চুক্তি যা ১৯১৯ সালের ২৮ জুন ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তি ও জার্মানির মধ্যে সম্পাদিত হয়। এ সন্ধিতে জার্মানিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং জার্মানিকে বিভিন্নভাবে কোণঠাসা করতে অপমানজনক একতরফা শর্ত প্রদান করা হয়। নিম্নে ভার্সাই সন্ধির শর্তসমূহ আলোচনা করা হলো-
১। ফ্রান্সকে আলসেস ও লোরেন ফিরিয়ে দিতে হবে।
২। বেলজিয়ামকে মরেসনেট, ইউপেন ও মেলমেডি দিতে বাধ্য হবে।
৩। পোল্যান্ডকে পোজেন এর অধিকাংশ এবং পশ্চিম প্রুশিয়া ছেড়ে দিতে হবে।
৪। লিথুয়ানিয়াকে মেমেল বন্দরটি ছেড়ে দিতে হবে।
৫। জার্মান অধ্যুষিত ডানজিগের শাসনভার জাতিপুঞ্জের হাতে অর্পণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ক্রিমিয়ার যুদ্ধ : তুরস্ক বনাম রাশিয়া। কি ছিল কারণ?
৬। জার্মান সৈন্য সংখ্যা একলক্ষে নামিয়ে আনতে হবে এবং বাধ্যতামূলক সৈন্য সংগ্রহ বন্ধের নির্দেশ জারি করতে হবে।
৭। রাইন নদীর তীরে ত্রিশ মাইলের মধ্যে যে সকল দুর্গ বা সামরিক ঘাঁটি ছিল সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তা পনেরো বছর মিত্রশক্তির অধীনে থাকবে।
৮। জার্মানি কোনো বিমান বহর রাখতে পারবে না এবং গোলাবারুদ উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস করতে হবে।
৯। সকল শর্ত পালন করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য জার্মানির খরচেই মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।
১০। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানিকে ৫০০ কোটি ডলার সমমূল্যের স্বর্ণ বা অন্য মূল্যবান জিনিস ১৯২১ সালের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
১১। বিদেশে জার্মান নাগরিকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা মিত্রশক্তির থাকবে।
১২। জার্মানি বেলজিয়াম ও ইতালিতে কয়লা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে। তাছাড়া ক্ষতিপূর্ণ হিসেবে বিভিন্ন দেশকে লৌহ ও রাবার সরবরাহ করতে হবে।
১৩। লীব অব নেশনের শর্তাদিও চুক্তির অন্তর্ভূক্ত হবে।
১৪। আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার নীতির দ্বারা অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্য হতে চেকোশ্লাভিকিয়া ও যুগোশ্লভিয়া নামে দু’টি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রের সৃষ্টি হবে। সেই সাথে পোল্যান্ড ও বেলজিয়ামের স্বাধীনতা স্বীকৃত হবে।
ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির উপর যে জবরদস্তিমূলক ও অপমানজনক শর্ত আরোপ করা হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে তা আরেকটি বিশ্ব যুদ্ধেরই বীজ বপন করেছিল। এর ফলে ১৯৩৯ সালে বিশ্ব আরেকটি ভয়াবহ বিশ্ব যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করে, যা ছিল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ থেকে আরো ধ্বংসাত্মক ও ভয়াবহ।