ফরাসি জাতি তথা পৃথিবীর ইতিহাসে টেনিস কোর্ট শপথের গুরুত্ব অপরিসীম। ফরাসি বিপ্লবের বীজ এই শপথের মধ্যে নিহিত ছিল। তৎকালীন ফ্রান্সের বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণী যারা তৃতীয় শ্রেণী নামেও পরিচিত তারাই এই শপথ গ্রহণ করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নাগরিক, বিচার বিভাগীয় ও রাজস্ব সংক্রান্ত সমতা, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রসম্মত সরকার।
টেনিস কোর্ট শপথ গ্রহণের প্রেক্ষাপট
ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের চরম অর্থনৈতিক সংকট মোচনের জন্য ১৭৮৯ সালের ৫ মে ১৭৫ বছর পর ষোড়শ লুই স্টেটস জেনারেল নামক জাতীয় সভার অধিবেশন আহ্বান করেন। অধিবেশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণী অপর দুই সম্প্রদায় যাজক ও অভিজাতদের সমান সুযোগ-সুবিধার দাবিসহ স্টেটস জেনারেলে ভোটদানের পদ্ধতির প্রশ্নে তুমুল বিতর্কের সূচনা করে। বুর্জোয়া তথা তৃতীয় শ্রেণী দাবি করে যে, ভোট গণনা শ্রেণী হিসেবে না করে সংখ্যা হিসেবে করতে হবে।
আরও পড়ুন: রুশোর সার্বভৌমত্ত্ব তত্ত্ব ব্যাখ্যা কর
প্রথম দুই শ্রেণীর আধিপত্য ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় তারা স্টেটস জেনারেলের পূর্বতন প্রথা অনুযায়ী পৃথকভাবে তিন শ্রেণীর ভোটদানের দাবি করেন। কিন্তু অভিজাতদের মধ্যে উদারপন্থি যেমন- লাফায়েত প্রমুখ ও নিম্ন যাজকগণ তৃতীয় শ্রেণীর প্রস্তাব সমর্থন করে। এই সাংবিধানিক সংকট সমাধানে ষোড়শ লুই ব্যর্থ হলে তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত প্রতিনিধিগণ এবং প্যারিসীয় যাজক নিজেদের ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদ বলে ঘোষণা করে এবং কর ধার্য করার অধিকার নিজেদের হাতে তুলে নেয়। বেইলি জাতীয় পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু ষোড়শ লুই তৃতীয় শ্রেণী কর্তৃক জাতীয় পরিষদের ঘোষণা বেআইনি বলে উল্লেখ করেন এবং তিনটি শ্রেণীর একত্রে আলোচনা করার প্রস্তাব নাকচ করলে বুর্জোয়া বা তৃতীয় শ্রেণী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
টেনিস কোর্ট শপথ গ্রহণ
ষোড়শ লুই জাতীয় পরিষদ ঘোষণা করলে এবং তিনটি শ্রেণীর একত্রে আলোচনা করার প্রস্তাব নাকচ করলে এর প্রতিবাদে তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধিগণ মিরাব্যুর নেতৃত্বে নিকটবর্তী টেনিস কোর্টে সমবেত হন এবং ১৭৮৯ সালের ২০ জুন শপথ গ্রহণ করেন যে, যতদিন পর্যন্ত তারা ফরাসি জাতির জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে না পারবেন ততদিন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে অধিবশনের কাজ চালিয়ে যাবেন। এভাবে ফরাসি জনগণ প্রথম দুই শ্রেণীর অর্থাৎ যাজক ও অভিজাতদের অস্তিত্ব অস্বীকার করে জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, টেনিস কোর্ট শপথ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বুর্জোয়া শ্রেণী নিজেদের গুরুত্বের স্বীকৃতি প্রতিপন্ন করে এবং সেই সঙ্গে বিদ্রোহ সূচিত হয়। জাতীয় পরিষদ সর্বাত্মক রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। যার পরিণতি ফরাসি বিপ্লব ও রাজতন্ত্রের অবসান।