Home » ১৯৬৬ সালের ছয় দফা কর্মসূচি আলোচনা কর

১৯৬৬ সালের ছয় দফা কর্মসূচি আলোচনা কর

by TRI

১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল ঐতিহাসিক দাবি। এ ছয় দফা কর্মসূচি ছিল বাঙালিদের অধিকারের সনদ, যার মধ্যে বাঙালিদের জীবনের দাবি নিহিত ছিল। 

নিচে ছয় দফা কর্মসূচি গুলো উল্লেখ করা হলো-

প্রথম দফা: শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করে পাকিস্তানকে সত্যিকার যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। এ যুক্তরাষ্ট্রের সরকার হবে পার্লামেন্ট পদ্ধতির। প্রদেশগুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। পাকিস্তানের আইন পরিষদ হবে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী এবং কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদগুলো গঠিত হবে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে।

দ্বিতীয় দফা: কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

কেন্দ্রীয় বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে কেবলমাত্র দেশরক্ষা এবং পররাষ্ট্র এ দু’টি বিষয়ে ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকবে। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।

আরও পড়ুন:  ছয় দফা ও একুশ দফা দাবির মধ্যে তুলনা

তৃতীয় দফা: মুদ্রা ও অর্থ বিষয়ক ক্ষমতা

মুদ্রা ও অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতার ক্ষেত্রে দু’টি বিকল্প প্রস্তাব করা হয়। এ দু’টি প্রস্তাবের মধ্যে থেকে যে কোন একটিকে গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রস্তাব দু’টি নিম্নরূপ-

ক) পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দু’টি পৃথক, অথচ সহজ বা অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। এ ক্ষেত্রে দু’অঞ্চলের জন্য স্বতন্ত্র বা পৃথক পৃথক স্টেট ব্যাংক থাকবে এবং মুদ্রার পরিচালনা ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। অথবা,

খ) একই মুদ্রা ব্যবস্থা

দেশের দু’অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রার ব্যবস্থা থাকবে। তবে সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যে, যাতে করে এক অঞ্চলের মুদ্রা অন্য অঞ্চলে পাচার হতে না পারে। বিশেষ করে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার বন্ধ করার জন্য সংবিধানে কার্যকর ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভের ব্যবস্থাসহ পৃথক অর্থ বিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।

চতুর্থ দফা: রাজস্ব কর ও শুল্ক বিষয়ক ক্ষমতা

সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। কেন্দ্রীয় সরকারের এ ব্যাপারে কোন ক্ষমতা থাকবে না। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত রাজস্বের একটি অংশ ফেডারেল তহবিলে জমা হবে।

আরও পড়ুন:  কেন ছয় দফাকে মুক্তির সনদ বলা হয়? ম্যাগনা কার্টা ও ছয় দফার তুলনা

পঞ্চম দফা: বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

পঞ্চম দফায় বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে নিম্নরূপ সাংবিধানিক বিধানের সুপারিশ করা হয়-

ক) ফেডারেশনভূক্ত প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।

খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারে থাকবে এবং অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রয়োজনে অঙ্গরাজ্যগুলো কর্তৃক ব্যবহৃত হবে।

গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত নির্দিষ্ট হারে অঙ্গরাজ্যগুলো মিটাবে।

ঘ) অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা কর জাতীয় কোনরূপ বাধানিষেধ থাকবে না।

ঙ) সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণের এবং স্ব স্ব স্বার্থে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

ষষ্ঠ দফা: আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

এ দফায় নিম্নলিখিত দাবিসমূহ পেশ করা হয়-

ক) আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা-সামরিক বাহিনী বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে।

খ) কেন্দ্রীয় সরকারের সকল শাখায় বা চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিটি ইউনিট থেকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করতে হবে।

গ) নৌবাহিনীর সদর দপ্তর করাচি থেকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করতে হবে।

সুতরাং দেখা যায় যে, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা কর্মসূচি ছিল মূলত পূর্ব পাকিস্তানবাদী বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবি। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে বাঁচার দাবি।

Related Posts