আইনের বৈশিষ্ট্য
আইনের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নরূপ-
১। সুস্পষ্টতা
সুস্পষ্টতা আইনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। দ্ব্যর্থবোধ আইন সমাজে জটিলতা সৃষ্টি করে। আইন তাই সুস্পষ্ট, সুনিশ্চিত ও ঘোষণা মূলক হতে হয়।
২। সর্বজনীনতা
আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সর্বজনীনতা। সমাজের সকল ব্যক্তিই আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সমভাবে বিবেচিত। জাতি-ধর্ম, বর্ণ-গোত্র, নারী-পুরুষ, ধনী-নির্ধন, রাজা-প্রজা সকলেই আইনের আওতাধীন।
৩। সমর্থনযোগ্য
আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সমাজের বেশিরভাগ লোক কর্তৃক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তাদের সমর্থন থাকা। সমাজের বেশিরভাগ লোক কর্তৃক আইন সমর্থিত না হলে সমাজে তা আইন হিসেবে টিকে থাকে না। তাই আইনের প্রতি সমাজের বেশিরভাগ লোকের নৈতিক সমর্থন অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: আইন কী? আইনের উৎস সমূহ কি কি?
৪। বিধিবদ্ধ নিয়মাবলি
আইন হতে গেলে অবশ্যই প্রথা, রীতিনীতি বা নিয়ম-কানুনের সমষ্টি হতে হবে। অর্থাৎ আইন হচ্ছে কতগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলীর সমন্বয়।
৫। অনুমোদন ও স্বীকৃত
আইন হতে গেলে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রচিত, অনুমোদিত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হতে হবে। রাষ্ট্রীয় অনুমোদন ও স্বীকৃতি ব্যতিরেকে কোন বিধিবিধানই আইনে রূপ নেয় না। আর তাই প্রচলিত নিয়ম-কানুন বা প্রথাসমূহ সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত এবং অনুমোদিত হলেই তা আইন বলে গণ্য হয়।
৬। বাহ্যিক আচার-আচরণের সাথে যুক্ত
আইন প্রধানত মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ ও ক্রিয়াকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা ও অনুভূতির সাথে আইন এর প্রত্যক্ষ কোন সম্পর্ক নেই।
৭। সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ
আইন এর পেছনে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের অস্তিত্ব অপরিহার্য। সার্বভৌম কর্তৃপক্ষই প্রকৃতপক্ষে আইন অমান্য কারীকে শাস্তি দিতে পারে। এবং শক্তি প্রয়োগরে মাধ্যমে আইন মান্য করার ক্ষেত্রে বাধ্য করতে পারে।
আইনের প্রকারভেদ
অধ্যাপক হল্যান্ড ও ম্যাকাইভার এর মতে আইন প্রধানত দুই প্রকার। যথা- ক) জাতীয় আইন ও খ) আন্তর্জাতিক আইন
উভয় আইন আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। নিম্নে চিত্রের সাহায্যে তা উপস্থাপন করা হলো-
ক) জাতীয় আইন
রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমারেখার অভ্যন্তরে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রচিত বা অনুমোদিত আইনকে জাতীয় আইন বলে। জাতীয় আইন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সর্বত্র বিরাজমান এবং সকলকে সমান ভাবে স্পর্শ করে। এই আইন এর অধীনে রয়েছে বেসরকারি আইন ও সরকারি আইন। সরকারি আইন আবার সাংবিধানিক, প্রশাসনিক ও ফৌজদারী তিন ভাগে বিভক্ত যাদের মধ্যে আবার সাংবিধানিক আইন লিখিত ও অলিখিত হতে পারে।
খ) আন্তর্জাতিক আইন
যে আইন দ্বারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং একটি রাষ্ট্রের সাথে অপর একটি রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে। এই আইন এর অধীনে রয়েছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক আইন ও সরকারি আন্তর্জাতিক আইন।
কোন বিশেষ ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে যে আন্তর্জাতিক আইন প্রণীত হয় তাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক আইন বলে।
আবার বিভিন্ন রাষ্ট্র সম্মিলিত ভাবে কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে যে আইন প্রণয়ণ করে তাকে সরকারি আন্তর্জাতিক আইন বলে। এ ধরনের আইন এর মধ্যে রয়েছে-
১। শাস্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন
২। যুদ্ধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন
৩। নিরপেক্ষতা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন