অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রকারভেদ
বর্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সকল দেশের পরিকল্পনার রূপ ও আকৃতি এক নয়। তাই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকার পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায়। সাধারণতঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চার ধরনের প্রধান প্রধান পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। নিম্নে সেগুলো বর্ণনা করা হলো-
১) ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনা (Capitalistic Planning)
অর্থনীতির সার্বিক কল্যাণে রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মাধ্যমে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা করার জন্য সরকার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাকে ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনা বলে। এরূপ পরিকল্পনার সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয়করণ করা হয় না, বরং প্রধান প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে এনে রাষ্ট্র কর্তৃক পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা রকা হয়। তবে বাজারে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান শর্ত বলে বেসরকারি সেক্টরগুলো সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন সরকারি ও বেসরকারি খাতকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সমস্যা সমূহ
২) সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা (Socialistic Planning)
উৎপাদন, বণ্টন এবং বিনিময় ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের আওতাভূক্ত রেখে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাকে সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা বলে। এরূপ পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক ক্ষমতা অর্থাৎ উৎপাদনের উপকরণের যোগান ও মালিকানা সম্পূর্ণরূপে কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর ন্যাস্ত থাকে। তাই প্রাপ্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও বণ্টনের জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থা একক ভাবে দায়ী থাকে। মুনাফার্জন নয় বরং সামাজিক কল্যাণ সাধন করাই সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য।
৩) কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা (Central Planning)
একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা কর্তৃক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং যাবতীয় কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করা হলে তাকে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বলে। এরূপ পরিকল্পনায় সকল সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা হতে চাপিয়ে দেওয়া হয় বলে সেখানে জনগণের অংশীদারীদের কোন সুযোগ থাকে না। তাই মনগড়া ভাবে মুষ্টিমেয় ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গের স্বার্থে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
৪) স্থানীয় পরিকল্পনা (Local Planning)
কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার ঠিক বিপরীত পরিকল্পনা হলো স্থানীয় পরিকল্পনা। এরূপ পরিকল্পনা কেন্দ্র হতে চাপিয়ে দেওয়া হয় না বরং উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করে স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সুতরাং কোন দেশের বিশেষ স্থানের উন্নয়নের জন্য পৃথক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে তাকে স্থানীয় পরিকল্পনা বলে।
এছাড়া উদ্দেশ্য ও রূপায়নের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে আরও কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- সাধারণ পরিকল্পনা, আংশিক পরিকল্পনা, কাঠামোগত পরিকল্পান, বিকেন্দ্রীয় পরিকল্পনা, উন্নয়ন পরিকল্পনা, আর্থিক পরিকল্পনা, নির্দেশনাত্মক পরিকল্পনা, জাতীয় পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা ইত্যাদি।