Continental System বা মহাদেশীয় ব্যবস্থা ব্রিটেনের বিরুদ্ধে সম্রাট নেপোলিয়ন কর্তৃক গৃহীত এক রণকৌশল। ব্রিটেনের বিরুদ্ধে সার্বিক অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টি করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা
ইতালি, অস্ট্রিয়া, প্রুশিয়া প্রভৃতি দেশকে পরাজিত করে ইউরোপে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেন নেপোলিয়ন। তিনি রাশিয়াকে ‘টিলজিট’ চুক্তির মাধ্যমে অনুগত মিত্রে পরিণত করেন। কিন্তু তখনও নেপোলিয়নের সর্বাপেক্ষা অনমনীয় শত্রু গ্রেট ব্রিটেন অপরাজিত রয়ে গেছে। আর ইংল্যান্ডের অপ্রতিরোধ্য নৌশক্তির কারণে ইংল্যান্ডকে সম্মুখ সমরে পরাজিত করা নেপোলিয়নের সামর্থ্য ছিল না। এমতাবস্থায় ইউরোপের বুকে ফ্রান্সকে একক পরাক্রমশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে অন্যভাবে আক্রমণ করার পথ খুঁজতে থাকেন। তাই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টির মাধ্যমে ইংল্যান্ডকে ভাতে মারার ব্যবস্থা করেন। তিনি বার্লিন ডিক্রি নামক এক ঘোষণার দ্বারা ইউরোপের কোনো বন্দরে ইংল্যান্ডে প্রস্তুতকৃত দ্রব্যাদির প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেন। নেপোলিয়নের এই অর্থনৈতিক অবরোধ নীতি ‘কন্টিনেন্টাল সিস্টেম’ বা ‘মহাদেশীয় ব্যবস্থা’ নামে পরিচিত।
নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ
নেপোলিয়নের কন্টিনেন্টাল সিস্টেম গ্রহণের প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন কারণগুলো নিম্নরূপ-
১। ইংল্যান্ডকে বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করা
তখন ব্রিটিশ নৌশক্তি ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং ইংল্যান্ডের উন্নত শিল্প এবং পৃথিবী জুড়ে ঔপনিবেশিক বাজার নেপোলিয়নের ঈর্ষার কারণ ছিল। তাছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশ নেপোলিয়নের বশ্যতা স্বীকার করলেও ইংল্যান্ড তা করে নি। সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টির দ্বারা ইংল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করতে পারলে ইংল্যান্ড অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে এবং ফ্রান্সের বশ্যতা স্বীকার করবে- এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেই নেপোলিয়ন মহাদেশীয় ব্যবস্থা আরোপ করেন।
আরও পড়ুন: ফ্রান্সে সন্ত্রাসের রাজত্ব বর্ণনা কর
২। বাণিজ্য ক্ষেত্রে ফরাসি প্রভাব প্রসার
নেপোলিয়নের কন্টিনেন্টাল সিস্টেমের পশ্চাতে কেবলমাত্র যুদ্ধ জয়লাভের উদ্দেশ্য ছিল এমন বলা যায় না। এর পশ্চাতে শিল্পক্ষেত্রে ফরাসি প্রাধান্য বৃদ্ধির ইচ্ছাও কাজ করেছিল। নেপোলিয়ন মনে করতেন যে, মহাদেশীয় ব্যবস্থা চালু হলে ইংল্যান্ডের পণ্য আমদানি বন্ধ হবে এবং ইউরোপের বাজারে ফরাসি জিনিসের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে ফ্রান্স একচেটিয়াভাবে নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য দ্বারা ইউরোপের বাজার দখল করতে পারবে।
৩। পরাজয়ের প্রতিশোধ
১৮০৩ সাল থেকে ১৮০৪ সাল পর্যন্ত নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের সাথে ট্রাফালগার যুদ্ধে পরাজিত হন। এতে ফরাসি নৌশক্তি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এ পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়াও মহাদেশীয় ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
Revisiting Napoleon’s Continental System
৪। একক আধিপত্য বিস্তার
ইউরোপের বুকে ফ্রান্সের একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য নেপোলিয়ন মহাদেশীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। কারণ তখন পর্যন্ত ইউরোপের অন্যান্য শক্তি নেপোলিয়নের পদানত হলেও ইংল্যান্ড অপ্রতিরোধ্যভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল।
৫। অর্থনৈতিক কারণ
শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কারণে ইংল্যান্ড ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নত ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। তাই ফ্রান্সকে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেতে হলে ইংল্যান্ডের শিল্প ও বাণিজ্যকে ধ্বংস করা একান্ত অপরিহার্য ছিল।