রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা সীমানা ব্যাপক এবং প্রতিনিয়তই ব্যাপকতর হচ্ছে। রাষ্ট্রের সকল কর্মকান্ড এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বলা যায়, মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কার্যকলাপই হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি ও বিষয়বস্তু সমূহ আলোচনা করা হল-
১। রাজনৈতিক দল
রাজনৈতিক দল হল এমন এক জনসমষ্টি যারা নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে বৈধ উপায়ে শাসন ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এ সূত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি, দলব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ, বিরোধী দলের ভূমিকা, রাজনৈতিক দলব্যবস্থা, উন্নয়নশীল দেশে এবং উন্নত দেশে কিভাবে ভূমিকা পালন করছে তা নিয়ে আলোচনা করে।
২। রাষ্ট্র
রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিজ্ঞান। সে সূত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও কার্যাবলি, রাষ্ট্রে ব্যক্তির ভূমিকা, রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার ইত্যাদি আলোচনা করে।
৩। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী
স্বার্থগোষ্ঠী হল এমন এক জনসমষ্টি, যা তার সদস্যদের সরকারি পদে বসানোর চেষ্টা না করে সরকারি সিদ্ধান্ত সমূহকে প্রভাবিত করে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ রাষ্ট্রীয় ক্রিয়াকলাপ তথা সমাজকে প্রভাবিত করে, তাই চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাষ্ট্রের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।
৪। আইন
সার্বভৌমের নির্দেশকেই আইন বলে। রাষ্ট্র ও সরকার ছাড়াও সরকার প্রণীত আইনও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার অন্তর্ভূক্ত। রাষ্ট্রের পক্ষেই সরকার আইন প্রণয়ন করে শাসনকার্য পরিচালনা এবং শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করে। তাই আইনের আলোচনা করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মুখ্য বিষয়।
৫। জনমত
জনমত আধুনিক শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। জনমতের গুরুত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের বাহন ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল কাজ। সুতরাং, জনমত হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল আলোচ্যবিষয়।
৬। শাসনতন্ত্র বা সংবিধান
শাসনতন্ত্র হল সরকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতি। শাসনতন্ত্র অনুযায়ী রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালিত হয়। শাসনতন্ত্রের প্রকৃতি অনুযায়ী সরকারের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। শাসনতন্ত্র ব্যক্তি, রাষ্ট্র, সরকারকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। তাই এটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
৭। সার্বভৌমিকতা
সার্বভৌমিকতা হল রাষ্ট্রের চরম, চূড়ান্ত এবং অবাধ ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। সার্বভৌম ক্ষমতা হিসেবে সার্বভৌমের কার্যাবলি, সার্বভৌমিকতার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে মতবাদ ইত্যাদি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি বা স্বরূপ আলোচনা কর।
৮। সরকার
সাধারণভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নিয়োজিত কর্মচারীগণকে সরকার বলে। বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ করা হয়; যেমন- একনায়কতন্ত্র, গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয়, এককেন্দ্রিক, রাষ্ট্রপতি শাসিত ও মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা ইত্যাদি। সরকারের ধরন, প্রকৃতি ও কার্যাবলি আলোচনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।
৯। সমাজ
রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের একটি অংশ। সুতরাং, সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞান, সমাজের উৎপত্তি, সমাজে ব্যক্তির ভূমিকা, সমাজের ভূমিকা, সামাজিক জীব হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তির ভূমিকা ইত্যাদি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
১০। অধিকার
অধিকার ভোগের মাধ্যমে একজন নাগরিক রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। আবার অধিকারের সাথে কর্তব্যের সম্পর্ক আছে। সুতরাং, কর্তব্য পালনের অর্থ হল রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে জানা, যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
১১। সাম্য ও স্বাধীনতা
স্বাধীনতা বলতে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করাকে বুঝায়, যাতে অন্যের অনুরূপ কাজে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। সাম্য হল সমাজে বা রাষ্ট্রে সকলের সমান সুযোগ সুবিধা ভোগের ক্ষমতা। স্বাধীনতাবিহীন সমাজ জীবন অচল। স্বাধীনতার জন্য বিভিন্ন আইন তৈরি হয়েছে। তাই স্বাধীনতার সাথে আইন ও সাম্যের সম্পর্ক আছে, যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আলোচিত হয়।
১২। কূটনীতি ও পররাষ্ট্র নীতি
রাষ্ট্রবিজ্ঞান আন্তর্জাতিক রাজনীতি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনীতির উৎপত্তি, কার্যাবলি, শ্রেণীবিন্যাস ইত্যাদি আলোচনা করে। কেননা কূটনীতি রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, নিজ রাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষা করার জন্য একটি রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের যে সম্পর্ক তা হল পররাষ্ট্র নীতি। পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলি রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে।
১৩। আন্তর্জাতিক আইন
যেসব নিয়মকানুন রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করে, সাধারণভাবে সেগুলোই আন্তর্জাতিক আইন। আন্তর্জাতিক আইন মান্য করা প্রতিটি রাষ্ট্রের কর্তব্য। আন্তর্জাতিক আইন মান্য না করলে রাষ্ট্রসমূহকে শাস্তি পেতে হয়। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করে।
১৪। জোট নিরপেক্ষতা ও যৌথ নিরাপত্তা
রাষ্ট্রবিজ্ঞান উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করে। এটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সহায়ক। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান জোট নিরপেক্ষতা ও যৌথ নিরাপত্তা সংস্থা জাতিসংঘের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করে।
১৫। সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ
কোন রাষ্ট্রের অন্য কোন দুর্বল রাষ্ট্রের উপর আধিপত্য বিস্তার করাকে সাম্রাজ্যবাদ বলে। সাম্রাজ্যবাদের নতুন রূপ হল উপনিবেশবাদ। সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃতি, গঠন এবং নতুন সাম্রাজ্যবাদের আলোচনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
১৬। আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ
রাষ্ট্রবিজ্ঞান আন্তর্জাতিক সংগঠন নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- ন্যাটো, আসিয়ান, সাপটা, সার্ক, ইইউ ইত্যাদি।
১৭। আন্তর্জাতিক রাজনীতি
রাষ্ট্রবিজ্ঞান আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে। কেননা জাতীয় রাজনীতির সাথে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্রের ভূমকা, সরকারের তুলনা, অন্যান্য রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র এবং নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য স্থান পায়, যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত হয়েছে।
১৮। রাজনৈতিক তত্ত্ব ও দর্শন
রাষ্ট্রবিজ্ঞান ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক তত্ত্ব ও দর্শন আলোচনা করে থাকে। বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের প্রদত্ত রাজনৈতিক তত্ত্ব ও দর্শন রাষ্ট্রবিজ্ঞান গুরুত্বসহকারে অধ্যযন করে। যেমন- ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, গণতন্ত্র, সামাজিক চুক্তি মতবাদ, বলপ্রয়োগ মতবাদ ইত্যাদি।
১৯। নাগরিকে রাজনৈতিক জীবন
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হল নাগরিকের রাজনৈতিক জীবন। মূলত রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই মানুষের রাজনৈতিক জীভন আবর্তিত হয়।
২০। বিচার ব্যবস্থা
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিচার বিভাগ, বিচার বিভাগের গঠন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা, কার্যাবলি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে থাকে।
২১। রাজনৈতিক ইতিহাস
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় হল রাজনৈতিক ইতিহাস। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনৈতিক ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে অতীতের রাষ্ট্র, রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাষ্ট্রের গঠন, প্রকৃতি, রাষ্ট্র সম্পর্কে প্রদত্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতবাদ আলোচনা করে থাকে। যেমন- মধ্যযুগে ইউরোপীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা।
1 comment
এনেধৰণৰ আন কিবা তথ্য আছেনে?
my website
Comments are closed.