ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনা ও সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা, পরিকল্পনার প্রধান দু’টি শ্রেণীবিভাগ হলেও এদের মধ্যে কতিপয় পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে উভয় পরিকল্পনার মধ্যে পরিলক্ষিত পার্থক্যসমূহ তুলে ধরা হলো-
১) সংজ্ঞা
রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মাধ্যমে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ পরিচালনার জন্য সরকার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাকে ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনা বলে। পক্ষান্তরে অর্থনৈতিক ক্ষমতা একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর ন্যাস্ত থাকলে তাকে সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা বলে।
২) বৈশিষ্ট্য
ব্যক্তির ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে পূর্ণ স্বাধীনতা, ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনায় ভূমি ও পুঁজি নির্ভর উৎপাদনে ব্যক্তিগত মালিকানাকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রকারভেদ আলোচনা কর
৩) নিয়ন্ত্রণ
ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনায় সকল শিল্পকে কেন্দ্রীয়করণ করা হয় না। প্রধান প্রধান শিল্পসমূহকে কেবল কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা হয়। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক ক্ষমতা একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর ন্যাস্ত থাকে।
৪) উদ্দেশ্য
মুনাফার্জনের মাধ্যমে কোন বিশেষ সেক্টর বা জনগণের কল্যাণ সাধন করা ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য। কিন্তু মুনাফার্জন নয় বরয় সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন করাই সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য।
৫) শর্ত
বাজারে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনার অস্তিত্বের প্রধান শর্ত। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনায় ভোক্তার দ্রব্য নির্বাচন, ক্রয় কিংবা ভোগ বিভিন্ন প্রকার বিধি-নিষেধ দ্বারা সীমাবদ্ধ।
৬) গণতান্ত্রিকতা
ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সরকার সাধারণতঃ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয় বলে জনমতকে তারা উপেক্ষা করতে পারে না। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক ক্ষমতা একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর ন্যাস্ত থাকে বলে এ ক্ষেত্রে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে পারে কিংবা প্রতিফলন নাও থাকতে পারে।
অতএব বলা যায়, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বিপরীত।