Home » খিলাফত আন্দোলন কি? খিলাফত আন্দোলনের কারণসমূহ কি ছিল?
খিলাফত আন্দোলনের গুরুত্ব

খিলাফত আন্দোলন কি? খিলাফত আন্দোলনের কারণসমূহ কি ছিল?

by TRI

খিলাফত আন্দোলন

ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানরা ইসলামী খিলাফত পুনরুদ্ধারের জন্য ১৯১৯-২৪ পর্যন্ত যে আন্দোলন পরিচালনা করে তা খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত।

ভারতীয় মুসলমানরা তুরস্কের সুলতানকে মুসলিম সাম্রাজ্যের খলিফা ও তুরস্ককে খিলাফত হিসেবে মনে করত। এবং তুরস্কের খেলাফতের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের পরম শ্রদ্ধা ও গভীর আনুগত্য ছিল। কিন্তু ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক ব্রিটেনের পরম শত্রু জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করে। এতে ভারতীয় মুসলমানগণ এক অস্বস্তিকর অবস্থার সম্মুখীন হয়।

ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় মুসলমানদের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, ভারতীয় মুসলমানগণ ব্রিটিশ সরকারকে যুদ্ধে সাহায্য ও সহযোগিতা করলে খিলাফতের মর্যাদাকে সমুন্নত ও তুরস্ককে অখণ্ড রাখা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানগণ ব্রিটিশ সরকারকে যুদ্ধে সর্বাত্মক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করেন।

কিন্তু যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশ সরকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তুর্কি সাম্রাজ্যের খণ্ড-বিখণ্ড করার মানসে ১৯২০ সালে পৃথকীকরণ চুক্তির মাধ্যমে অটোম্যান সাম্রাজ্য হতে তুরস্ককে পৃথক করে দেয়।

কথা বলতে শিখুন - ওয়াহিদ তুষার | Kotha Bolte Shikhun

TK. 400 TK. 320 You Save TK. 80 (20%)

এ ঘটনায় ভারতীয় মুসলমানগণ অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। এটাই খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত।

এ আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, মওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

আরও পড়ুন:  বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল কি ছিল?

খিলাফত আন্দোলনের কারণসমূহ

ভারতীয় উপমহাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক ঘটনা সম্ভারকে বিশ্লেষণ করলে খিলাফত আন্দোলনের কারণসমূহকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

ক) প্রত্যক্ষ কারণ এবং

খ) পরোক্ষ বা প্রচ্ছন্ন কারণ

ক) প্রত্যক্ষ কারণসমূহ (Direct Causes)

খিলাফত আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১) তুরস্ক ও খিলাফতের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের শ্রদ্ধা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রের বেশিরভাগ মুসলমানগণ তুরস্কের সুলতানকে “ইসলামের রক্ষক ও বিশ্ববাসীদের প্রভু” হিসেবে স্বীকৃতি জানায়। ভারতের মুসলমানগণও তুরস্কের খিলাফত ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করে। এসময় ভারতবর্ষ ব্রিটিশরাজ কর্তৃক শাসিত হত।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক ব্রিটেনের শত্রু জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করে। যুদ্ধে ব্রিটিশরাজ ভারতবর্ষের জনগণের সাহায্য কামনা করে এবং সক্রিয়ভাবে ব্রিটেনের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়। এতে ভারতবর্ষের মুসলমানগণ যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ব্রিটিশ সরকারের উপর নিম্নোক্ত শর্ত জুড়ে দেয়। শর্তগুলো নিম্নরূপ-

ক) যুদ্ধশেষে তুরস্ক পরাজিত হলে তুরস্ক সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা বজায় রাখতে হবে।

খ) তুরস্কের খিলাফতের ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।

গ) তুরস্কের খলিফার প্রতি কোনরূপ অমর্যাদাকর ব্যবহার করা যাবে না।

খিলাফত আন্দোলন

 

২) ব্রিটিশ সরকারের ভুয়া প্রতিশ্রুতি

ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় মুসলমানদের মানসিক অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে ও তাদের দাবির শর্তগুলো মেনে নেয় এবং শর্ত পালনে পূর্ণ আশ্বাস প্রদান করে ও তদানীন্তন কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ পার্লামেন্টে এক বিবৃতি প্রদান করে বলেন যে, তুরস্কের খিলাফত উচ্ছেদ কিংবা তুরস্ক সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা ধ্বংস করার কোন ইচ্ছা ব্রিটিশ সরকারের নেই।” তাঁর মতে, “ব্রিটেন তুরস্কের অখণ্ডতা বিনষ্ট করার জন্য বা খিলাফত ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যুদ্ধ করছে না।”

ভারতীয় মুসলমানগণ উক্ত আশ্বাস বাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এটা ছিল কাজ উদ্ধার করার ভুয়া প্রতিশ্রুতি।

৩) ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ

১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান হলে এবং জার্মানিসহ তুরস্ক পরাজিত হলে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় মুসলমানদের দেয়া পূর্ব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সক্ষম হন নি। যুদ্ধ শেষে জার্মানি তুরস্ক অক্ষশক্তির পরাজয় ঘটলে মিত্রশক্তিবর্গ স্যাভর্সে এক চুক্তি সম্পাদন করে। এ চুক্তি তুরস্ক তথা সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অপমানজনক। এর ফলে তুরস্কের মর্যাদা হানি হয়।

ব্রিটেনসহ মিত্রশক্তিদের দ্বারা রচিত ‘স্যাভার্স চুক্তি’র শর্তানুসারে-

ক) তুরস্ক তার অধিকৃত এলাকা হারায়।

খ) তুরস্কের মূল ভূখণ্ড ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়। স্মার্ণা, থ্রেস ও আনাতোলিয়া তুরস্কের হাতছাড়া হয় এবং সেখানে মিত্রশক্তির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।

গ) খিলাফত ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয় এবং ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি আঘাত হানে।

ফলে ভারতবর্ষের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের কারণে তুরস্কের অখণ্ডতা বজায় রেখে খিলাফত ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার মানসে স্যাভার্স চুক্তির শর্তাবলির প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনপূর্বক প্রতিশ্রতি ভঙ্গের অভিযোগে ব্রিটিশ সরকারকে অভিযুক্ত করে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯২০ সালে এক দুর্বার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটিই খিলাফত আন্দোলন।

খ) পরোক্ষ বা প্রচ্ছন্ন কারণ (Indirect or Invisible Causes)

খিলাফত আন্দোলনের আরও কিছু পরোক্ষ বা প্রচ্ছন্ন কারণ বিদ্যমান। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো-

১) বঙ্গভঙ্গ রদ

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ভারতীয় মুসলমানরা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা অর্জন করেছিল। ব্রিটিশ সরকারও তদানীন্তন বঙ্গভঙ্গ ব্যবস্থাকে একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত করার ফলে মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে, যা পরবর্তীতে মুসলমানগণকে পরোক্ষভাবে খিলাফত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার ইন্ধন যুগিয়েছিল।

২) ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন

১৯১৬ সালে লক্ষ্ণৌ চুক্তির ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায় যৌথভাবে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলে। ব্রিটিশ সরকার এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় জনগণকে পর্যায়ক্রমে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করবে বলে ঘোষণা করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে ভারত শাসন আইনে ভারতীয় জনগণকে স্বায়থ্তশাসন প্রদান করা হয় নি। এক্ষেত্রেও ভারতীয় মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয় এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী হিসেবে ব্রিটিশ সরকারকে চিহ্নিত করে।

Related Posts